• বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জৈষ্ঠ ১৪২৯
নির্বাচনের গ্যাঁড়াকলে বিনামূল্যের পাঠ্যবই

বিনামূল্যের পাঠ্যবই হাতে আনন্দিক শিক্ষার্থীরা

সংগৃহীত ছবি

শিক্ষা

নির্বাচনের গ্যাঁড়াকলে বিনামূল্যের পাঠ্যবই

কয়েকটি প্রিন্টার্সকে এনসিটিবির শোকজ

  • অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য
  • প্রকাশিত ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের গ্যাঁড়াকলে পড়েছে বিনামূল্যের পাঠ্যবই। ১৬ ডিসেম্বরের পর নির্বাচন হলে ছাপা হওয়া পাঠ্যবই পাঠিয়ে দেওয়া হবে উপজেলায়। আর ১৬ ডিসেম্বরের আগে নির্বাচন হলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) নিজস্ব হেফাজতে রাখবে। নির্বাচনী ডামাডোলের প্রভাবে আগামী ১ জানুয়ারি পাঠ্যপুস্তক উৎসব পালনের রূপরেখা ঘোষণা করেনি এনসিটিবি। ২০১০ সাল থেকে দেশে ১ জানুয়ারি পাঠ্যপুস্তক উৎসব দিবস উদযাপন হয়ে আসছে। এদিন প্রথম থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা খালি হতে স্কুলে আসে এবং বিনামূল্যের নতুন পাঠ্যবই নিয়ে ঘরে ফেরে। আগামী বছরের শুরুতে নির্বাচনী ডামাডোল থাকায় বই উৎসবের হিসাবে কিছুটা গরমিল দেখা দিয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, নির্বাচনী সময়ের কারণে ২০১৯ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবই বিতরণ নিয়ে কিছুটা ঝামেলা থাকলেও ছাপার কাজ পুরোদমে চলছে। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাব্য সময় ধরে নভেম্বরের মধ্যেই ৯০ শতাংশ বই ছাপা শেষ করার লক্ষ্য স্থির করেছে এনসিটিবি। গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রায় ১০ কোটি পাঠ্যবই বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে পৌঁছেছে। কালকাতায় ৫০ লাখ বই ছাপা হয়ে পড়ে আছে। নির্বাচনী প্রভাবের কারণে বইগুলো কলকাতা থেকে আনা হচ্ছে না।

আগামী শিক্ষাবর্ষের জন্য ৩৫ কোটি ২১ লাখ ৯৭ হাজার ৮৮২ কপি পাঠ্যবই ছাপানো হচ্ছে। এসব বই ছাপাতে দেশি-বিদেশি প্রায় ৩০০ ছাপাখানাকে (প্রিন্টার্স) কার্যাদেশ দিয়েছে এনসিটিবি। এর মধ্যে মাধ্যমিক (বাংলা ও ইংরেজি ভার্সন) এবং এসএসসি ভোকেশনাল স্তরের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহ করতে কাগজ ছাড়া ৩৪০টি লটে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। আর মাধ্যমিক বাংলা ও ইংরেজি ভার্সন, ইবতেদায়ি, দাখিল, এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনাল এবং কারিগরি (ট্রেড বই) স্তরের বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের জন্য কাগজসহ কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে ৩২০টি লটে। ছাপাখানায় এসব বই ছাপাতে প্রায় ৮৫ হাজার টন কাগজ ব্যবহূত হচ্ছে। এর মধ্যে এনসিটিবি কিনে দিয়েছে প্রায় ১৫ হাজার টন কাগজ। বাকি কাগজ প্রিন্টার্সরা কিনে বই ছাপিয়ে সরবরাহ করবে।

জানতে চাইলে পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, পাঠ্যবই নিয়ে কোনো ঝামেলা হবে না। এরই মধ্যে ১০ কোটি পাঠ্যবই বিভিন্ন উপজেলায় পাঠানো হয়েছে। আগামী নভেম্বরের মধ্যে বাকি বইও ছাপা হয়ে যাবে। তবে নির্বাচনী ডামাডোলের কারণে বইগুলো কোথায় রাখা হবে, ১ জানুয়ারি পাঠ্যপুস্তক কীভাবে করা হবে সেসব বিষয়ে এখনো কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, এটা নির্বাচনের বছর। রাজনৈতিক কারণে বইয়ের মান খারাপ করে কেউ কেউ সরকারকে বিব্রত করার চেষ্টা করতে পারে। এজন্য এনসিটিবি খুবই সতর্ক, কঠোর অবস্থানে রয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী নিজেও নিয়মিত পাঠ্যবই ছাপার কার্যক্রমের খোঁজখবর রাখছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনসিটিবর এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, এখন পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের অবস্থা ভালো। বইয়ের মানও ভালো হচ্ছে। উপজেলা পর্যায়ে সরবরাহ হচ্ছে। তবে যাদের বইয়ে ভুলত্রুটি বা মান খারাপ হবে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মানসম্মত বই ছাপাতে এবার কঠোর অবস্থানে এনসিটিবি। সংস্থার চেয়ারম্যান, সদস্য ও অন্য কর্মকর্তারা নিয়মিত সারা দেশের ছাপাখানা পরিদর্শন করছেন। ইতোমধ্যে একটি প্রতিষ্ঠানের কিছু বই ফেরত দিয়ে পুনরায় তা ছাপাতে বাধ্য করা হয়েছে। আর মুদ্রণ কাজে বিলম্বের কারণে ৪/৫টি প্রতিষ্ঠানকে শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

আরেক কর্মকর্তা বলেন, পাঠ্যবই নিয়ে এত ভালো খবরের মধ্যেও কিছুটা খারাপ খবর রয়েছে। এর মধ্যে বগুড়ার মা সিস্টেম প্রেস, শরীফা প্রেস, ঢাকার রেজা প্রিন্টার্স ও মডেল প্রিন্টার্স এখনো টেন্ডারে বরাদ্দ পাওয়া পাঠ্যবই ছাপা শুরু করতে পারেনি। এজন্য এনসিটিবির সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) ড. মিয়া ইনামুল হক সিদ্দিকী প্রেসগুলো সম্প্রতি পরিদর্শন করে এসেছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এনসিটিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ইতোমধ্যে রাজধানীর কেরানীগঞ্জে অনুপম প্রিন্টার্সের ষষ্ঠ শ্রেণির বেশকিছু নিম্নমানের বই ছাপার প্রমাণ পেয়েছে মান পরীক্ষা-নিরীক্ষার দায়িত্ব পাওয়া এনসিটিবির একটি কমিটি। অনুপমের বইয়ে ফর্মা কম দেওয়া, একই ফর্মা দু’বার মুদ্রণ, ছাপায় অস্পষ্টতা ও নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহারের প্রমাণ পায় মনিটরিং কমিটি। পরে ওইসব বই ফেরত পাঠিয়ে ফের ছাপিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে এ সংক্রান্ত কমিটি।

২০১৯ শিক্ষাবর্ষে মোট পাঠ্যবইয়ের মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক স্তরের বই ৬৮ লাখ ৫৬ হাজার ২০ কপি। আর প্রাথমিক স্তরের ৯ কোটি ৮৮ লাখ ৮২ হাজার ৮৯৯ কপি, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষার বই ২ লাখ ৭৬ হাজার ৭৮৪ কপি, ইবতেদায়ির ২ কোটি ২৫ লাখ ৩১ হাজার ২৮৩ কপি এবং দাখিলের ৩ কোটি ৭৯ লাখ ৫৮ হাজার ৫৩৪ কপি ছাপা হচ্ছে। মাধ্যমিক (বাংলা ভার্সন) স্তরের ১৮ কোটি ৫৩ হাজার ১২২ কপি এবং একই স্তরের ইংরেজি ভার্সনের বই ছাপা হচ্ছে ১২ লাখ ৪৭ হাজার ৮২৬ কপি। এ ছাড়া কারিগরি শিক্ষা স্তরের ১২ লাখ ৩৫ হাজার ৯৪৮ কপি, এসএসসি ভোকেশনাল স্তরের ১ লাখ ৪৩ হাজার ৮৭৫ কপি, ব্রেইল পাঠ্যপুস্তক ৫ হাজার ৮৫৭ কপি এবং সম্পূরক কৃষি (৬ষ্ঠ-৯ম) স্তরের ১ লাখ ২৪ হাজার ২৬১ কপি বই ছাপা হচ্ছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads