• বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জৈষ্ঠ ১৪২৯
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বেসামাল ভারত

সংগৃহীত ছবি

ভারত

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বেসামাল ভারত

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ২০ এপ্রিল ২০২১

ভারতে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু হুহু করে বাড়ছে। করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে বেসামাল হয়ে পড়েছে দেশটি। এক দিনে সর্বোচ্চ দুই লাখ ৭৩ হাজার ৮১০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে, মৃত্যু হয়েছে এক হাজার ৬১৯ জনের। এ নিয়ে টানা পঞ্চম দিনের মতো দেশটিতে দুই লাখের বেশি রোগী শনাক্ত হলো। এতে দেশটিতে করোনা আক্রান্তের মোট সংখ্যা এক কোটি ৫০ লাখ ৬১ হাজার ৮০৫ জনে দাঁড়িয়েছে বলে জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের কোভিড-১৯ ড্যাশবোর্ডে দেখা গেছে। আক্রান্তের এ সংখ্যা নিয়ে শীর্ষে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের পর বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে আছে দেশটি। সংক্রমণের এই ঊর্ধ্বগতি ঠেকানো না গেলে জুনের প্রথম সপ্তাহ নাগাদ ভারতে করোনায় দৈনিক মৃত্যু দুই হাজার ৩০০ ছাড়াবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

করোনার বিরুদ্ধে বিজয় উল্লাস প্রকাশের দুই মাসের মধ্যেই মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ে মুখ থুবড়ে পড়েছে ভারত। কোভিড- ১৯ নিয়ন্ত্রণে দম্ভ প্রকাশ করে নীতিনির্ধারকদের নানা অবাস্তব সিদ্ধান্তই এমন পরিণতি এনেছে বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। দেশটিতে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে দৈনিক আক্রান্তের গড় ১০ হাজারের অঙ্ক ছাড়িয়ে এপ্রিলে এসে লাফিয়ে পার হয়ে যায় দুই লাখের ঘর।  দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়ায় দেড় হাজার। দেশটিতে সংক্রমণ বাড়ার পেছনে মোটা দাগে তিনটি বিষয়কে চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো হলো নির্বাচনি প্রচার, ক্রিকেট ম্যাচ এবং কুম্ভ মেলা।

মার্চের শুরুতেই ভারতের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন কোভিড-১৯ মহামারীর বিরুদ্ধে শেষ খেলা চলছে বলে ঘোষণা করেন। তার এমন আশাবাদ খতিয়ে দেখা যায়, গত বছর সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি দৈনিক আক্রান্তের সর্বোচ্চ সংখ্যা ছিল ৯৩ হাজার। পরের মাসগুলোতে তা কমে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি হয় দিনে ১১ হাজার। তখন সপ্তাহে গড় মৃত্যু ছিল এক শরও নিচে।

গত বছরের শেষদিকে দেশটির রাজনৈতিক নেতা, নীতিনির্ধারক এবং গণমাধ্যমের একটা অংশ ধরেই নিয়েছিল করোনা মহামারী থেকে বেরিয়ে এসেছে ভারত। ডিসেম্বরে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তারা ঘোষণা দিয়েছিলেন, কোভিড সংক্রমণের ঢেউকে অবনমিত করছে ভারত। এমনকি কাব্য করে বলা হয়, শীতের দীর্ঘায়িত ছায়া ছিন্ন করে সূর্যালোকের পথে অর্থনীতি।

ফেব্রুয়ারির শেষে ভারতের নির্বাচন কমিশন পাঁচটি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন ঘোষণা করে। এই নির্বাচনে ৮২৪টি আসনে ভোটার সংখ্যা ১৮ কোটি ৬০ লাখ। ২৭ মার্চ শুরু হয়ে এক মাসের এই নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে এখনো ভোট চলছে। কোনো ধরনের সতর্কতা ও সামাজিক দূরত্ব না মেনে এসময় পূর্ণ মাত্রায় নির্বাচনি প্রচার শুরু হয়।

মার্চের মাঝামাঝি গুজরাটে নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে ভারত ও ইংল্যান্ডের মধ্যে দুটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ দেখার অনুমোদন দেয় ক্রিকেট বোর্ড। সেখানে এক লাখ ৩০ হাজার ক্রিকেট অনুরাগীর বেশির ভাগই মাস্ক ছাড়াই খেলা উপভোগ করেন। এর এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে পাল্টে যায় চিত্র। এপ্রিলের মাঝামাঝি হতেই দৈনিক করোনা আক্রান্তের গড় সংখ্যা দাঁড়ায় এক লাখ। এখন পর্যন্ত এক দিনে সর্বোচ্চ দুই লাখ ৭০ হাজার আক্রান্ত হয়েছে। দৈনিক মৃত্যু এক হাজার ৬০০ ছাড়িয়েছে।

ভারতজুড়ে এমন মৃত্যু আর মহামারীর মধ্যেও প্রতিদিনই চলছে ব্যয়বহুল ক্রিকেট ম্যাচ। নির্বাচনি প্রচারে নেতাদের পেছনে মিছিল করছে হাজারো মানুষ। লাখো মানুষের সমাবেশ ঘটছে কুম্ভ মেলায়। এসব নিয়ে দেশটির সমাজতত্ত্বের অধ্যাপক শিব বিশ্বনাথ বলেন, যা ঘটছে তা যেন পরাবাস্তব। ল্যানসেট কোভিড- ১৯ কমিশনের প্রতিবেদন বলছে, সংক্রমণের এই ঊর্ধ্বগতি ঠেকানো না গেলে জুনের প্রথম সপ্তাহ নাগাদ ভারতে করোনা আক্রান্ত হয়ে দৈনিক মৃত্যু দুই হাজার ৩০০ ছাড়াবে।

দেশটিতে করোনার সুবিশাল টিকা কর্মসূচিও এখন বেশ কসরত করে এগোচ্ছে। গত সপ্তাহের মধ্যে ১০ কোটি টিকা দেওয়া সম্পন্ন হলেও এরই মধ্যে টিকার ঘাটতির খবর পাওয়া গেছে। অথচ দেশটিতে থাকা বিশ্বের বৃহত্তম টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, সক্ষমতা বাড়ানোর পর্যাপ্ত অর্থ না থাকায় আগামী জুনের আগে তারা উৎপাদনের গতি বাড়াতে পারবে না। এরই মধ্যে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি টিকা রপ্তানি বন্ধ করেছে ভারত। অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বিদেশি টিকা আমদানিরও। এমনকি বাড়তে থাকা চাহিদা মেটাতে অক্সিজেনও আমদানি করা হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের জীব পরিসংখ্যানবিদ ভ্রমর মুখোপাধ্যায় টুইটারে জানিয়েছিলেন, যখন সংক্রমণের মাত্রা কম ছিল তখনই টিকা কর্মসূচি বাড়ানো দরকার ছিল। কিন্তু যথাসময়ে এসব পরামর্শ আমলে নেওয়া হয়নি। 

সংক্রমণ কমে আসায় সবার মধ্যে বিজয়ের উল্লাস ছিল বলে জানান পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন অব ইন্ডিয়ার সভাপতি পি শ্রীনাথ রেড্ডি। কেউ কেউ মনে করেছে আমরা হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করেছি। সবাই চেয়েছে কাজে ফিরে যেতে। বেশির ভাগের কাছে এই বিষয়টাই গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে, অল্প যা কিছু সতর্কবাণী ছিল সেসব শোনা হয়নি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তরুণ জনসংখ্যা, স্থানীয় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, বড় গ্রামীণ জনগোষ্ঠী এই ধারণাগুলোর ওপর ভিত্তি করে করোনার বিরুদ্ধে বিজয় ঘোষণা ছিল নির্মমভাবে একটি অপরিপক্ব সিদ্ধান্ত। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গণমাধ্যম ব্লুমবার্গের কলামিস্ট মিহির শর্মা বলেন, ভারতে যে বিষয়গুলো সচরাচর দেখা যায়, কর্মকর্তাদের ঔদ্ধত্য, উগ্র জাতীয়তাবাদ, জনপ্রিয়তার জন্য মুখিয়ে থাকা এবং অনেক বেশি আমলাতান্ত্রিক অযোগ্যতা, এসব মিলেই সংকট তৈরি করেছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads