• বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জৈষ্ঠ ১৪২৯
‘খালেদার জামিন কেন বাতিল নয়’

আদালত

প্রতীকী ছবি

আইন-আদালত

‘খালেদার জামিন কেন বাতিল নয়’

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০১ অক্টোবর ২০১৮

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চেয়ে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের আগামী ৭ অক্টোবর এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।

এদিকে এ মামলায় জামিনে থাকা আসামি মনিরুল ইসলাম খানের জামিন বাতিল করে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ মামলার অপর আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্নার জামিন আবেদনও নামঞ্জুর করেছেন আদালত। এ ছাড়া এই দুই আসামির আদালতের প্রতি অনাস্থার আবেদনও খারিজ করা হয়েছে। গতকাল রোববার রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত অস্থায়ী বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বিচারক মো. আখতারুজ্জামান এ আদেশ দেন।

আদেশে খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিচারের আদেশ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে যে আবেদন করা হয়েছে, সে বিষয়ে ধার্য তারিখে উচ্চ আদালতের আদেশ জমা দিতে এবং যুক্তি উপস্থাপন ছাড়াই রায় ঘোষণার দিন ধার্যের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের ওপরও আদেশের দিন ধার্য করা হয়েছে।

আদেশে আদালত খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া ও মাসুদ আহমেদ তালুকদারকে তারা খালেদা জিয়াকে ডিফেন্ড করছেন, না প্রতিনিধিত্ব করছেন (ডিফেন্ডিং অ্যান্ড রিপ্রেজেন্টেটিভ) সে বিষয়ে আগামী ৭ অক্টোবর আইনি ব্যাখ্যা দিতে বলেছেন।

গতকাল বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে কার্যক্রম শুরু হলে খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিচার করার যে আদেশ আদালত দিয়েছেন, সে বিষয়ে আমরা উচ্চ আদালতে গিয়েছি। আগামীকাল (সোমবার) উচ্চ আদালত খুলছে। তাই একটি যুক্তিসঙ্গত সময় পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম মুলতবি রাখার আবেদন করছি। এরপর আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদারও একই দাবি জানান।

আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্নার আইনজীবী আমিনুল ইসলাম আদালতে বলেন, গত ২০ সেপ্টেম্বর আদালত যে আদেশ দিয়েছেন তা যথার্থ হয়েছে কি না, সেজন্য আমরা উচ্চ আদালতে গিয়েছি। আদালতের সঙ্গে আমাদের বিরোধ নেই। আবেদন-নিবেদনে করা একটি আইনি বিষয়। ওই আবেদনের সঙ্গে জামিন বাতিলের কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে না। তিনি তার মক্কেলের জামিন আবেদন মঞ্জুর করার আবেদন করেন।

অন্যদিকে দুদকের কৌঁসুলি মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, আসামি খালেদা জিয়ার প্রতিনিধিত্ব করি এটা বলে জামিন আবেদন করতে হবে। খালেদা জিয়াকে প্রতিনিধিত্ব না করে যদি জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করা হয়, তাহলে খালেদার জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। খালেদা জিয়া নিজে আদালতে এসে বলে গেছেন, তিনি আর আদালতে আসবেন না। খালেদা জিয়া সম্মানী ব্যক্তি, তাকে তো আর জোর করে আনা সম্ভব নয়। আমি খালেদা জিয়ার জামিন বাতিল ও রায়ের তারিখ দেওয়ার জন্য আবেদন করছি। অপর দুই আসামির পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন না করায় তাদের জামিন বাতিলের আবেদন করছি। তাদের সব আবেদন না মঞ্জুর করে রায়ের তারিখ ধার্যের জন্য আবেদন করছি।

এ সময় খালেদার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, ৫৪০ ধারায় জামিন বৃদ্ধি ও প্রতিনিধিত্ব করা ভিন্ন বিষয়। আমি যতটুকু দেখেছি আমাদের দেশে এ নজির নেই।

এরপর আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার আদালতে বলেন, দুদকের পিপি মোশাররফ হোসেন কাজল আমাদের আইন শেখাচ্ছেন। তিনি (কাজল) আমাদের হাত-পা বেঁধে বিচার করতে চাচ্ছেন। কারাগারে কোনো আসামি থাকলে তার অনুপস্থিতিতে বিচার চলতে পারে না।

এরপর আদালত জানতে চান, আপনারা বলছেন, আপনারা খালেদা জিয়াকে প্রতিনিধিত্ব করেন না? আপনারা ডিফেন্ড করেন। এ দুটোর মধ্যে পার্থক্য কোথায়?

এর জবাবে মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, প্রতিনিধিত্ব আর ডিফেন্ড করা এক বিষয় নয়। আমরা খালেদা জিয়াকে প্রতিনিধিত্ব করি না। তার পক্ষে মামলা পরিচালনা করতে এসেছি। এ সময় মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, খালেদার আইনজীবীরা আইনের অপব্যাখ্যা দিচ্ছেন।

জবাবে মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল রাজনৈতিক বক্তব্য দেন। তখন মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, তিনি যদি রাজনৈতিক বক্তব্য দেন, তাহলে আর তারা (খালেদার আইনজীবীরা) কথা বলতে পারবেন না। এরপর আদালত ওই আদেশ দেন।

এর আগে গত ২৬ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়াসহ চার আসামির বিরুদ্ধে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার যুক্তি উপস্থাপন সমাপ্ত করে রায় ঘোষণার তারিখ ধার্য করার জন্য আবেদন করে দুদক। ওইদিন শুনানি শেষে ৩০ সেপ্টেম্বর আদেশের দিন ধার্য করেন আদালত।

গত ২০ সেপ্টেম্বর ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ মো. আখতারুজ্জামান খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতেই জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার বিচার চলবে বলে আদেশ দেন। গত ৫ সেপ্টেম্বর কারাগারে স্থাপিত এ আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। ওইদিন খালেদা জিয়া তার গুরুতর অসুস্থতার কথা তুলে ধরে আদালতে বলেছিলেন, আমার শারীরিক অবস্থা ভালো না। আমার হাত-পা প্যারালাইজড হয়ে যাচ্ছে। আপনাদের যা মনে চায়, যত দিন ইচ্ছা সাজা দিতে পারেন, আমি অসুস্থ, এ অবস্থায় বার বার আসতে পারব না। এখানে ন্যায়বিচার পাব না।

কুমিল্লার মামলায় জামিন শুনানি ৩ অক্টোবর

আমাদের কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, চৌদ্দগ্রামে বাসে আগুন দিয়ে আটজন হত্যা মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন শুনানি পিছিয়ে ৩ অক্টোবর ধার্য করেছেন আদালত। সরকারপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কুমিল্লার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম ও ৫ নং আমলি আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক মুহাম্মদ জালাল উদ্দিন এ দিন ধার্য করেন। আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী কাইমুল হক রিংকু। সরকারপক্ষে ছিলেন পিপি মোস্তাফিজুর রহমান লিটন।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads