• বুধবার, ৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪২৯
স্পিনঘূর্ণিতে বাংলাদেশের  রোমাঞ্চের জয়

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জয়ের পর মাঠ ছাড়ছেন টাইগাররা

ছবি : সংগৃহীত

ক্রিকেট

স্পিনঘূর্ণিতে বাংলাদেশের রোমাঞ্চের জয়

  • স্পোর্টস রিপোর্টার
  • প্রকাশিত ২৫ নভেম্বর ২০১৮

দ্বিতীয় দিন শেষেই সাগরিকার আকাশে ছিল শঙ্কার মেঘ। চোখ রাঙাচ্ছিল ভয়াবহ কিছুর। দ্বিতীয় ইনিংসে ৫৫ রানে পাঁচ উইকেট হারানো বাংলাদেশ কতইবা লিড দিতে পারবে? যেখানে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে গোটা দুটি দিন, হাতে দশ উইকেট। তারপরও শঙ্কার কালো মেঘ কিছুটা সরিয়ে টার্গেট যখন ২০৪ রানের, স্বাগতিক শিবিরে চাপা রোমাঞ্চ। স্পিনঘূর্ণিতে সেই রোমাঞ্চ এতটা উৎসবমুখর করবে গোটা দলকে, তা অননুমেয়ই। বাংলাদেশের স্পিনারদের মায়াজালে বন্দি ক্যারিবীয় শিবির। মাত্র আড়াই দিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম টেস্ট জিতেছে বাংলাদেশ ৬৪ রানের ব্যবধানে।  

২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে প্রথম টেস্ট জিতেছিল বাংলাদেশ। শুধু তাই নয়, দুই ম্যাচের সিরিজে স্বাগতিকদের হোয়াইটওয়াশের লজ্জা দিয়েছিল সাকিব শিবির। এরপর সাদা পোশাকে ক্যারিবীয়দের বিরুদ্ধে জয় যেন মরীচিকা। দীর্ঘ ৯ বছর পর সেই সাকিবের নেতৃত্বেই তৃতীয়বারের মতো হারানো গেল উইন্ডিজদের। দেশের মাটিতে প্রথম। তাও আবার দ্রুততম জয়ের রেকর্ড গড়ে। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বাংলাদেশ দুই ইনিংসে মাত্র ৯৯ ওভার ২ বল করেই দুবার অলআউট করেছে। খরচ করতে হয়েছে ৫৯৬ বল। এটিই টেস্টে বাংলাদেশের দ্রুততম জয়। আগেরটি ছিল জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে ৬৭০ বলে, ২০১৪ সালে ঢাকায়।

দ্বিতীয় দিন শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের চেয়ে ১৩৩ রানে এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ। গতকাল ম্যাচের তৃতীয় দিনে শেষ ৫ উইকেটে বাংলাদেশ তুলতে পেরেছে ৭০ রান। গ্যাব্রিয়েলের অসাধারণ এক ইনসুইং বলে বোল্ড মুশফিকুর। বাকি দায়িত্বটা কোনোমতে সেরেছেন মিরাজ ও মাহমুদউল্লাহ। ভীষণ প্রতিকূল পরিবেশে মাহমুদউল্লাহ করেন ৩১ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে সর্বোচ্চ স্কোরার তিনিই। মিরাজের ১৮ রানও ছিল বেশ গুরুত্বপূর্ণ। লেজের দিকে নাঈম (৫), তাইজুল (১), মোস্তাফিজুরের (২*) ব্যাটেও যা এসেছে তাও ছিল এক একটা হীরা দানার মতো। ১২৫ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে স্বাগতিকদের সংগ্রহ ছিল ৩২৪। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ২৪৬। দ্বিতীয় ইনিংসে জয়ের জন্য ক্যারিবীয়দের টার্গেট দাঁড়ায় ২০৪ রানে।

সাদা চোখে লক্ষ্যটা সামান্যই। কারণ সময়ের তাড়া নেই। ধীরে-সুস্থে গেলেই হলো। কিন্তু বাংলাদেশের স্পিন এতটা ভয়ঙ্কর রূপে আবির্ভূত হবে, তা হয়তো ভাবেনি কেউ। দলীয় ১১ রানের মধ্যেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের নেই চার উইকেট। সাঁড়াশি আক্রমণের নেতৃত্বে সাকিব ও তাইজুল। এখানেই যেন ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় সফরকারীরা। অন্যদিকে উত্তুঙ্গ আত্মবিশ্বাসে টগবগ টাইগার শিবির।

এরপর সময় যত গেছে বেড়েছে স্পিনারদের দাপট। মায়াবী ঘূর্ণির দারুণ শো। পরের অংশে তাইজুল যেন আরো বিধ্বংসী। তার সঙ্গে ছিলেন আরেক স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ। এই দুজনেই শেষ করে দেন উইন্ডিজদের বাকি সব আশা-ভরসা। অ্যামব্রিসকে উইকেটের পেছনে মুশফিকের হাতে ক্যাচ বানিয়ে ক্যারিবীয় শিবিরে শেষ পেরেক ঠোকেন তাইজুলই। মাঝে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে একটু মাথাচাড়া দিয়েছিলেন তিন ব্যাটসম্যান। এর মধ্যে দলীয় ৪৪ রানের মাথায় ওয়ানডে স্টাইলে খেলা হেটমায়ারকে (২৭) ফিরিয়ে স্বস্তি আনেন মিরাজ। নবম উইকেটে ভয় ধরিয়ে দিয়েছিলেন অ্যামব্রিস ও ওয়ারিক্যান। শেষ পর্যন্ত এই জুটি বিচ্ছিন্ন করেন সেই মিরাজই। এই জুটি থেকে আসে ৬৩ রান। ৪১ রানে ফেরেন ওয়ারিক্যান। সর্বোচ্চ ৪৩ রান আসে অ্যামব্রিসের ব্যাট থেকে। তাকে ফিরিয়ে রোমাঞ্চের জয়ের উৎসবে দলকে মাতান মিরাজ। ১৩৯ রানে অল আউট ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৬ উইকেট শিকারি তাইজুল হতেই পারতেন ম্যাচসেরা। তবে রানের দিকটা বিবেচনা করে ম্যাচসেরার পুরস্কার পান প্রথম ইনিংসে ১২০ রান করা মুমিনুল হক।

চট্টগ্রাম টেস্ট নানা দিক থেকেই সোনায় মোড়ানো। অভিষেকে সাদা পোশাকে কম বয়সে ৫ উইকেট নিয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন নাঈম হাসান। এক বর্ষপঞ্জিকায় বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি তাইজুল। তবে সাকিবের অর্জনটাই সবচেয়ে আলো ঝলমলে। ৩০০০ রান ও ২০০ উইকেট- মাত্র ৫৪ টেস্টে স্পর্শ করেছেন এমন মাইলফলক, যা টেস্ট ইতিহাসে দ্রুততম। ছাড়িয়ে গেছেন সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডারখ্যাত গ্যারি সোবার্সকে। কিন্তু এমন অর্জন তাড়িত করে না সাকিবকে, তার চোখে জয়টাই আসল। ম্যাচ শেষে সাকিবের কণ্ঠে তাই এমন উচ্চারণ- ‘জয় না পেলে অনুভূতি ভালো হতো না, জয় যেহেতু পেয়েছি, অনুভূতিও ভালো।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads