• মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪২৯
খেপ খেলেই কাটছে তাদের জীবন

সালমান খান

সংগৃহীত ছবি

ক্রিকেট

খেপ খেলেই কাটছে তাদের জীবন

  • কবিরুল ইসলাম
  • প্রকাশিত ০৬ অক্টোবর ২০১৮

সালমান খান। জাতীয় দলের শীর্ষ শাটলার। সর্বশেষ ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে এককের চ্যাম্পিয়ন। এলাকায় তার ব্যাপক পরিচিতি। আশপাশের সবাই বেশ সমীহ করে তাকে। জাতীয় দলের খেলোয়াড় হিসেবে আলাদা একটা সম্মান আছে পুরো সিলেটজুড়ে। কিন্তু এ সম্মান দিয়ে তো আর জীবন চলে না। জাতীয় দলে খেললেও সম্মানী নেই বললেই চলে। নেই কোনো ব্যক্তিগত স্পন্সরও। তাই খেপ খেলেই জীবন পার করতে হচ্ছে জাতীয় দলের এ শাটলারকে।

শুধু সালমানকেই নয়, সব শাটলারকেই নির্ভর করতে হয় খেপের ওপর। শীত মৌসুমের দিকে তীর্থের কাকের মতো তাকিয়ে থাকতে হয় তাদের। শীত এলে কদর বেড়ে যায় তাদের। বিভিন্ন এলাকা থেকে ডাক আসে টুর্নামেন্টে খেপ খেলার। এই তিনটি মাসে বিভিন্ন এলাকায় খেপ খেলে একেক জন শাটলার যা আয় করে থাকেন, তা দিয়ে চলতে হয় পুরো বছর।

পুণ্য ভূমি সিলেটকে বলা হয়ে থাকে ফুটবলার তৈরির হ্যাচারি। নব্বই দশক থেকে শুরু করে এখনো জাতীয় দলে দাপটের সঙ্গে খেলে আসছেন এখানকার ফুটবলাররা। ফুটবলের শহরে বর্তমান সময়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছে ব্যাডমিন্টন খেলাটিও। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে স্থানীয়রা ঝুঁকছেন ব্যাডমিন্টনের প্রতি। সিলেটে রয়েছে বেশ কয়েকটি ব্যাটমিন্টন একাডেমি। বেসরকারি এ একাডেমিগুলো থেকেই উঠে আসছে জাতীয় পর্যায়ের শাটলার। সালমান ছাড়াও বর্তমানে র্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বরে থাকা গৌরব সিংয়ের বসতও সিলেট শহরে। জাতীয় পর্যায়ে সিলেটের আরো এক ডজন শাটলার আছেন। যারা সিনিয়র ও জুনিয়র বিভাগে খেলছেন। এরা সবাই নিজেদের পকেটের টাকা খরচ করেই খেলছেন ব্যাডমিন্টন। জাতীয় দলে নাম লেখালেও পাচ্ছেন না কোনো সম্মানী। কোনো স্পন্সর প্রতিষ্ঠানও এগিয়ে আসে না শাটলারদের উন্নয়নে। এ নিয়ে দুঃখের কোনো শেষ নেই তাদের।

জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে এককের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন সালমান খান জানান, ‘অন্য রকম এক ভালো লাগা থেকেই ব্যাডমিন্টনে এসেছিলাম। ২০১৭ সালে ক্লিক ইন্টার ইউনিভার্সিটি চ্যাম্পিয়নশিপে সিংগেলস ও ডাবলসে চ্যাম্পিয়ন হই। একই বছর সামার র‍্যাঙ্কিং টুর্নামেন্টে এককে চ্যাম্পিয়ন হই। জাতীয় পর্যায়ে সফলতার পরও আমাদের আর্থিক সঙ্কট কাটে না। সরকারি সহায়তা নেই। নিজ খরচে অনুশীলন করতে হয় শাটলারদের। জাতীয় পর্যায়ে কোনো আসর খেলতে গেলে ফেডারেশন থেকে যে পরিমাণ ফি দেওয়া হয় সেটা একেবারেই নগণ্য। মাত্র পাঁচ কিংবা ছয় ডলার দেওয়া হয় প্রতিদিন। এ টাকা দিয়ে তিন বেলা খাওয়াটাই কষ্টের।’

ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপ না থাকায় বর্তমানে সিলেটে অবসর সময় কাটছে সালমানের মতো অন্য শাটলারদেরও। নিজেদের খরচেই এখন প্রতিদিন অনুশীলন করছেন তারা। তবে শীত মৌসুম এলে আর বসে অলস সময় কাটাতে হবে না তাদের। তখন বিভিন্ন এলাকা থেকে ডাক পড়বে খেপ খেলার। এ মৌসুমটা বেশ ব্যস্ততার মধ্যে কাটাতে হয় শাটলারদের। কদর বেড়ে যায় বেশ। সালমান বলেন, ‘শীত মৌসুমের আয়ের ওপরই নির্ভর করে আমাদের মতো শাটলারদের জীবন। আসলে এভাবে কতদিন?’ শুধু সিলেটের নয়, এ প্রশ্নটা দেশের সব শাটলারেরই।

শাটলারদের অর্থনৈতিক দৈন্যদশার কথা অকপটেই স্বীকার করে নিলেন ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আমির হোসেন বাহার, ‘শাটলার ম্যাচ ফি বাবদ যে টাকা দেই সেটা সামান্যই। এ টাকা দিয়ে কিছুই হয় না জানি। কিন্তু কিছুই করার নেই আমাদের। সরকার থেকে যে টাকা আমাদের এক বছরের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় সেটা দিয়ে অফিস খরচই হয় না, খেলা চলবে কী করে? স্পন্সরের ওপর নির্ভর করতে হয় আমাদের। তাই চাইলেও অনেক কিছুই করতে পারি না।’

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads