• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯
খালেদা আছেন, খালেদা নেই

বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া

সংরক্ষিত ছবি

নির্বাচন

পাঁচ বিএনপি নেতা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না

খালেদা আছেন, খালেদা নেই

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৮ নভেম্বর ২০১৮

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পথ আটকে গেল দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার। এর ফলে ভোটে অংশ নিতে পারবেন না সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী। তবুও তার দল বিএনপি তাকে নির্বাচনী মাঠে রাখবে। কিন্তু কীভাবে রাখবে তা খোলাসা করেনি বিএনপি। অর্থাৎ নির্বাচনী মাঠে খালেদা জিয়া আছেন, আবার খালেদা জিয়া নেইও।

দুর্নীতির দায়ে বিচারিক আদালতের দেওয়া দণ্ড ও সাজা স্থগিত চেয়ে বিএনপির পাঁচ নেতার আবেদন শুনানি শেষে হাইকোর্টের দেওয়া এক আদেশের ফলে শুধু খালেদা জিয়া নন তার সঙ্গে আবেদনকারী দণ্ডিত পাঁচ নেতার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পথও বন্ধ হলো।

এর আগে বিচারিক আদালতের দণ্ড ও সাজা স্থগিত চেয়ে আমান উল্লাহ আমান, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, ওয়াদুদ ভূঁইয়া, মো. মশিউর রহমান ও মো. আবদুল ওহাব আবেদন করলে হাইকোর্ট গতকাল মঙ্গলবার দণ্ড স্থগিতের আবেদন খারিজ করে দেন। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কেএম হাফিজুল আলম সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দিলে নির্বাচনে তাদের অংশ নেওয়ার পথ আটকে যায় বলে জানান অ্যাটর্নি জেনারেল ও দুদকের আইনজীবী।

হাইকোর্টের আদেশে বলা হয়েছে, বিচারিক আদালতে দুই বছরের বেশি সাজা হলে আপিল বিচারাধীন থাকলেও কোনো ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনো ব্যক্তির দুই বছরের বেশি সাজার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। যতক্ষণ পর্যন্ত না আপিল বিভাগে তার দণ্ড বাতিল বা স্থগিত হয়।

সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদে আরো বলা হয়েছে, ‘নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে কেউ অন্যূন দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে মুক্তির পর পাঁচ বছর পর্যন্ত তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য বিবেচিত হবেন না।’

আদালত আরো বলেছেন, ‘দুর্নীতি এমন একটা ব্যাপার যে, এ বিষয়ে আমাদের সবার সজাগ থাকা উচিত। কাজেই কনভিকশন মাথায় নিয়ে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া সংবিধানের মূল চেতনার পরিপন্থী। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪২৬ ধারায় যাই থাকুক না কেন, সংবিধান সবার উপরে প্রযোজ্য।’ বিএনপির পাঁচ নেতার পাশাপাশি বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যালায়েন্সের

খালেদা আছেন, খালেদা নেই

 

সভাপতি ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাও নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। গত ১৮ নভেম্বর নাজমুল হুদার দুর্নীতি মামলার সাত বছরের কারাদণ্ডাদেশের হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়।

আদালতে আমান উল্লাহ আমানের পক্ষে শুনানি করেন জাহিদুল ইসলাম। ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেনের পক্ষে রোকন উদ্দিন মাহমুদ, আহসানুল করীম ও খায়রুল আলম চৌধুরী। ওয়াদুদ ভুঁইয়া ও আবদুল ওহাবের পক্ষে ছিলেন রফিক-উল-হক ও একেএম ফখরুল ইসলাম। মশিউর রহমানের পক্ষে ছিলেন আমিনুল হক ও মাহবুব শফিক। দুদকের পক্ষে ছিলেন মো. খুরশীদ আলম খান এবং সরকার পক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক।

রায়ের পর দুদকের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান বলেন, খালেদা জিয়ার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকছে না। তিনি সম্পূর্ণ খালাস পেলে অথবা দণ্ড বাতিল হলে তখন পারবেন। আজকের আদেশে এটা আরো স্পষ্ট হলো। হাইকোর্টের এই আদেশ সবার জন্যই প্রযোজ্য হবে। নির্বাচন কমিশনও এর বাইরে কোনো আদেশ দিতে পারবে না।

এদিকে সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, ‘দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া আপিলে খালাস পেলেও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। নির্বাচনে অংশ নিতে হলে খালেদা জিয়াকে মুক্তির পরও পাঁচ বছর অপেক্ষা করতে হবে।’

নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মাহবুবে আলম বলেন, যারা দরখাস্ত করেছিলেন তারা সবাই দণ্ডপ্রাপ্ত। তারা দণ্ড থেকে মুক্তি লাভ করেনি। তাদের পাঁচ বছর সময় অতিবাহিত হয়নি।

আসামিপক্ষের আইনজীবী খায়রুল আলম চৌধুরী বলেন, নির্বাচনে অংশ নিতে তার মক্কেল (ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন) হাইকোর্টে দণ্ড স্থগিতের আবেদন করেছিলেন। আদালত আবেদনটি খারিজ করে বলেছেন, দুটি যুক্তি এ আবেদন ‘বিবেচনার যোগ্য নয়’। একটি হলো- ফৌজদারি কার্যবিধির ৪২৬ ধারা অনুযায়ী দণ্ড স্থগিত করা যায়, কিন্তু দোষী সাব্যস্ত স্থগিত করা যায় না। দ্বিতীয় যুক্তি হলো- সংবিধানের ৬৬(২)(ঘ) অনুচ্ছেদে বলা আছে, সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি নির্বাচন করতে পারবে না। আমরা ভারতসহ বিভিন্ন দেশের নজির দেখিয়ে বলেছি সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। এ আদেশের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল দায়ের করব।

আমানউল্লাহ আমানকে ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থার সেনা সমর্থিত সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের মামলায় আমানকে ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেন বিশেষ জজ আদালত। এ রায় হাইকোর্টে বাতিল হলেও ২০১৪ সালে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বাতিল করে পুনর্বিচারের আদেশ দেন।

জরুরি অবস্থার সময়ের মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য ও খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি ওয়াদুদ ভূঁইয়াকে ২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালত। ২০০৯ সালে তিনি হাইকোর্টে আপিল করে জামিন পান।

ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেনকে ২০০৮ সালের ২৫ মে ১৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত। ২০০৯ সলের ৩ জুন তিনি হাইকোর্টে আপিল করে জামিন পান।

ঝিনাইদহ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. আবদুল ওহাবকে ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপনের মামলায় যশোরের বিশেষ জজ আদালত ৮ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ত্রিশ হাজার টাকা জরিমানা করে। আপিল করে গত বছর ৬ ডিসেম্বর তিনি জামিন পান।

সাবেক সংসদ সদস্য মশিউর রহমানকে জ্ঞাত আয়-বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপনের মামলায় ২০১৭ সালের অক্টোবরে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন যশোরের বিশেষ জজ আদালত। পরে তিনি আপিল করে হাইকোর্ট থেকে জামিন পান।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads