• বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জৈষ্ঠ ১৪২৯
প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে আন্দোলন তীব্র হচ্ছে ঢাবিতে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটের পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে গতকাল ক্যাম্পাসে মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা

ছবি -বাংলাদেশের খবর

শিক্ষা

প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে আন্দোলন তীব্র হচ্ছে ঢাবিতে

# অনশনে সংহতি প্রকাশ করে মানববন্ধন # আমরণ অনশনকারী আখতার হাসপাতালে

  • ঢাবি প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১৯ অক্টোবর ২০১৮

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে সরব হয়ে উঠছে ক্যাম্পাস। তথ্য-প্রমাণে প্রশ্নপত্র ফাঁস প্রমাণের পরও ঢাবির ভিসি অধ্যাপক আখতারুজ্জামান তা বাতিলে অস্বীকৃতি ও ফল প্রকাশের পর অবস্থা আরো তীব্রতা পাচ্ছে। অভিযোগের পর উপাচার্য সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠলেই ফল প্রকাশ প্রশ্নবিদ্ধ হয় না।

ভর্তি পরীক্ষা বাতিল করে আবার নেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ফল প্রকাশের পর থেকে এ দাবিতে অনশন, মানববন্ধন ও সমাবেশ করছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। গত ১৫ অক্টোবর নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীরা অনুষ্ঠিত ‘ঘ’ ইউনিটের পরীক্ষা বাতিল করে আবার তা নেওয়ার দাবি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করে। একই সঙ্গে ‘ঘ’ ইউনিটের সমন্বয়কারী সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন সাদেকা হালিমের পদত্যাগ দাবি করে তারা। প্রশ্নপত্র ফাঁস ও ফল ঘোষণা নিয়ে তোলপাড় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমও।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা। ভর্তি পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে আমরণ অনশনকারী আইন বিভাগের আখতার হোসেনের সঙ্গে সংহতি জানান। আখতার হোসেন গত মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের সামনে আমরণ অনশনে বসেন। ফাঁস হওয়া প্রশ্নে অনুষ্ঠিত ভর্তি পরীক্ষা বাতিল করে আবার নেওয়ার দাবিতে অনশনের তৃতীয় দিনে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। আখতার হোসেনের আমরণ অনশনে সংহতি জানিয়ে ঢাবি ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা মানববন্ধনে ৪ দফা দাবি করেন। তাদের দাবিগুলো হলো-‘ঘ’ ইউনিটের ফল বাতিল; পুনঃপরীক্ষা গ্রহণ; প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বিগত বছরে যারা জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তি হয়েছে তাদের চিহ্নিত করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার। মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে লজ্জিত। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশ্ন দিয়ে কোনো পরীক্ষা নেওয়ার দরকার নেই। এটিকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করা হোক।

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া সমাজবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মশিউর রহমান বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্বল প্রশাসন। সব প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও আগের জালিয়াতকারীদের বহিষ্কার করেনি, এটাই প্রমাণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন কতটা দুর্বল।

মানববন্ধন শেষে তারা একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির কার্যালয় সংলগ্ন গেটে অবস্থান নেয় এবং তাদের দাবির সবপক্ষে স্লোগান দেয়।

গত ১২ অক্টোবর ঢাবির সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ‘ঘ’ ইউনিটের পরীক্ষা হয়। পরীক্ষা শেষে ফাঁস হওয়া প্রশ্ন সেটের হুবহু মিল পাওয়া যায়। শুরুর ৪৩ মিনিট আগে শিক্ষার্থীদের মোবাইলে হাতে লেখা উত্তরসহ প্রশ্নপত্র শিক্ষার্থীদের মোবাইলে আসে। ৩১ মিনিট পরে প্রশ্নের উত্তরসহ ১৪টি ছবি পান সাংবাদিকরাও। সেগুলোর হুবহু মিল পাওয়া যায় ফাঁস হওয়া প্রশ্নের। ওই দিন সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাইরে ৮১টি কেন্দ্রে ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

এ ঘটনায় পরীক্ষার দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি হয়। কমিটিকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলে কর্তৃপক্ষ। উপ-উপাচার্য প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার কথা স্বীকার করেন। কমিটির অন্য সদস্যরা ছিলেন জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন ইমদাদুল হক ও সহকারী প্রক্টর মাকসুদুর রহমান। ১৫ অক্টোবর রাতে উপাচার্যের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়ে। প্রতিবেদন জমার পরদিন ১৬ অক্টোবর বিকাল সাড়ে ৩টায় ‘ঘ’ ইউনিটের ফল ঘোষণা হয়। প্রকাশিত ফলাফলে পাসের হার ছিল ২৬ দশমিক ২১ শতাংশ।

প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাও করে ঢাবি কর্তৃপক্ষ। ওই অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দা পুলিশ। সেই অভিযোগে ছয় ব্যক্তিকে গ্রেফতারও করে পুলিশ। গ্রেফতার ব্যক্তিদের কাছে ফাঁস প্রশ্নপত্রের হুবহু কপিও পাওয়া যায়।

‘ঘ’ ইউনিটের পরীক্ষার ফলাফল যাচাই করে দেখা গেছে এই ইউনিটে সর্বোচ্চ মেধাতালিকায় থাকা একাধিক ভর্তিচ্ছু অন্য ইউনিটের পরীক্ষায় পাস করেননি। অন্যদিকে কয়েক দিনের ব্যবধানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটের পরীক্ষায় ঈর্ষণীয় সাফল্য পেয়েছেন।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ‘ঘ’ ইউনিটে মেধাতালিকায় ১০০ ক্রমের মধ্যে থাকা ৭০ জনেরও বেশি শিক্ষার্থী তাদের নিজ নিজ অনুষদের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হননি।

‘ঘ’ ইউনিটে বাণিজ্য শাখায় প্রথম হওয়া ভর্তিচ্ছুকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। গত ১৪ সেপ্টেম্বর নিজ ইউনিট ‘গ’-তে ওই পরীক্ষার্থী বাংলায় ১০.৮, ইংরেজিতে ২.৪০, সর্বমোট ১২০ এর মধ্যে পেয়েছিল ৩৪.৩২। অন্যদিকে ‘ঘ’ ইউনিটে বাংলায় ৩০-এ ৩০ এবং ইংরেজিতে ৩০-এ ২৭.৩০, সর্বমোট ১২০ এর মধ্যে ১১৪.৩০ সম্বর। এ প্রাপ্তি গত ২০ বছরে ঢাবির ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

এ ছাড়া ‘ঘ’ ইউনিটে বাণিজ্য শাখায় যিনি দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছেন ১২০ এর মধ্যে তিনি পেয়েছেন ৯৮.৪০। মেধাক্রম প্রথম থেকে দ্বিতীয়র ব্যবধান নজিরবিহীন।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads