আজ ৩০ ডিসেম্বর। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সকাল ৮টা থেকে সারা দেশের ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে ২৯৯টি আসনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। বিকাল ৪টা পর্যন্ত এই ভোটগ্রহণ চলবে। এবারের নির্বাচনে মোট ৩৯টি রাজনৈতিক দল অংশ নিলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে। বৃহত্তর এই দুই দলের নেতৃত্বে মহাজোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে দুটি রাজনৈতিক জোটের ব্যানারে এক ডজনেরও বেশি দল নির্বাচনি মাঠে রয়েছে। তবে একজন প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে গাইবান্ধা-৩ আসনে ভোট হচ্ছে না। ২৭ জানুয়ারি এই আসনে ভোটের দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।
এদিকে গত কয়েকদিনে সরেজমিনে দেখা গেছে, দশ বছর পর সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের এই নির্বাচনে পৌষের শীতের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে উত্তাপ। তবে ভোট নিয়ে প্রার্থী ও ভোটারদের মধ্যে যেমন উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে, তেমনি সহিংসতার শঙ্কাও রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সফল করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভয় উপেক্ষা করে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে ইসির পক্ষ থেকে। সেই সঙ্গে নিরপেক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ নির্বাচনী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে ২৭২ জন ও বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ২৮২ জন লড়ছেন। এর মধ্যে সরাসরি আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী ২৬০ জন ও বিএনপির ২৫৭ জন প্রার্থী রয়েছেন। দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা বাকিরা জোটভুক্ত শরিক দলগুলোর। এই নির্বাচন জাতীয় ঐক্যফ্রট ও ২০ দলে থাকা ৮টি নিবন্ধিত রাজনতিক দল ধানের শীষ প্রতীক লড়ছে। আর মহাজাট ও ১৪ দলীয় জোট থাকা ৫টি দলের প্রার্থীরা আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মতো নৌকা প্রতীক নিয়ে মাঠে রয়েছেন। তবে কারাগারে থাকায় ১৯৯১ সালের পর এই প্রথম বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ভোটে অংশ নিতে পারছেন না।
প্রসঙ্গত, এর আগে সর্বশেষ ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব দল অংশ নিয়েছিল। এরপর তত্ত্ববধায়ক ইস্যুত ২০১৪ সালর ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচন বিএনপিসহ বেশিরভাগ দল নির্বাচন বর্জন করে। ওই নির্বাচন আওয়ামী লীগসহ ১২টি দল অংশ নেয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। ২০০৮ সালের পর এবার নিবন্ধিত সবকটি রাজনৈতিক দল অংশ নেওয়ায় দেশ ও বিদেশে এই নির্বাচন বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করে ইতোমধ্য বিবৃতি দিয়েছে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সংস্থা। বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকরা এ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছেন।
এই একাদশ নির্বাচনের জন্য গত ৮ নভেম্বর তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। পরে বিএনপি, যুক্তফ্রটসহ কয়কটি দলের দাবির মুখে পুনঃতফসিল ঘোষণা করে ৩০ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণের দিন নির্ধারণ করা হয়। প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার পর জাতীয় ঐক্যফ্রটের প্রার্থী মারা যাওয়ায় গাইবান্ধা-৩ আসনে ২৭ জানুয়ারি ভোটের পুনঃতফসিল ঘোষণা করা হয়েছে।
এদিকে গত ১০ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণা শুরু হওয়ার পর টানা ১৯ দিনের প্রচার-প্রচারণায় দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় মারা গেছে অন্তত ৯ জন। গত শুক্রবার সকাল ৮টার পর থেকে সব ধরনের প্রচার বন্ধ রয়েছে। গত শনিবার দেশের সব ভোট কেন্দ্রে নির্বাচনী মালামাল পৌঁছে গেছে। ভোটের সময় গুজব ও প্রভাব বিস্তার বন্ধে মোবাইলে ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বন্ধ রাখা হয়েছে মোবাইল ব্যাংকিং। একইভাবে গত শনিবার মধ্যরাত থেকে রবিবার মধ্যরাত পর্যন্ত সব ধরনের যানবাহন চলাচলে বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। তবে কমিশনের অনুমোদিত পরিচয়পত্রধারীদের গাড়ি চলাচল করতে পারবে। পাশাপাশি হাসপাতাল, ফায়ার সার্ভিসহ জরুরি কাজ নিয়োজিত গাড়ি চলাচলে এ বিধিনিষেধ থাকছে না।