• মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ৭ জৈষ্ঠ ১৪২৮
কিউইদেরও দুর্বলতা রয়েছে

সংগৃহীত ছবি

ক্রিকেট

কিউইদেরও দুর্বলতা রয়েছে

  • তারিক আল বান্না
  • প্রকাশিত ১৬ মার্চ ২০২১

দুর্ভাগ্য বলি আর হতাশা বলি, এটা খাঁটি সত্য কথা যে, বাংলাদেশ ক্রিকেট দল এখন পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডের মাটিতে তিন ফরম্যাটের কোনেটিতেই জয় পায়নি। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে কেবলই পরাজয় আর পরাজয়। এমনকি, টেস্টে কোনো ম্যাচে ড্র’র মুখও দেখেনি টাইগাররা কিউইদের বিপক্ষে। দুদলের মধ্যে এমন পার্থক্যের পরও কিন্তু ব্লাকক্যাপসদের বেশ কিছু দুর্বলতা রয়েছে। যে কারণে ছোট ফরম্যাটে সব সময়  ফেভারিট ও শক্তিশালী দলের ‘তকমা’ পেলেও বিভিন্ন আসরে তারা ব্যর্থ হয়েছে। ওয়ানডের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ বিশ্বকাপ ও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি এবং টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মোট ২৬টি আসরে নিউজিল্যান্ড মাত্র একটি শিরোপা পেয়েছে। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে দুর্বলতার কারণেই তারা ঐসব আসরে একটা পর্যায়ে ছিটকে পড়ে। এর পেছনে রয়েছে তাদের বড় ধরনের ঘাটতি। এসব বুঝতে পারলে তামিম-মাহমুদউল্লাহরাও এবার কিছুটা হলেও সাফল্য পাবে।

১৯৭৫ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত প্রথম ওয়ানডে বিশ্বকাপেই অংশগ্রহণ করে নিউজিল্যান্ড। ঐ বছরেই ওয়ানডের আন্তর্জাতিক পদচারণা শুরু হয়। আর প্রথম থেকেই নিউজিল্যান্ডও ওয়ানডে খেলছে। শুধু কি তাই, প্রথম আসর থেকেই কিউইরা বিশ্বকাপে থাকে অন্যতম ফেভারিট দল হিসেবে। কিন্তু তাদের কপালে কোনো শিরোপা ট্রফি জোটেনি। ১৯৭৫ ও ১৯৭৯ সালের প্রথম দুই বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ড সেমিফাইনাল থেকে ছিটকে পড়ে। ১৯৮৩ সালের তৃতীয় বিশ্বকাপে তারা গ্রুপপর্ব থেকে ছিটকে পড়ে। একইভাবে ছিটকে পড়ে ১৯৮৭ সালের চতুর্থ বিশ্বকাপ থেকে। ১৯৯২ সালের পঞ্চম বিশ্বকাপে তারা ফাইনালে ওঠার আগেই সেমিফাইনাল থেকে বাদ পড়ে। এরপর ১৯৯৬ সালে ষষ্ঠ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত যেতে সক্ষম হলেও আর এগুতে পারেনি। ১৯৯৯ সালের সপ্তম বিশ্বকাপে আবার সেমিফাইনালে উঠলেও ফাইনালে ওঠার স্বপ্ন মুছে যায় তাদের। ২০০৩ সালের বিশ্বকাপে সুপার সিক্স থেকে ছিটকে পড়ে শিরোপার আশা টানা অষ্টমবারের মতো ধূলিসাৎ হয় কিউইদের। এরপর ২০০৭ সালে নবম বিশ্বকাপে সেমিফাইনালের টিকিট পায়। কিন্তু এবারো ফাইনালে ওঠার আশাভঙ্গ হয় দুর্ভাগা দেশটির। ২০১১ সালে দশম বিশ্বকাপেও তার সেমিফাইনাল পর্যন্ত উঠতে সক্ষম হয়। কিন্তু হতাশা নিয়েই দেশে ফেরে। ২০১৫ সালে একাদশ বিশ্বকাপের অন্যতম স্বাগতিক হয়ে তারা ফাইনালে ওঠে। শিরোপা লাভের স্বপ্ন দেখতে থাকে। কিন্তু সে আশাও তাদের পূরণ হয়নি। সবশেষে ইংল্যান্ডের মাটিতে দ্বাদশ বিশ্বকাপে স্বাগতিক দেশের কাছে ফাইনালে হেরে শিরোপার আশা নষ্ঠ হয়ে যায় তাদের। মূলকথা দেখা গেছে, গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের সময় দারুণ নার্ভাস হয়ে পড়ে খেই হারিয়ে ফেলে কিউই ব্যাটসম্যান ও বোলাররা। ফলে বার বার অন্যতম ফেভারিট দল হলেও এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপ জেতা হয়নি তাদের। যেখানে অস্ট্রেলিয়া ৫ বার, ভারত ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২ বার করে এবং শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও ইংল্যান্ড ১ বার করে শিরোপা ঘরে তুলেছে।

বিশ্ব ওয়ানডে ক্রিকেটের দ্বিতীয় পর্যাদাপূর্ণ আসর হলো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত হয় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রথম আসর। সেবার ৮ দলের মধ্যে নিউজিল্যান্ড সপ্তম স্থান লাভ করে। এখন পর্যন্ত কিউরা প্রতিবারই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অংশ নিচ্ছে। ২০০০ সালে দ্বিতীয় আসরেই তারা প্রথম শিরোপার দেখা পায়, যা তাদের বিশ্বকাপ ও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির বিশটি প্রতিযোগিতার প্রথম সাফল্য। ফাইনালে ভারতকে পরাজিত করে তারা। কিন্তু এরপর আর কোনো সাফল্যই তারা পায়নি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে। ২০০২ সালের আসরে অষ্টম, ২০০৪ সালের আসরে পঞ্চম, ২০০৬ সালের আসরে তৃতীয়, ২০০৯ সালের আসরে রানার্সআপ, ২০১৩ সালের আসরে পঞ্চম এবং ২০১৭ সালের সর্বশেষ আসরে তারা অষ্টম বা একেবারে শেষ স্থানটি লাভ করে।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের এ পর্যন্ত মোট ছয়টি আসর অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০০৭ সালে প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ২০০৯, ২০১০, ২০১২, ২০১৪ ও ২০১৬ সালে বিশ্বকাপের আসর বসে। নিউজিল্যান্ড এখন পর্যন্ত ২০০৭ ও ২০১৬ সালের আসরে সেমিফাইনালে উঠে। বাকি আসরগুলোতে তারা আরো ব্যর্থ হয়। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ছোট ফরম্যাটের বিশ্বকাপের ফাইনালের মুখই দেখেনি নিউজিল্যান্ড।            

ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির বড় বড় আসরে নিউজিল্যান্ডের ব্যর্থতার পেছনে রয়েছে তাদের দুর্বল মানসিকতা। তাদের একটি বড় দুর্বলতা হলো তারা ম্যাচের শুরুতে যদি ধাক্কা খায় অর্থাৎ ব্যাটিংয়ের শুরুতে কয়েকটি উইকেট পড়ে গেলে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারে না। সেখানে তাদের যতই বিশ্বমানের ব্যাটসম্যান থাকুন না কেন, খুব দ্রুত ইনিংস শেষ হয়ে যায়। শুধু বড় দলের ক্ষেত্রেই নয়, ছোট দলগুলোর সঙ্গে একই হাল দেখা যায় কিউইদের। আবার তাদের বোলারদের যদি প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানরা ওয়ানডেতে প্রথম দশ ওভার একটু বুঝে খেলে উইকেট টিকিয়ে রাখে তখন স্কোর খুব সহজেই বড় হয়ে পড়ে। বড় দল তো বটেই সেটা ছোট দল হলেও দেখা যায়। আর টি-টোয়েন্টিতে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে কোনো দল প্রথম পাঁচ ওভার কোনো উইকেট না হারালে বিগ স্কোরের পথ তৈরি হয়ে পড়ে। একইভাবে টি-টোয়েন্টিতে নিউজিল্যান্ডের ইনিংসে যদি প্রথমেই ২/৩টি উইকেটের পতন ঘটে, তাহলে তারা কোনোভাবেই স্কোর বড় করতে পারে না। এগুলো সবই মনস্তাত্ত্বিক বিষয়। মোট কথা নিউজিল্যান্ডের মনোবল ভাঙতে পারলে বাংলাদেশ ম্যাচ বের করে নিয়ে আসতে পারবে। তবে সেটা কতটুকু কাজে লাগাতে পারবে টাইগাররা, সেটাই দেখার বিষয়।    

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads