• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯
বিদেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত

ছবি : সংগৃহীত

আইন-আদালত

বিদেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০২ জুলাই ২০১৯

বাংলাদেশে যেসব বিদেশি টেলিভিশন চ্যানেল দেখানো হয়, সেগুলো যাতে বিজ্ঞাপন প্রচার না করতে পারে সেজন্য গতকাল সোমবার থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা শুরু করেছে সরকার। এছাড়া কেবল অপারেটররা যাতে বিজ্ঞাপন ও অন্যান্য অনুষ্ঠান প্রচার করতে না পারে এবং টেলিভিশনের মালিকদের সংগঠনের নির্ধারণ করে দেওয়া ক্রম অনুযায়ী যেন টিভি চ্যানেল দেখানো হয়, তা নিশ্চিত করতেও ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

গতকাল সোমবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করার। যেখানে এই আইন ভঙ্গ হবে সেখানে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বাংলাদেশের স্বার্থে, বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বার্থে এবং আইনকে সমুন্নত রাখার স্বার্থে এ ব্যবস্থা নেওয়া  হয়েছে। বিদেশি টিভি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন প্রচার করলে, আমরা যে ক্রম ঠিক করে দিয়েছি তা কেবল অপারেটররা অনুসরণ না করলে এবং কেবল অপারেটররা নিজেরা বিজ্ঞাপন বা অনুষ্ঠান প্রদর্শন করলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

কেব্ল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইনে বিদেশি কোনো চ্যানেলের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন সম্প্রচার বা সঞ্চালন করলে লাইসেন্স বাতিল এবং দুই বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। ব্রিটেন, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সম্প্রচারের আগে সেসব দেশের পরিবেশকরা বিদেশি চ্যানেলের বিজ্ঞাপন ছেঁটে শুধু অনুষ্ঠান প্রচার করে। কিন্তু বাংলাদেশে তা হচ্ছিল না। বরং অনেক দেশি প্রতিষ্ঠান বিদেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন প্রচার করছিল। তাতে দেশি চ্যানেলগুলো বিজ্ঞাপন হারাচ্ছে অভিযোগ করে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন টেলিভিশন মালিকরা।

এ অবস্থায় গত এপ্রিলে তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে দুই কেব্ল অপারেটর ও পরিবেশক প্রতিষ্ঠান যাদু মিডিয়াভিশন ও নেশনওয়াইড মিডিয়া লিমিটেডকে বিজ্ঞাপন ছেঁটে বিদেশি টিভি চ্যানেল সম্প্রচারের নোটিশ দিলে দেশে ভারতীয় জি নেটওয়ার্কের পাঁচটি চ্যানেলের সম্প্রচার ২৪ ঘণ্টা বন্ধ থাকে। কেব্ল অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কোয়াব) নেতারা পরে জানান, বিজ্ঞাপন ছেঁটে বিদেশি চ্যানেল সম্প্রচারের প্রযুক্তি না থাকায় বাধ্য হয়ে তারা চ্যানেলগুলো বন্ধ রাখে।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ওই দুটি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া নোটিশের সময় গত ৩০ জুন শেষ হয়েছে। গত জানুয়ারি মাস থেকে তাদের বলা শুরু করেছি। তারা পাঁচ মাস সময় পেয়েছে, আরো সময় চায়। কিন্তু অনির্দিষ্টকাল সময় দেওয়া তো সম্ভব নয়, সেজন্য আমরা আইন প্রয়োগ করার ব্যবস্থা নিয়েছি। এছাড়া বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের মালিকদের পক্ষ থেকে সম্প্রচারের তারিখ অনুযায়ী টেলিভিশন চ্যানেলের ক্রম ঠিক করে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে বলেন, শুরুতে সরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এবং তারপরে প্রতিষ্ঠার তারিখ অনুযায়ী অন্যান্য বেসরকারি চ্যানেল দেখাতে হবে।

এসব বিষয় তদারকি করতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের পাশাপাশি বিটিভির প্রতিনিধি এবং তথ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের নজর রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিদেশি চ্যানেলে দেশি বিজ্ঞাপন দেখানো কমেছে, তবে এখনো বিদেশি বিজ্ঞাপন দেখানো হয়। আমরা বাস্তবতার নিরিখে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেব।  এজন্য লাইসেন্সও বাতিল হতে পারে।

এছাড়া মন্ত্রী জানান, শিগগিরই সংবাদপত্র ও বার্তা সংস্থার কর্মীদের বেতন বাড়াতে নবম ওয়েজবোর্ড ঘোষণা করা হবে। এ সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির প্রধান, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এর আগে বলেছিলেন, জুন মাসের মধ্যে ওয়েজবোর্ড ঘোষণার চেষ্টা করা হবে। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। তবে আমরা যত দ্রুত সম্ভব ঘোষণা করব। মোটামুটি সব কিছুই প্রস্তুত। খুঁটিনাটি দু-একটি বিষয় শেষ করেই নবম ওয়েজবোর্ড ঘোষণা করা হবে।

তবে এবারো শুধু সংবাদপত্রের জন্য নবম ওয়েজবোর্ড করা হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এখানে টেলিভিশনকে যুক্ত করার সুযোগ নেই। তবে সম্প্রচার আইন হলে সেই আইনের আলোকে টেলিভিশন সাংবাদিকরাও যাতে যথাযথ বেতনভাতা পান তা নিশ্চিতের সুযোগ তৈরি হবে। সম্প্রচার আইনের খসড়া যাচাই-বাছাইয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। ভেটিং শেষ হলেই তা মন্ত্রিসভায় তোলা হবে।

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে সরকারি কর্মচারীদের নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণার পর থেকেই নতুন বেতন কাঠামোর দাবি জানিয়ে আসছিল সাংবাদিকদের সংগঠনগুলো। এ দাবিতে তারা বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করেছেন। দীর্ঘদিন বিষয়টি ঝুলে থাকার পর আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. নিজামুল হককে প্রধান করে গত বছর ২৯ জানুয়ারি ১৩ সদস্যের নবম ওয়েজবোর্ড গঠন করা হয়। এরপর গত ১১ সেপ্টেম্বর সংবাদপত্র ও বার্তা সংস্থার কর্মীদের জন্য মূল বেতনের ৪৫ শতাংশ মহার্ঘভাতা ঘোষণা করে সরকার, যা ২০১৮ সালের ১ মার্চ থেকে কার্যকর করার কথা বলা হয়। বিচারপতি নিজামুল হক গত ৪ নভেম্বর সচিবালয়ে তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর কাছে প্রতিবেদন জমা দেন। কিন্তু সরকারের চূড়ান্ত ঘোষণার বিষয়টি এখনো ঝুলে আছে। 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads