• বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জৈষ্ঠ ১৪২৯
ব্যাটে-বলে ছন্দময় দিন টাইগারদের

সেঞ্চুরির পর মাহমুদউল্লাহর অন্য রকম উদ্যাপন

ছবি : ক্রিকইনফো

ক্রিকেট

ব্যাটে-বলে ছন্দময় দিন টাইগারদের

  • মাহমুদুন্নবী চঞ্চল
  • প্রকাশিত ০২ ডিসেম্বর ২০১৮

গত জুলাইয়েই ক্যারিবীয় সফরে ধবলধোলাইয়ের শিকার হয়েছিল বাংলাদেশ। শুধু তাই নয়, উপহার পেয়েছিল টেস্টে ৪৩ রানের লজ্জাও। গতকাল মিরপুর টেস্টের শেষ বিকালে স্পিন মায়াজালে নাভিশ্বাস যখন ক্যারিবীয়দের অবস্থা, ফিরে আসছিল সেই বিদঘুটে স্মৃতি। ২৯ রানে নেই পাঁচ উইকেট। অ্যান্টিগার সেই লজ্জার জবাবটা দেওয়ারই যেন মোক্ষম সময়। কিন্তু তা আর হয়নি। কিন্তু ক্যারিবীয়দের এমন হাঁসফাঁস অবস্থা কিছুটা হলেও পুরনো ক্ষতে প্রলেপ দিয়েছে টাইগারদের।

দ্রুত সাজঘরে ফেরার মিছিলে যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের টপ অর্ডারের সব কাণ্ডারি? কেমন লাগছিল তখন সাকিব-মুশফিকদের? সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়েছে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে। জবাবে যা বলেছেন, তাতে চলমান সিরিজ যুদ্ধের চেয়েও যেন কম নয়। রিয়াদ বলেন, ‘টেস্ট সিরিজের আগে সাকিব বলেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে কীভাবে আমরা হেরেছিলাম। তা সবার মনে আছে। সেই দুঃসহ স্মৃতি মনে রেখেই খেলতে হবে ঘরের মাঠে। সাকিবের এমন কথায় সবাই অনুপ্রাণিত হয়েছিল। যার প্রমাণ এখন মাঠে দেখতে পাচ্ছেন।’

আসলেই তো তাই। চট্টগ্রাম টেস্টে বাংলাদেশ জিতেছে ৬৪ রানের ব্যবধানে। খুব বেশি অঘটন না ঘটলে মিরপুর টেস্টও জিতবে বাংলাদেশ, তা তিন দিন আগেই অনুমান করা যাচ্ছে। নান্দনিক ব্যাটিংয়ে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ করেছে ৫০৮ রান। জবাবে শেষ বিকালে ব্যাট করতে নেমে গলদঘর্ম ক্যারিবীয়রা। দিন শেষ করেছে তারা ৫ উইকেটে ৭৫ রান। তার মানে এখনো ওয়েস্ট ইন্ডিজের চেয়ে ৪৩৩ রানে এগিয়ে বাংলাদেশ। ফলোঅন এড়াতেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে করতে হবে ৩০৯ রান। কিন্তু স্পিনঘূর্ণি যেভাবে চমকে দিচ্ছে, তাতে সফরকারীদের দম কতটুকু স্থায়ী হবে, তা অনুমেয়ই।

শেষ বিকালে ক্যারিবীয় ব্যাটিং লাইনআপে সাকিব-মিরাজের স্পিনবিষ এতটা কার্যকরী হবে, তা ভাবেননি কেউ। ২৯ রানের মধ্যে টপ অর্ডারের পাঁচ ব্যাটসম্যান আউট। সবাই আবার বোল্ড। মানে রিভিউ নেওয়ার সুযোগও পাননি কেউ। মিরাজের শিকার তিনটি, সাকিবের দুটি। আর তাতেই দারুণ এক রেকর্ডে নাম লিখিয়েছে বাংলাদেশ। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে ১২৮ বছর পর কোনো দলের টপ অর্ডারের পাঁচ ব্যাটসম্যানই আউট হলো বোল্ড হয়ে। ইতিহাসে এটি তৃতীয় ঘটনা। প্রথমটি ছিল ১৮৭৯ সালে মেলবোর্নে। ইংল্যান্ডকে ডুবিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। ১৮৯০-তে ১১ বছর পর ওভালে সেই লজ্জা আবার ইংল্যান্ড ফিরিয়ে দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়াকে। গতি বা বাউন্স নয়, স্পিনঘূর্ণিতেই যে কাবু করা যায় প্রতিপক্ষকে অনায়াসে, তা প্রমাণ করল বাংলাদেশ। পেসার ছাড়া প্রথমবারের মতো খেলতে নামা বাংলাদেশও স্বস্তিতে। প্রশ্ন ওঠার আগেই সব সমালোচনা মাটিচাপা।

দিনশেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে হেটমায়ার ৩২ ও ডওরিচ ১৭ রানে আছেন অপরাজিত। বলতে গেলে শেষ ভালো জুটিই এটি ওয়েস্ট ইন্ডিজের। আজ প্রথম সেশনে বাকি উইকেটগুলো তুলে নিতে পারলে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে পারবে বাংলাদেশ। সাকিব-মিরাজের পর আজ চমক দেখানোর অপেক্ষায় যে আছেন অনেক রেকর্ডের হাতছানি দেওয়া তাইজুল ইসলামও। সঙ্গে নাঈম হাসানও। গতকাল তারা বল করেছেন মাত্র ১ ওভার করে।

এর আগে ব্যাটিংয়ে পুরো দিনের আলো ছিল আসলে মাহমুদউল্লাহর ওপর। সাকিবের সঙ্গে তার ১১১ রানের জুটি দলকে দেয় রান পাহাড়ের ভিত। বিরূপ ভাগ্য সাকিবের। ৮০ রানে ফিরতে হয় রোচের বলে হোপের কাছে ক্যাচ দিয়ে। তবে এরপরও দারুণ কিছু জুটি গড়েছেন মাহমুদউল্লাহ। লিটন দাসের সঙ্গে সপ্তম উইকেটে ৯২। বাজে ফর্ম পেছনে ফেলে টেস্ট ক্যারিয়ারের চতুর্থ ফিফটি পান লিটন। তাও আট নম্বরে নেমে। অষ্টম উইকেটে মিরাজের সঙ্গে ঠিক না জমলেও এসেছে ২৩ রান। নবম উইকেটে স্পিনার তাইজুলের সঙ্গে ৫৬ রানের জুটি সত্যিই প্রশংসনীয়। শেষটাও মধুর। স্পিনার নাঈম হাসানের সঙ্গে দশম উইকেটে মাহমুদউল্লাহর অবদান ৩৬ রান। বোল্ড হয়ে যখন ফিরছেন মাহমুদউল্লাহ, তখনো মুখে চওড়া হাসি। কারণ নামের পাশে ১৩৬ রানের জ্বলজ্বলে ইনিংস, যা তার টেস্ট ক্যারিয়ার সেরা। আগেরটি ছিল ১১৫ রানের, নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে হ্যামিল্টনে। ক্যারিয়ারে তৃতীয় শতক, মিরপুরে টানা দ্বিতীয়। ২৪২ বলের ইনিংসে মাহমুদউল্লাহ হাঁকিয়েছেন মাত্র ১০টি চার। তাইজুল ২৬, মিরাজ ১৮, তরুণ স্পিনার নাঈম থাকেন ১২ রানে অপরাজিত।

ব্যাটসম্যানরা দারুণ ব্যাট করেছেন। তা না বললেও চলে। মাহমুদউল্লাহও স্বীকার করেছেন সংবাদ সম্মেলনে। সবাই ছুঁয়েছেন দুই অঙ্কের রান। একজন তো আবার তিন অঙ্ক। আর তাতেই নতুন রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। এই প্রথম বাংলাদেশের ১১ জন ব্যাটসম্যান ছুঁতে পারলেন ডবল ফিগার। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে যা ১৪তম ঘটনা। এর আগে ১৩টি ইনিংসে এমনটি করে দেখিয়েছিল ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এবার সেই তালিকায় যোগ হলো বাংলাদেশও।

আধিপত্যের সঙ্গে এবার জয়টাও এলে হবে ষোলোকলা পূর্ণ। আর সে আশাতেই বুঁদ বঙ্গদেশের কোটি কোটি ভক্ত-সমর্থক। 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads