• মঙ্গলবার, ৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪২৯
ইউপি সদস্যের বাড়ীতে মাদক সেবনের আসর, ভিডিও ভাইরাল

প্রতিনিধির পাঠানো ছবি

সারা দেশ

ইউপি সদস্যের বাড়ীতে মাদক সেবনের আসর, ভিডিও ভাইরাল

  • এসকে সাহেদ, লালমনিরহাট
  • প্রকাশিত ১৩ জুন ২০২২

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার গোড়ল ইউনিয়ন পরিষদের ৪নং ওয়ার্ডের বর্তমান সদস্য বাদশা মিয়ার বাড়িতে বসে ফেনসিডিলের আসর। আর সেই আসরে ‘স্ত্রী ফেনসিডিল গ্লাসে ঢেলে দিচ্ছেন আর স্বামী ইউপি সদস্য বাদশা মিয়া টাকা নিচ্ছেন’।

এমন একটি ভিডিও এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক’এ ভাইরাল হয়েছে। এনিয়ে জেলা জুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

বাদশা মিয়া ওই ওয়ার্ডের মালগাড়া গ্রামের বাসিন্দা।

ফেসবুক’এ ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, ‘ইউপি সদস্যের স্ত্রী স্বপ্না বেগম একজন ফেনসিডিলের দাম ২০ টাকা কম দেয়ায় খারাপ আচরণ করছেন। ওই ব্যক্তি বলছেন, এখানে প্রশাসন আসে না? তখন স্বপ্না বেগম বলেন, এটা মেম্বারের বাড়ি। এখানে প্রশাসন ক্ষমতা রাখে না’। এ সময় ফেনসিডিলের দাম ব্যাপারে স্বপ্না বেগম বলেন, ‘আজ দাম বাড়ানোর জন্য ৫০০ মাল ফেরত দিয়েছি। যেখানে কম পাবেন, সেখানে গিয়ে খান। এখানে আসছেন কেন? ইনট্যাক খান, খোলা খাবেন কেন? তখন ওই ব্যক্তি বলেন, ‘সব সময় ইউপি সদস্যের (মেম্বারের) বাড়ি এখানে নিরাপত্তা বেশি। সে জন্য আসি’।

ওই ভিডিওতে আরো দেখা যায়, ‘ফেনসিডিলের টাকা সরাসরি ইউপি সদস্য বাদশা মিয়ার হাতে দেওয়ার সময় তার স্ত্রীর খারাপ আচরণের বর্ণনা দেয় এক ক্রেতা। যা শুনে বাদশা তার স্ত্রীকে বিষয়টি নিয়ে শাসন করেন’। বলেন, ‘২০ টাকার জন্য তোকে কথা বলতে হবে কেন’?

স্থানীয় ব্যক্তিরা অভিযোগ, রংপুরসহ বিভিন্ন স্থানের লোকজন ফেনসিডিল খেতে আসে বাদশার বাড়িতে। সীমান্তের কাছে হওয়ায় ভারতীয় ব্যবসায়ীরা বড় চালান পাচার করে বাদশার বাড়িতে পাঠায়। তার বাড়ি থেকে ফেনসিডিল চলে যায় দেশের বিভিন্ন স্থানে। বাদশার বাড়ি কালীগঞ্জ উপজেলার গোড়ল ইউনিয়ন সীমান্তের নিকটবর্তী হওয়ায় সে দীর্ঘদিন ধরে এ ব্যবসায় জড়িত। ব্যবসা ঠিক রাখতে এবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে লাখ লাখ টাকা খরচ করে গোড়ল ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচিত হওয়ার পর পুরোদমে শুরু করে মাদক বিক্রি ও পাচার।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাদশার প্রতিবেশীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে ইউপি সদস্য বাদশা মাদক ব্যবসা করে আসছেন। তিনি প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে কেউ কিছু বলে না। বললে মামলা-হামলার ভয় দেখান। বড় বড় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তার সখ্যতা রয়েছে। প্রতিদিন বিকেল হলেই দামি গাড়িতে করে অনেকেই তার বাড়িতে আসেন মাদক পান করতে। এ ব্যাপারে ৯৯৯ কল দিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি বলেও তারা জানান।

তারা আরও জানান, দীর্ঘদিন এ ব্যবসারসঙ্গে জড়িত থাকায় স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গেও বাদশার ভালো সখ্যতা গড়ে ওঠেছে। তাই মাদক বিক্রেতা ও বহনকারীরা প্রশাসনের হাতে আটক হলেও বাদশা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে।

ভাইরাল হওয়া ভিডিওর ব্যাপারে ইউপি সদস্য বাদশা মিয়া মুঠোফোনে জানান, ‘আমাকে ফাঁসানোর জন্য ভিডিও করা হয়েছে’।

আমার স্ত্রী ফেনসিডিল নয়, বাড়িতে আগত মেহমানকে গ্লাসে কোকা কোলা ঢেলে দিচ্ছেন’। তবে কথা বলার এক পর্যায়ে এ প্রতিবেদককে ওই ইউপি সদস্য রিপোর্ট না করে দেখা করার কথা বলেন।

গোড়ল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আমিন জানান, ইউপি সদস্য বাদশাহ বিগত সময় মাদক ব্যবসা করেছিল। এখন করে কি না, এ বিষয়ে আমার জানা নেই। বাদশা যদি মাদক ব্যবসা করে, তবে অবশ্যই তদন্তপূর্বক তাকে আইনের আওতায় আনা হোক বলেও তিনি জানান।

কালীগঞ্জ থানার ওসি এ টি এম গোলাম রসুল জানান, আমি নতুন এসেছি। এখনো অনেক কিছু আমার জানা নেই। ইউপি সদস্য যত বড় মাপের নেতা হোক, তাকে ধরা হবে। তিনি মাদক নির্মূলে সবার সহযোগিতা কামনা করেন।

লালমনিরহাট অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম বলেন, ইউপি সদস্যের বাড়িতে ফেনসিডিল ব্যবসা হয়, আমাদের কাছে এমন কোনো তথ্য নেই। এখন জানলাম। অবশ্যই আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads