• রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪২৯
ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হচ্ছে

প্রতীকী ছবি

আইন-আদালত

ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হচ্ছে

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৯ অক্টোবর ২০২০

সরকার ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড করতে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গতকাল বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই এ প্রস্তাব করা হচ্ছে। আগামী ১২ অক্টোবর মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই প্রস্তাব তোলা হবে।

নোয়াখালীতে বিবস্ত্র করে নির্যাতন, সিলেটের এমসি কলেজে তুলে নিয়ে ধর্ষণসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদে দেশজুড়ে বিক্ষোভের মধ্যে সরকারের এমন উদ্যোগের খবর এল।

মন্ত্রী বলেন, বর্তমান আইনের সাজায় পরিবর্তন এনে ধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে আইন সংশোধনের প্রস্তাব করা হবে।

বাংলাদেশের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন অনুযায়ী, ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। আর ধর্ষণের শিকার নারী বা শিশুর মৃত্যু হলে দোষী ব্যক্তির সর্বোচ্চ শাস্তি হবে মৃত্যুদণ্ড। এর পাশাপাশি দুই ক্ষেত্রেই অর্থদণ্ডের বিধান আছে।

এ আইনের মামলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য সাত দিন থেকে এক মাস এবং মামলা নিষ্পত্তির জন্য ১৮০ দিন (ছয় মাস) সময় বেধে দেওয়া থাকলেও ওই সময়ের মধ্যে রায় দেওয়া সম্ভব হয় না।

তা ছাড়া ধর্ষণ এবং নারী ও শিশু নির্যাতনের একেকটি ঘটনা কিছুদিন পর পর সারা দেশকে নাড়া দিয়ে গেলেও এসব ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও শাস্তির নজির কম।

ধর্ষণের বেশির ভাগ মামলা বিচারের দীর্ঘসূত্রিতায় ধামাচাপা পড়ে যায়। তা ছাড়া ঠিকমতো ডাক্তারি পরীক্ষা না হওয়া, সামাজিক জড়তা, প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপসহ নানা কারণে বিচার পাওয়া কঠিন হয়ে যায়।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, গত জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত দেশে ৮৮৯ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে ধর্ষণের পর মৃত্যু হয়েছে ৪১ জনের। আর এই আট মাসে ধর্ষণচেষ্টা ও যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ১৯২ জন নারী এবং ৯ জন নারী আত্মহত্যা করেছেন। তবে অনেক অভিযোগ থানা পর্যন্ত না পৌঁছানোয় প্রকৃত সংখ্যা আরো অনেক বেশি বলে অধিকারকর্মীদের ধারণা। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত ১৬ বছরে ধর্ষণের ঘটনায় ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টার থেকে মামলা হয়েছে ৪ হাজার ৫৪১টি। এর মধ্যে আসামির শাস্তি হয়েছে মাত্র ৬০টি ঘটনায়।

এসব কারণে ধর্ষণের অপরাধে শাস্তির মাত্রা বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ডের বিধান করার পাশাপাশি দ্রুততম সময়ে বিচার ও রায় কার্যকর করার জন্য আইন সংশোধনের দাবি রয়েছে বিভিন্ন সংগঠনের।

চলতি বছর জানুয়ারিতে শিশু ধর্ষণের ঘটনায় এক রিট মামলায় রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ।

১৬ বছর বা তার কম বয়সী শিশু ধর্ষণের শিকার হলে ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড রেখে আইন করতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না-তা জানতে চাওয়া হয়েছিল সেই রুলে। বিষয়টি এখনো নিষ্পত্তির অপেক্ষায়।

সাম্প্রতিক সময়ে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের একের পর এক ঘটনায় সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আইন সম্পাদক মোহাম্মদ ফুয়াদ হোসেন। সেখানে ধর্ষণের দ্রুত বিচারে বিশেষ আদালত গঠন এবং ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চেয়েছেন তিনি।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করার দাবিতে সমর্থন জানিয়েছেন।

গত ৭ অক্টোবর এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, এদের ছোটখাটো লঘু দণ্ড দিয়ে লাভ নেই। সর্বোচ্চ বিচারের যে দাবি উঠেছে, আমার মনে হয় এটা অযৌক্তিক নয়। এসব অপরাধীর বিরুদ্ধে সব রাজনৈতিক সামাজিক সংগঠনকে আপসহীন মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।

এদিকে দেশে সংগঠিত সাম্প্রতিক ধর্ষণের প্রতিবাদে এবং দোষীদের বিচার দাবিতে গতকাল শাহবাগে বিক্ষোভ করে নানা সংগঠন। আজ শুক্রবার বিকালে রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের সামনে মহাসমাবেশের ডাকও দেয় বাম ছাত্রসংগঠনগুলোর প্ল্যাটফর্ম ‘ধর্ষণের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে শাহবাগে ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে অবস্থান কর্মসূচি থেকে এই মহাসমাবেশের ডাক দেন এ প্ল্যাটফর্মের অন্যতম আহ্বায়ক ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অনিক রায়।

শুক্রবার একই স্থানে, একই সময়ে ‘মহাসমাবেশের’ ডাক দিয়েছে ছাত্র অধিকার পরিষদের নতুন প্ল্যাটফর্ম ‘ধর্ষণ ও নিপীড়নবিরোধী ছাত্র জনতার মঞ্চ’।

এ ছাড়া সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট শুক্রবার বিকালে সারা দেশে সব শহীদ মিনারে ধর্ষণবিরোধী সমাবেশের ডাক দিয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads