• শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জৈষ্ঠ ১৪২৯
ঢাবির হলে অস্বাস্থ্যকর শিক্ষাজীবন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লোগাে

শিক্ষা

ঢাবির হলে অস্বাস্থ্যকর শিক্ষাজীবন

  • রেজাউল করিম হীরা
  • প্রকাশিত ০৬ মার্চ ২০১৯

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর তুলনায় হলসংখ্যা কম হওয়ায় আবাসন সঙ্কট তীব্র হয়ে উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির ৪৩ হাজার শিক্ষার্থীর বিপরীতে ১৮টি হলে সিটসংখ্যা মাত্র ১৫ হাজার। ফলে আবাসন সঙ্কটে হলগুলো পরিণত হয়েছে গণরুমে। এভাবেই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে শিক্ষাজীবন পার করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালের ছাত্ররা। এ ছাড়া অস্বস্তিকর পরিবেশে শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছেন শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ থেকেও। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের তদারকির অভাবে এই সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করেছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

জানা গেছে, প্রতিষ্ঠালগ্নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিল ৮৭৭ জন। বর্তমানে শিক্ষার্থী ৪৩ হাজার। শিক্ষার্থী সংখ্যা বাড়লেও, বাড়েনি সে হিসেবে আবাসন সুবিধা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হলে ১২৮টি গণরুম, ছাদ, বারান্দা মিলে এখন প্রায় সোয়া তিন হাজার শিক্ষার্থী মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বর্ষের অনেক শিক্ষার্থী এসব হলের বারান্দায় ফুটপাথ বা রেললাইনবাসীর মতো মানবেতর জীবন পার করছেন শিক্ষাজীবনে। যেখানে মৌসুমভেদে রোদ, বৃষ্টি আর কুয়াশার সঙ্গে তাদের রোজকার বসবাস। ফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা থেকে সামগ্রিক জীবনযাত্রায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহাম্মদ মুহসিন হলে গিয়ে দেখা যায়, আবাসন সমস্যার চিত্র। চারজন থাকার উপযোগী করে কক্ষটি নির্মাণ করা হলেও আবাসন সমস্যার কারণে থাকতে হয় ২৫ থেকে ৩০ জন শিক্ষার্থীকে, যা পরিচিত গণরুম নামে। এই গণরুমগুলোর অবস্থা খুবই নাজুক। অভিযোগ রয়েছে সরকারি ও বেসরকারি চাকরিজীবী ছাড়াও হলে থাকেন অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এমন পরিস্থিতিতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণ হয়ে পড়েছে চরম বিড়ম্বনাময়। বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের সম্মুখীন হতে হয় আবাসন সঙ্কটের এমন নির্মম বাস্তবতার। সিট বরাদ্দ পাওয়া পর্যন্ত এসব রুমে অবস্থান করতে হয় শিক্ষার্থীদের। এ ছাড়া খাবারের মান নিয়ে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ তো আছেই।

শিক্ষার্থীরা জানান, প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় বর্ষেরও অনেকেই এখনো হলের বারান্দায় থাকতে বাধ্য হন। রিডিং রুমে নেই পর্যাপ্ত জায়গা। রয়েছে সংস্কারহীন ছাদের নিচে পড়ে থাকার আতঙ্ক। এই সংস্কারহীন ভবনগুলোতে যেকোনো সময় ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। গোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় পাঠাগার বলতে শুধু কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি। অনেক হলে লাইব্রেরি থাকলেও সেগুলো সমৃদ্ধ নয়।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাতারাতি আবাসন সমস্যার সমাধান করা না গেলেও ধারাবাহিকভাবে এ সমস্যা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে বিশ্ববিদ্যালয়। সঠিক সময়ে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গেলে আগামী কয়েক বছরে অনেকটাই কমে আসবে শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যা।

এমন পরিস্থিতিতে আসন্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে যারা প্রতিনিধি নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন তাদের দিকে এখন তাকিয়ে আছেন শিক্ষার্থীরা। ডাকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধিরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে এ বিষয়ে সমাধানের পথ তৈরি করবেন। কারণ ডাকসু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের মর্যাদাপূর্ণ একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি হচ্ছে। এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরাও শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে জানান।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোই হবে আমাদের প্রধান লক্ষ্য। হলগুলোর আবাসন সঙ্কট নিরসনের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা হবে বলেও তিনি জানান। ছাত্রদলের সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আবাসন সঙ্কট নিরসনে বেশ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। নির্বাচিত হলে বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান করা হবে। শিক্ষার্থীদের যেন কোনো ধরনের অসুবিধার শিকার হতে না হয়, সেটাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।

ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজির বলেন, শিক্ষার্থীরা যেন পূর্ণাঙ্গ পড়াশোনার পরিবেশ পান এবং কোনো রকম হয়রানি, বিশেষভাবে যৌন হয়রানির শিকার যেন না হন, সেদিকে আমরা জোর দেব। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সঙ্কট উত্তরণেও সমাধানের পথ তৈরি করব।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads