• বুধবার, ১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪২৯
রমজান হোক ইবাদতময়

প্রতীকী ছবি

বিবিধ

রমজান হোক ইবাদতময়

  • প্রকাশিত ২১ এপ্রিল ২০২১

পবিত্র মাহে রমজান। বরকতময় একটি মাস। সিয়াম-সাধনার মাস। আত্মসংযমের মাস। নিজেকে গড়ার মাস। পাপ মোচনের মাস। ইবাদতের মাস। পুণ্য হাসিলের মাস। মাহে রমজান মুমিন বান্দাদের জন্য ইবাদতের বসন্তকাল। রমজানে প্রতিটি ইবাদতের সওয়াব ৭০ গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এ মাসে যথাসাধ্য বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত করা প্রত্যেক মুসলিম ও মুমিনের উচিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘রোজা ও কোরআন কিয়ামতের দিন মানুষের জন্য সুপারিশ করবে।’ (মুসনাদে আহমাদ)

সাহরি, ইফতার ও তারাবি ছাড়াও রমজানে বিশেষ কিছু আমল করা যায়। যেন রমজান মাসের প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগানো যায়। সবার মধ্যে সেই প্রচেষ্টা থাকা উচিত। রমজানে আমরা কী কী নেক আমল করতে পারি। তা নিচে আলোচনা করা হলো :

১. তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় : রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে রমজান মাসে ঈমান ও সওয়াবের আশায় (ইবাদতের মাধ্যমে) রাত জাগরণ করবে তার অতীতের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ (মুসলিম)

২. বেশি পরিমাণে কোরআন তিলাওয়াত : রমজানে যেহেতু প্রতিটি ইবাদতের সওয়াব ৭০ গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়, তাই এ মাসে যথাসাধ্য বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত করা প্রত্যেক মুসলিম ও মুমিনের ওপর আবশ্যক। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘রোজা ও কোরআন কিয়ামতের দিন মানুষের জন্য সুপারিশ করবে।’ (মুসনাদে আহমাদ)

৩. দান-সদকা করা : এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত সাহাবি ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন মানুষের মাঝে সবচেয়ে বেশি দানশীল। আর রমজানে তাঁর বদান্যতা আরো বেড়ে যেত। (মুসলিম)

৪. রোজাদারদের ইফতার করানো : রোজাদারকে ইফতার করালে রোজার সমান সওয়াব। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, সে রোজা পালনকারীর অনুরূপ সওয়াব লাভ করবে, তবে রোজা পালনকারীর সওয়াব থেকে বিন্দুমাত্র হ্রাস করা হবে না।’ (মুসনাদে আহমাদ)

৫. বেশি বেশি দোয়া করা : মহান আল্লাহ রোজার বিধান বর্ণনা করার পর বলেছেন, ‘আমার বান্দারা যখন আমার সম্পর্কে তোমাকে প্রশ্ন করে, আমি তো কাছে আছি। প্রার্থনাকারী যখন আমার কাছে প্রার্থনা করে, আমি তার প্রার্থনায় সাড়া দিই।’ (সুরা আল-বাকারা, আয়াত-১৮৬) তাই রোজা পালনকারী আল্লাহর কাছে অধিক পরিমাণে দোয়া প্রার্থনা করবে।

৬. তাওবা করা : সর্বদা তাওবা করা ওয়াজিব, বিশেষ করে এ মাসে তো বটেই। এ মাসে তাওবার অনুকূল অবস্থা বিরাজ করে। শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়, জাহান্নাম থেকে মানুষকে মুক্তি দেওয়া হয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাস পেয়েও তার পাপ ক্ষমা করাতে পারেনি, তার নাক ধুলায় ধূসরিত হোক।’ (জামেউল উসুল)

৭. মিসওয়াক করা : মিসওয়াকের প্রতি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। হাদিসে এসেছে, ‘মিসওয়াক মুখের জন্য পবিত্রকারী এবং রবের সন্তুষ্টি আনয়নকারী।’ (ইবনে খুজাইমাহ)

৮. একে অন্যকে কোরআন শোনানো : রমজান মাসে একজন অন্যকে কোরআন শোনানো একটি উত্তম আমল। এটিকে দাওর বলা হয়। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, জিবরাইল (আ.) রমজানের রাতে মহানবী (সা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন এবং রাসুল (সা.) তাঁকে কোরআন শোনাতেন। (সহিহ বুখারি)

৯. সামর্থ্য থাকলে ওমরাহ পালন করা। এ মাসে একটি ওমরাহ পালন করলে একটি হজ্ব আদায়ের সমান সওয়াব হয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘রমজান মাসে ওমরাহ পালন করা আমার সঙ্গে হজ্ব আদায় করার সমতুল্য।’ (সহিহ বুখারি)

১০. শবেকদর তালাশ করা : রমজান মাসে এমন একটি রাত রয়েছে, যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। সবার উচিত ওই রাতের সন্ধান করা। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।’ (সুরা কদর, আয়াত-০৪)

অযথা সময় নষ্ট না করে একাগ্রচিত্তে মহান রবের ইবাদতে মনযোগী হই। তাঁর দরবারে হাজির হই। মোনাজাতে দুচোখের অশ্রু ঝরাই। তাঁকে ডাকি। হূদয় উজাড় করে। দিল থেকে। কেননা, তিনি রহিম। তিনি রাহমান। তিনি গাফফার। তিনি অবশ্যই আমাদের ডাকে সাড়া দেবেন। আমাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন। যদি তিনি ক্ষমা করে দেন, তাহলে আমরা হবো সুখী, চিরসুখী। হবো জান্নাতি। সুতরাং, এখনই সময়। মোবারকময় এ মাসে পাপ-পঙ্কিলতায় ভরা আমাদের জীবনকে ধুয়ে-মুছে সাফ করার। খোদার রহমতের চাদরে আবৃত করার। ঈমান ও আত্মবিশ্লেষণ সহকারে নিজেদের সকল কাজ-কর্মে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য প্রকাশ এবং ইবাদত-বন্দেগিতে মনোযোগী হয়ে পূর্বাপর গুনাহখাতা মাফ করানোর। আল্লাহতায়ালা সবাইকে তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক :মুস্তাকিম আল মুনতাজ

আলেম, প্রাবন্ধিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads