• শনিবার, ৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪২৯
গুরুত্ব কর্মসংস্থান আর উন্নয়নে

লোগো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

নির্বাচন

আ.লীগের ইশতেহার

গুরুত্ব কর্মসংস্থান আর উন্নয়নে

# কাজ পাবেন আরো ১ কোটি ২৮ লাখ মানুষ # প্রতিটি উপজেলা থেকে বছরে এক হাজার জনের বিদেশে কর্মসংস্থান # জঙ্গিবাদ, মাদক সন্ত্রাস ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ # ঢাকা ও বিভাগীয় শহরের মধ্যে বুলেট ট্রেন চালু # ১ বছরের নিচে ও ৬৫ বছরের উপরে সবাইকে বিনামূল্য

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮

কর্মসংস্থান আর চলমান উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহার গতকাল মঙ্গলবার ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ শীর্ষক ইশতেহারে দলটির অবস্থান, গত দুই মেয়াদে সরকারের সাফল্য ও আগামী দিনের লক্ষ্য ও পরিকল্পনাগুলো তুলে ধরা হয়েছে। ঢাকার প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এর উল্লেখযোগ্য অংশগুলো তুলে ধরেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এবারের ইশতেহারে আওয়ামী লীগের ২১টি বিশেষ অঙ্গীকার এসেছে। দুই ধরনের কৌশলগত পরিকল্পনার আওতায় দেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করে বঙ্গবন্ধু এবং লাখো শহীদের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার জন্য ৩৩টি ক্ষেত্রের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে দলটি। ২১টি অঙ্গীকারের মধ্যে শীর্ষে আছে দেশের প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নাগরিক সুবিধা পৌঁছে দেওয়া, যুবসমাজকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা।

নির্বাচনে বিজয়ী হতে পারলে পাঁচ বছরে এক কোটি ২৮ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি দেশের প্রতিটি উপজেলা থেকে গড়ে এক হাজার যুব বা যুব মহিলার বিদেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করারও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় ‘যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ স্থাপন করা হবে। জাতীয় পর্যায়ে স্বল্প, মধ্যম ও উচ্চ শিক্ষিত তরুণদের তথ্য সংবলিত একটি ‘ইন্টিগ্রেটেড ডাটাবেজ’ তৈরি করা হবে। জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠনের প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে।

গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণে চলমান প্রক্রিয়াকে জোরদার ও সংসদকে আরো কার্যকর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে আওয়ামী লীগ। জঙ্গিবাদ, মাদক সন্ত্রাস ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অব্যাহত থাকবে বলে কথা দিয়েছে দলটি। এ ছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) আরো দক্ষ, কর্মক্ষম ও আধুনিক করা; স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে অধিকতর আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা অর্পণ করা; নাগরিক সুযোগ-সুবিধা উন্নত, প্রসারিত করার জন্য সরকারি সাহায্য, উদ্যোগ অব্যাহত রাখা; লিঙ্গ সমতা, শিশু কল্যাণ, শিশু অধিকার নিশ্চিত করা, পুষ্টিসম্মত ও নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা এবং দারিদ্র্য নির্মূলের কথা বলা হয়েছে।

ইশতেহারে বলা হয়েছে শিক্ষা খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দের নিশ্চয়তা, এক বছরের নিচে ও ৬৫ বছরের ওপরের নাগরিকদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার কথাও। এ ছাড়া আছে এসজিডি বাস্তবায়ন কৌশল, ডেল্টা পরিকল্পনা ২১০০-এর বিস্তারিত। ইশতেহারে বলা হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে মাথাপিছু আয় দাঁড়াবে ৫৪৭৯ ডলারের বেশি। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হবে বাংলাদেশ আর দারিদ্র্যের হার শূন্যের কোঠায় পৌঁছাবে।

এবারের ইশতেহার ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারের ধারাবাহিকতা বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় সংসদ নির্বাচনে নৌকায় ভোট চান।

দলটির ইশতেহারে বলা হয়েছে, ‘আসুন, আমরা সবাই মিলে এমন এক বাংলাদেশ গড়ে তুলি, যেখানে মানুষের মৌলিক সব চাহিদা পূরণ হবে।  গড়ে উঠবে সহিষ্ণু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, নিশ্চিত হবে সামাজিক ন্যায়বিচার। যার যার ধর্ম পালনে স্বাধীনতা ও সম-অধিকার, নারীর অধিকার ও সুযোগের সমতা, তরুণদের শ্রম ও মেধার সৃজনশীল বিকাশ, আইনের শাসন, মানবাধিকার, সুশাসন, শহর ও গ্রামের বৈষম্য দূর ও দূষণমুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা হবে। গড়ে উঠবে এক অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল বিজ্ঞানমনস্ক উদার গণতান্ত্রিক কল্যাণ-রাষ্ট্র।’

২১টি বিশেষ অঙ্গীকার

আওয়ামী লীগের ইশতেহারে ২১টি অঙ্গীকার করা হয়েছে। এগুলো হলো- আমার গ্রাম, আমার শহর : প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণ; তারুণ্যের শক্তি-বাংলাদেশের সমৃদ্ধি : তরুণ যুব সমাজকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর এবং কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা; দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি; নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গ সমতা ও শিশু কল্যাণ; পুষ্টিসম্মত ও নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা; সন্ত্রাস-সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গিবাদ ও মাদক নির্মূল; মেগা প্রজেক্টগুলোর দ্রুত ও মানসম্মত বাস্তবায়ন; গণতন্ত্র ও আইনের শাসন সুদৃঢ় করা; দারিদ্র্য নির্মূল; সব স্তরে শিক্ষার মান বাড়ানো; সবার জন্য মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা; সার্বিক উন্নয়নে ডিজিটাল প্রযুক্তির অধিকতর ব্যবহার; বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চয়তা; আধুনিক কৃষি ব্যবস্থা- লক্ষ্য যান্ত্রিকীকরণ; দক্ষ ও সেবামুখী জনপ্রশাসন; জনবান্ধব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা; ব্লু ইকোনোমি-সমুদ্র সম্পদ উন্নয়ন; নিরাপদ সড়কের নিশ্চয়তা; প্রবীণ, প্রতিবন্ধী ও অটিজম কল্যাণ; টেকসই উন্নয়ন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ এবং সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানো।

সরকার গঠন করতে পারলে যা যা করবে

নির্বাচনে জয়ী হয়ে আবার সরকার গঠন করতে পারলে আওয়ামী লীগ কী কী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে, এর রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছে ইশতেহারে। এতে বলা হয়েছে, সর্বজনীন মানবাধিকার সুনিশ্চিত করার পাশাপাশি মানবাধিকার লঙ্ঘনের যেকোনো প্রচেষ্টা প্রতিহত করা হবে। আগামী ৫ বছরে জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে জনবল নিয়োগ করা হবে। জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির প্রতি দৃঢ় অবস্থান অব্যাহত থাকবে। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও দখলদারি বন্ধে সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করা হবে।

আগামী ৫ বছরে জিডিপি ১০ শতাংশে উন্নীত করা হবে। ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনকালে বাংলাদেশ হবে মধ্যম আয়ের দেশ। ২০৩০ সালে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় দাঁড়াবে ৫ হাজার ৪৭৯ ডলারেরও বেশি।

প্রতিটি গ্রামকে শহরে উন্নীত করার কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হবে। শহরের সুবিধা গ্রামে পৌঁছে দেবে। আগামী ৫ বছরে দেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে যাবে। পাকা সড়কের মাধ্যমে সব গ্রামকে জেলা ও উপজেলা শহরের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে।

প্রতিটি উপজেলায় ‘যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ স্থাপন করা হবে। জাতীয় পর্যায়ে স্বল্প, মধ্যম ও উচ্চ শিক্ষিত তরুণদের তথ্য সংবলিত একটি ইন্টিগ্রেটেড ডাটাবেজ হবে। তরুণদের সুস্থ বিনোদনের জন্য প্রতিটি উপজেলায় গড়ে তোলা হবে একটি করে ‘যুব বিনোদন কেন্দ্র’। প্রতিটি জেলায় একটি করে ‘যুব স্পোর্টস কমপ্লেক্স’ গড়ে তোলা হবে।

বাল্যবিবাহ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান মজুরি নিশ্চিত করা হবে। নারী উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে আলাদা ব্যাংকিং ও ঋণ সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। দারিদ্র্যের হার ১২.৩ শতাংশ এবং চরম দারিদ্র্যের হার ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে।

প্রতিটি পরিবারে অন্তত একজনের নিয়মিত রোজগার নিশ্চিত করা হবে। একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প অব্যাহত থাকবে। সহজ শর্তে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ঋণ দেওয়ার মাধ্যমে আয়বর্ধকমূলক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করা হবে।

ছোট ও মাঝারি আকারের দুগ্ধ ও পোল্ট্রি খামার প্রতিষ্ঠা এবং মৎস্য চাষের জন্য সহজ শর্তে ঋণ, প্রয়োজনমতো ভর্তুকি, প্রযুক্তিগত পরামর্শ ও নীতি সহায়তা বাড়ানো হবে। ২০২০ সালের মধ্যে সবার জন্য বিদ্যুৎ নিশ্চিত করা হবে। ২০২৩ সালের মধ্যে ২৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ এবং ৫ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করা হবে। পদ্মা সেতুর দুই পাড়ে আধুনিক শিল্পনগরী গড়ে তোলা হবে। প্রতিটি বিভাগীয় শহরে আইটি শিল্প পার্ক হবে।

প্রতিটি উপজেলায় একটি করে টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট হবে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষায় শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করে প্রয়োজনীয় বই বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন গ্রেডসহ শিক্ষা খাতের কিছু কিছু ক্ষেত্রে যে বৈষম্য রয়ে গেছে, তা ন্যায্যতার ভিত্তিতে নিরসন করা হবে।

সব বিভাগীয় শহরে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হবে। ঢাকা ও বিভাগীয় শহরের মধ্যে বুলেট ট্রেন চালু হবে। দেশের আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরগুলোর আধুনিকায়ন হবে। আগামী ৫ বছরে প্রায় ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ খনন করা হবে।

মহাসড়কের পাশে অবস্থিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য আন্ডারপাস ও ওভারপাস নির্মাণ করা হবে। উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ করার জন্য যমুনা নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণ করা হবে। দেশের সর্বত্র মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষা, ইতিহাস বিকৃতি রোধ ও প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরার জন্য বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। কোরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোনো আইন করা হবে না।

পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির যেসব ধারা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি, সেগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা চর্চায় সাংবাদিকদের উৎসাহ দেওয়া ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পেশাগত দায়িত্ব পালনে সাংবাদিক ও সংবাদকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads