• বুধবার, ৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪২৯
নাম পাল্টাবে, ক্ষমতা বাড়বে না

লোগো বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি)

শিক্ষা

নাম পাল্টাবে, ক্ষমতা বাড়বে না

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন হচ্ছে বাংলাদেশ উচ্চশিক্ষা কমিশন

  • অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য
  • প্রকাশিত ২৭ আগস্ট ২০১৮

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে যে ‘স্বশাসন’ দেওয়ার কথা ছিল, তা হয়নি। ইউজিসি উচ্চশিক্ষা কমিশন হওয়ার পরও এখনকার মতোই ‘নামকাওয়াস্তে’ স্বায়ত্তশাসন পাবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতে বরং আগের চেয়ে কোনো কোনো ক্ষেত্রে কমিশনের ক্ষমতা আরো কমে যাবে। সব মিলিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে রেখেই বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) উচ্চশিক্ষা কমিশনে রূপান্তরের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিল সরকার।

গতকাল রোববার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটির সভায় উচ্চশিক্ষা কমিশন আইন, ২০১৮ অনুমোদন দেওয়া হয়। এখন এটি মন্ত্রিসভার বৈঠকে যাবে এবং সেখানে অনুমোদন হওয়ার পর জাতীয় সংসদে উঠবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বলছে, সচিব কমিটিতে অনুমোদন পাওয়া আইনে উচ্চশিক্ষা কমিশনকে খুব বেশি ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। ফলে কমিশন যেভাবে কাজ করতে চেয়েছিল, তা পারবে না। অনুমোদন পাওয়া আইন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, শুধু নামই পাল্টাচ্ছে ইউজিসির। অর্থাৎ ছিল ইউজিসি, হবে উচ্চশিক্ষা কমিশন। নতুন আইনে উচ্চশিক্ষা কমিশনে সদস্য ও কর্মকর্তা বাড়বে। নির্বাহী ক্ষমতা বাড়বে না। 

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. আবদুল মান্নান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, উচ্চশিক্ষা কমিশনের জন্য সরকারের কাছে আমরা নতুন কিছু চাইনি। অন্য ১০টি দেশে যেভাবে রয়েছে ঠিক সেভাবেই আমরা চেয়েছিলাম। তিনি বলেন, আমরা শুধু নাম বদল চাইনি। আমরা নির্বাহী ক্ষমতাসহ স্বশাসন বাড়াতে চেয়েছিলাম। শুধু নাম পরিবর্তন কিংবা কাঠামোগত চরিত্র বদল কাম্য নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি। 

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, নানা বিশ্লেষণের পর উচ্চশিক্ষা কমিশন গঠনের জন্য প্রণীত আইনটি সচিব কমিটির অনুমোদন পেয়েছে। এখন মন্ত্রিসভায় যাবে। জাতীয় সংসদের আগামী অধিবেশনে আইনটি উত্থাপনের জন্য আমরা চেষ্টা করছি।     

উচ্চশিক্ষা কমিশন আইনের সর্বশেষ খসড়া পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, কমিশন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনেই কাজ করবে। কমিশনের চেয়ারম্যান, সদস্য ও সচিবের পদমর্যাদা সরকারই নির্ধারণ করবে। সরকারের অনুমোদনক্রমেই কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।

ইউজিসির তৈরি খসড়ায় বলা হয়েছিল, কমিশন হবে প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের অধীনে। স্বাধীনভাবে এই কমিশন যেকোনো প্রশাসনিক ও আর্থিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। কমিশনের চেয়ারম্যান একজন পূর্ণমন্ত্রীর মর্যাদা পাবেন, ৫ সদস্য প্রতিমন্ত্রীর এবং কমিশনের সচিব সরকারের সচিবের মর্যাদা পাবেন। কিন্তু সচিব কমিটির বৈঠকে এসব বিষয়ে কাটছাঁট করা হয়েছে।

ইউজিসি বর্তমানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে থেকেই স্বায়ত্তশাসনের মর্যাদা ভোগ করছে। এ অবস্থায় কেন রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে উচ্চশিক্ষা কমিশন কাজ করতে চায় এমন প্রশ্নের জবাবে ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ অনেক কাজ আছে। চাইলেই তারা আমাদের সব কাজ করতে পারে না। তাই ইউজিসির ইচ্ছা ছিল, উচ্চশিক্ষা কমিশন গঠনের পরে এটি পুরোপুরি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতামুক্ত হবে। স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ পাবে। মন্ত্রণালয়ের একটি উইংয়ের মাধ্যমে দেশের উচ্চশিক্ষার কাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা সম্ভব নয় বলে কমিশন মনে করে।

ইউজিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, কমিশন যে খসড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছিল, তা সংশোধন করে ১৩টি স্থানে ‘সরকারের অনুমোদনক্রমে’ বাক্যাংশ যোগ করা হয়েছে। এর ফলে কমিশনের যেকোনো সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগবে। এখন ইউজিসি নিজস্ব পদ সৃষ্টি, যোগ্যতা নির্ধারণ ও নিয়োগ- সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কিন্তু কমিশন গঠনের পর সে ক্ষমতাও থাকবে না। সিলেবাস কমিটিসহ বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ নিয়োগ ও তাদের সম্মানী প্রদানের ক্ষেত্রেও মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হবে।

এ বিষয়ে আবদুল মান্নান বলেন, ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু স্বায়ত্তশাসন দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন গঠন করেছিলেন। ১৯৭৩ থেকে ২০১৮ সেই আইনে চলেছে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে। তবু বঙ্গবন্ধু যে স্পিরিট নিয়ে আইনটি তৈরি করেছিলেন, সময়ের তাগিদে এটি আপডেট হলেও আশা করছি বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই ধারা ধরে রেখেই আইনটি সংসদে পাস হওয়ার আগে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করবেন।   

উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ৩ মে প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন, উৎকর্ষ সাধন এবং বিস্তৃতির লক্ষ্যে ইউজিসিকে উচ্চশিক্ষা কমিশনে রূপান্তরের ঘোষণা দেন। বাংলাদেশ উচ্চশিক্ষা কমিশন আইন-২০১২-এর খসড়ার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও অর্থ বিভাগের মন্তব্যসহ মতামত দেয় ইউজিসি। ২০১৩ সালের ১০ জুলাই শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভায় খসড়া চূড়ান্ত করা হয়। নীতিগত অনুমোদনের জন্য খসড়া মন্ত্রিসভা বৈঠকে উপস্থাপিত হলে সেটিকে ফিরিয়ে দিয়ে আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। এরপর নানা প্রক্রিয়া শেষে গতকাল ফের সচিব কমিটিতে তোলা হলে আইনটি অনুমোদন পায়।

প্রস্তাবিত আইনে পাঠক্রমের মানোন্নয়নের পাশাপাশি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে উদ্ভাবন এবং গবেষণাকে উৎসাহিত করা হয়েছে। আইনে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চ্যান্সেলর এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব চ্যান্সেলরের সাচিবিক দায়িত্ব পালন করবেন। কমিশন সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হবে এবং এর স্থায়ী ধারাবাহিকতা থাকবে। কমিশন মামলা করতে পারবে বা কমিশনের বিরুদ্ধেও মামলা করা যাবে। আইন জারি হওয়া মাত্র ‘ইউজিসি’ বিলুপ্ত হয়ে ‘বাংলাদেশ উচ্চশিক্ষা কমিশন’ প্রতিষ্ঠিত হবে। রাষ্ট্রপতি কমিশনের চেয়ারম্যান নিয়োগ করবেন। চেয়ারম্যান ছাড়াও একজন পূর্ণকালীন সদস্যসহ রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে আরো পাঁচজন পূর্ণকালীন সদস্য ও একজন খণ্ডকালীন সদস্যসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিকল্পনা বিভাগের একজন সদস্য এবং অর্থ বিভাগের সচিবকে কমিশনের সদস্য করা হয়েছে। কমিশনে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তিনজন ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তিনজন উপাচার্যসহ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তিনজন ডিনকে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে সদস্য করা হবে।

কমিশনের চেয়ারম্যান হবেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের শিক্ষক, গবেষক বা প্রশাসক হিসেবে শিক্ষা ক্ষেত্রে খ্যাতিমান ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিত্ব। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা ও গবেষণার কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে অন্যূন ২০ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন ব্যক্তি বা শিক্ষাবিদ পূর্ণকালীন সদস্য হবেন। চেয়ারম্যান ও পূর্ণকালীন সদস্য চার বছরের জন্য নিয়োগ পাবেন। তবে তারা দ্বিতীয় মেয়াদেও নিয়োগ পেতে পারেন। সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর (২০১০ সালের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী স্থায়ী সনদপ্রাপ্ত) ছয় সদস্য (উপাচার্য) এবং সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন সদস্য হিসেবে মনোনীত তিনজন ডিন দুই বছরের জন্য নিয়োগ পাবেন।

চেয়ারম্যান হবেন কমিশনের প্রধান নির্বাহী। সরকার কমিশনের সচিব নিয়োগ দেবে। সচিবালয় থাকবে কমিশনের চেয়ারম্যানের অধীনে। সচিবালয়ের সচিব কমিশনের অভ্যন্তরীণ প্রশাসন বিভাগের প্রধান হবেন। আর অন্যান্য বিভাগীয় প্রধানদের পদবি হবে পরিচালক। আইনে বছরে পূর্ণ কমিশনের কমপক্ষে তিনটি সভার বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads