• বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪২৯
প্রাণ ফিরে পাচ্ছে কিশোরগঞ্জ ডায়াবেটিক হাসপাতাল

সংগৃহীত ছবি

সারা দেশ

প্রাণ ফিরে পাচ্ছে কিশোরগঞ্জ ডায়াবেটিক হাসপাতাল

  • কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২৩ আগস্ট ২০২২

‘মানুষ মানুষের জন্যে, জীবন জীবনের জন্যে। একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না? ভূপন হাজারিকার জনপ্রিয় এ গানের সহানুভূতিতে উদ্বুদ্ধ হয়ে কিশোরগঞ্জের মানুষ সহানুভূতির হাত প্রসারিত করে। বিভিন্ন জন বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে গড়ে তুলে কিশোরগঞ্জ ডায়াবেটিক হাসপাতাল। ডায়াবেটিকস, গর্ভবতী রোগীসহ সাধারণ রোগীদের সেবা দেয়ার ব্রুতে আলট্রাসনোগ্রাম, এক্সরে মেশিন, ইসিজি, চক্ষু ইউনিট, দাঁতের ইউনিট, নিজস্ব ল্যাব নিয়ে নামমাত্র মূল্যে সেবা দিতে চালু হয়েছিল এ হাসপাতালটি। ভাল চলছিল এ হাসপাতালটিও। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে হঠাৎ এটির পথচলা বন্ধ হয়। শুধু ভবন হয়ে পড়ে থাকে এ সহানুভূতির হাসপাতালটি। সেটি নতুন ভাবে ফের পথচলা শুরু করবে আগামী শুক্রবার ২৬ আগষ্ট। নামমাত্র মূল্যে এ উপজেলার সাধারণ মানুষরা সেবা পাবে এ হাসপাতালে সেটাই মূল লক্ষ্য বলে জানান উপজেলা প্রশাসন।

২০১২ সালে কিছু উদ্যোগী মানুষ কিশোরগঞ্জ ডায়াবেটিক সমিতির কার্যক্রম শুরু করলে এর সাথে যুক্ত হয় উপজেলা প্রশাসন। উপজেলা প্রশাসনের তরফ থেকে ওই বছরের ৪ এপ্রিল ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে সাধারণ মানুষের মতামত নিয়ে গঠন করা হয় কিশোরগঞ্জ ডায়াবেটিক সমিতি। তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ গোলাম আজমের নেতৃত্বে প্রতিদিন সন্ধ্যায় ইফতার শেষে অডিটোরিয়ামে বসতো ডায়াবেটিক সমিতি ও হাসপাতাল নির্মাণের যাত্রীদের মিলন মেলা। প্রতিদিনের ওই মিলন মেলা থেকে শুরু হয় হিতৈষী সদস্যদের টাকা আদায়। স্বেচ্ছায় সামর্থ্য অনুযায়ী ১ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা অনুদান প্রদান করতে শুরু করেন। খোলা হয় কিশোরগঞ্জ ডায়াবেটিক সমিতির একটি নিজস্ব একাউন্ট। জমতে থাকে টাকা। এ টাকা দিয়ে কিছুই হবে না। শুরু হয় অর্থ সংগ্রহ অভিযান। ওই সময় ঈদের দিন নামাজ শেষে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ জাকির হোসেন বাবুল, তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ গোলাম , ইউপি চেয়ারম্যানগণসহ ডায়াবেটিক হাসপাতাল নির্মাণ স্বপ্নের যাত্রীরা দু’টি গাড়ী যোগে ছুটতে থাকে গ্রামীন মেঠো পথে। যাদের বাড়িতে গাড়ী থামছে তারাই অবাক হয় ঈদের দিনে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের গাড়ী তাদের বাড়িতে। ওই সব ব্যক্তিদের বাসায় গিয়ে যখন উপজেলা নির্বাহী অফিসার কিশোরগঞ্জ উপজেলার সাধারণ মানুষদের চিকিৎসা সেবার জন্য হাসপাতাল তৈরীর পরিকল্পনাটি বলেন তখন স্বতর্স্ফূতভাবে টাকা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেন অনেকে আবার অনেকে নগদ অর্থ প্রদান করেন। এভাবে সাধারণ মানুষদের সহানুভূতির অর্থ দিয়ে নামমাত্র মূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদানে ৪ হাজার বর্গ ফুট জায়গার উপর শুরু হয় কিশোরগঞ্জ ডায়াবেটিক হাসপাতালের নির্মাণ কাজ। তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিজস্ব ডিজাইনে ডায়াবেটিক চিকিৎসাসহ চক্ষু, দন্ত, প্রসূতি, হার্ড, কিডনি রোগের চিকিৎসা সেবার লক্ষে একটি সুদৃশ্য ভবন নির্মিত হয়। এভাবেই পথচলা শুরু কিশোরগঞ্জ ডায়াবেটিক হাসপাতালের। হাসপাতাল নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ায় তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনগনের প্রিয় ব্যক্তি হয়ে যান। তার নেতৃত্বে নির্ভৃত এক পল্লী উপজেলায় আধুনিক একটি হাসপাতাল নির্মাণ হয়।

এর মধ্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের হঠাৎ বদলী হলে সব স্বপ্ন ভেঙ্গে যেতে থাকে। স্তম্ভ হয়ে পড়ে গোটা কিশোরগঞ্জ। সবার মুখে প্রশ্ন উঠে হাসপাতালটি কি আদৌও চালু হবে। বদলীর খবর শুনে মানুষ ছুটতে থাকে তার সাথে দেখা করার জন্য এবং সবাই দাবী করেন স্যার হাসপাতালটি চালু করে দিয়ে যান। তখন তিনি বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য ছিল সৎ। আপনারা ভবিষ্যতে সৎ ভাবে কাজ করবেন ইনশাআল্লাহ হাসপাতাল চালু হবে। এর মধ্যে নবাগত উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সিদ্দিুকুর রহমান কিশোরগঞ্জ উপজেলায় যোগদান করলে তিনি ঠাকুরগাঁও থেকে ছুটে এসে হাসপাতালটি চালুর অনুরোধ করেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিদ্দিকুর রহমান ২০১৪ সালের মার্চ মাসে কিশোরগঞ্জে যোগদান করে অত্র এলাকার সাধারণ মানুষদের আকাংখা ও স্বপ্নের ডায়াবেটিক হাসপাতালটি চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করেন। অর্থ সংগ্রহ পূর্বক যন্ত্রপাতি ক্রয় শুরু করেন। সহানূতির অর্থে গড়া হাসপাতালটি হাসতে শুরু করে। শত প্রতিকুলতা-বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে ২০১৪ সালের ২৬ এপ্রিল এটির উদ্বোধন করা হয়। সেই থেকে পথচলা হাসপাতালটির। সাধারণ মানুষদের নামমাত্র মুল্যে সেবায় জনপ্রিয় হয়ে উঠে এ হাসপাতালটি। চলছিল ভালো কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে ধীরে ধীরে এ হাসপাতালটির পথচলা থেমে যায়। পড়ে থাকে দীর্ঘদিন।

সম্প্রতি বর্তমান উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-ই-আলম সিদ্দিকী যোগদান করার পর সাধারণ মানুষদের নামমাত্র মূল্যের সেবা দেয়া এ হাসপাতালটি ফের চালুর উদ্দ্যোগ নেন। সভা করে নতুন কমিটি করেন। পড়ে থাকায় যন্ত্রপাতিগুলোতে কিছু সমস্যা দেখা দেয়। ইঞ্জিনিয়ার এনে সেগুলো সচল করেন। এ হাসপাতালের জন্য ডাক্তারসহ প্রয়োজনীয় জনবলও নেয়া হয়। কিশোরগঞ্জের মানুষের সহানুভূতির অর্থে গড়া হাসপাতালটি আগামী শুক্রবার ২৬ আগষ্ট ফের প্রাণ ফিরে পাবে শুনে সাধারণ মানুষ খুশি। নামমাত্র মূল্যে সেবা পাওয়ার লাইনও হবে দীর্ঘ, সেবা প্রত্যাশী রোগীরা মানসম্মত সেবা পাবে সে প্রত্যাশাও সকলের। কিন্তু কাকতালিও ব্যাপার, সহানুভূতির অর্থে গড়া এ হাসপাতালটি শুভ উদ্বোধন হয়েছিল ২৬ তারিখে, অন্যদিকে নবরুপে পথচলাও শুরু হচ্ছে ওই ২৬ তারিখেই। এ জনবান্ধব হাসপাতালটি চালুর উদ্যোগে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-ই-আলম সিদ্দিকীসহ পিছনের কারিগড়দের স্থানীয় প্রেসক্লাব অভিনন্দন জানিয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads