• বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জৈষ্ঠ ১৪২৯
শিক্ষক সাতজন উপস্থিত একজন

দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ

সংরক্ষিত ছবি

শিক্ষা

শিক্ষক সাতজন উপস্থিত একজন

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৮ জানুয়ারি ২০১৯

চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি স্কুলে ঝটিকা অভিযান চালিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। আকস্মিক পরিদর্শনে গিয়ে শিক্ষকদের অনুপস্থিতির প্রমাণ পান তিনি। এ সময় তিনি অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও কথা বলেন।

চট্টগ্রামের অধিকাংশ বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা নিয়মিত আসেন না এমন তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ে গতকাল রোববার দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ ঝটিকা অভিযান চালান। চট্টগ্রামে পৌঁছেই নগরীর কাট্টলী নূরুল হক চৌধুরী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যান তিনি। সরেজমিন পরিদর্শন করে বিদ্যালয়ে আটজন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও উপস্থিত ছিলেন মাত্র একজন। এ ছাড়া স্কুলের ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের স্কুলের বাইরে অবস্থান করতে দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন দুদক চেয়ারম্যান।

অভিযানের সময় দুদক চেয়ারম্যানের কাছে নানা অভিযোগ করেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। শিক্ষার্থীরা জানায়, অর্ধেক ক্লাস করেই চলে যান শিক্ষক। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই অনেক সময় স্কুল ছুটি দিয়ে দেওয়া হয় বলে জানান অভিভাবকরা। তারা বলেন, ক্লাসে বাচ্চাদের ঘুমাতে বলে মোবাইল ফোনে ব্যস্ত থাকেন শিক্ষক।

পরে দুদক চেয়রম্যান নগরীর ভাটিয়ারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যান। সেখানে গিয়ে দেখেন ১১ শিক্ষকের মধ্যে দু’জন অনুপস্থিত। এ বিষয়ে জানতে চাইলে দায় এড়ানো বক্তব্য দেন প্রধান শিক্ষক। অনুপস্থিত শিক্ষকদের লিখিত শোকজ করা হয়েছে বলে জানান তিনি। দুদক চেয়ারম্যান ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতি শিট পরীক্ষা করে দেখেন, গত শনিবার যেসব শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল তাদের অনেককেই উপস্থিত দেখানো হয়েছে। আবার গতকাল সকাল ১০টা পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের রোল কল করা হয়নি। এ বিষয়েও স্কুল কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেনি।

এরপর দুদক চেয়ারম্যান আকস্মিক পরিদর্শনের যান নগরীর শীতলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখানে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, টেস্ট পরীক্ষায় ফেল করা কোনো শিক্ষার্থীকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় সুযোগ দেয়নি স্কুল কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি অবহিত হয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন দুদক চেয়ারম্যান। তবে নবম শ্রেণিতে এক বা একাধিক বিষয়ে ফেল করা ছাত্র-ছাত্রীদের ২ হাজার টাকার বিনিময়ে দশম শ্রেণিতে প্রমোশন দেওয়ার অভিযোগ আসে। এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, এটা অনৈতিক। শিক্ষা ক্ষেত্রে অনৈতিকতার কোনো স্থান থাকতে পারে না।

এ বিষয়ে সরেজমিন বক্তব্য পাওয়া না গেলেও পরে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দুদক চেয়ারম্যান জানান, সন্তানদের শিক্ষা নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া হবে না। যেকোনো মূল্যে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষা নিশ্চিত করা হবে। প্রয়োজনে দুদক দণ্ডবিধির ১৬৬ ধারা প্রয়োগ করবে। তারপরও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ক্ষতিসাধন করবেন বা করার চেষ্টা করবেন এমন কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। দুদক দণ্ডবিধি ১৬৬ ধারায় ‘কোনো ব্যক্তির ক্ষতি সাধনকল্পে সরকারি কর্মচারী কর্তৃক আইন অমান্যকরণ’ বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে। এমন আইন অমান্যকরণে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হতে পারে।

দুদক চেয়ারম্যানের এ ঝটিকা অভিযান শিক্ষাব্যবস্থার দুর্নীতিরোধে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদরা। শিক্ষাবিদ আবুল মোমেন বলেন, শ্রেণিকক্ষে ক্লাস ঠিকমতো হয় না, তা ছাত্র-শিক্ষক সবাই বলেন। শিক্ষকরাও আন্তরিকভাবে কোচিং সেন্টারে পড়াচ্ছেন। এখানে কমিটমেন্টের অভাব রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষকদের কমিটমেন্ট আনার জন্য সরকার বেতনভাতা বাড়িয়ে ইনসেনটিভ দিচ্ছে।

চট্টগ্রাম জেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ২ হাজার ২৬৭টি। আর বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কয়েক লাখ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads