• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯
এমপিওভুক্তির আবেদনের কার্যক্রম শুরু আগামী সপ্তাহে

এমপিওভুক্তির দাবিতে জাতীয় পেস ক্লাবের সামনের সড়কে আমরণ অনশন করছেন শিক্ষরা। সোমবার তোলা ছবি

ছবি : বাংলাদেশের খবর

জাতীয়

এমপিওভুক্তির আবেদনের কার্যক্রম শুরু আগামী সপ্তাহে

আন্দোলন গড়াল এক মাসে

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১০ জুলাই ২০১৮

বেসরকারি স্কুল-কলেজে শিক্ষক নিয়োগে বয়সসীমা ও বদলির ব্যবস্থা থাকলেও মাদরাসা শিক্ষকদের ক্ষেত্রে তা থাকছে না। মাদরাসা শিক্ষকদের এ বাধ্যবাধকতা না রেখেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিও নীতিমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত ১৪ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে জারি করা নীতিমালায় স্কুল-কলেজের শিক্ষক নিয়োগে বয়সসীমা ৩৫ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি বদলির ব্যবস্থাও রাখা হয়। তবে মাদরাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত (মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার) করতে চূড়ান্ত করা ‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (মাদরাসা)-এর জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮’-তে বয়সসীমা ও বদলির ব্যবস্থা রাখা হয়নি।

আগের নীতিমালায় এ ধরনের বাধ্যবাধকতা না থাকলেও নতুন নীতিমালায় এমন বাধ্যবাধকতা রেখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করতে অনলাইন আবেদন কার্যক্রম আগামী সপ্তাহে শুরু হচ্ছে। এরই মধ্যে নতুন সফটওয়্যার তৈরি হয়েছে। গতকাল সোমবার এমপিও কমিটির সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন নতুন এমপিওভুক্তি-সংক্রান্ত কমিটির প্রধান মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জাভেদ আহমেদ।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ব্যানবেইস মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহর সভাপতিত্বে সভায় বুয়েটের অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জাভেদ আহমেদ প্রমুখ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক সূত্র জানায়, ফরমে ও সফটওয়্যারে এমপিও নীতিমালায় উল্লিখিত চার শর্তের আলোকে বিভিন্ন কলাম তৈরি করা হয়েছে। তাতে প্রতিষ্ঠানের বয়স, শিক্ষার্থী সংখ্যা, পাসের হার, প্রাপ্যতাসহ নানা তথ্য নেওয়া হবে। প্রতিষ্ঠানের প্রাথমিক পরিচিতি, ইআইআইএন (পরিচিতি) নম্বর, প্রথম স্বীকৃতির তারিখ, স্বীকৃতি নবায়নের তারিখ ও বোর্ডের চিঠি স্ক্যান করে দেওয়ার কলাম থাকবে।

জানতে চাইলে ব্যানবেইস মহাপরিচালক বলেন, আগামী সপ্তাহ নাগাদ আবেদন নেওয়ার প্রক্রিয়াগত কাজ শেষ করা হবে। এ লক্ষ্যে কাজ এগিয়ে চলছে। আগামী সপ্তাহ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আবেদন গ্রহণ কার্যক্রম শুরু করা হতে পারে বলেও তিনি জানান।

এমপিওভুক্তির নীতিমালা অনুযায়ী এক একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাত্র একটি স্তরে এমপিও দেওয়া হবে। অর্থাৎ কোনো প্রতিষ্ঠান ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত হলে সেখানে নিম্ন মাধ্যমিক (অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত) অথবা মাধ্যমিক (নবম-দশম) যেকোনো একটি স্তরে এমপিওভুক্ত করা হবে। সফটওয়্যার সেভাবে তৈরি হচ্ছে। গত বুধবার এ-সংক্রান্ত কমিটির বৈঠকে এমপিও আবেদন কাঠামো চূড়ান্ত হয়। ওই কাঠামোর আলোকে অনলাইনে আবেদন নেওয়ার লক্ষ্যে একটি সফটওয়্যারও তৈরি করা হয়েছে। সফটওয়্যার চূড়ান্ত করতে গতকাল সোমবার ফের বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই সফটওয়্যারেই এমপিওভুক্তির আবেদন নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বিদ্যালয়) জাবেদ আহমেদ বলেন, নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন গ্রহণের সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। এ-সংক্রান্ত সফটওয়্যার প্রস্তুত করা হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকলেও প্রথম পর্যায়ে মাত্র এক হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হবে। তার মধ্যে নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ে ৪০০, স্কুল অ্যান্ড কলেজ ১০, কলেজ ৭৫, ভোকেশনাল স্কুল ও কলেজ ৩০০, মাদরাসা ১০০ এবং ১১৫টি বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজ রয়েছে।

এদিকে, নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির দাবিতে শিক্ষক-কর্মচারীরা গত এক মাস ধরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আন্দোলন করছেন। এর মধ্যে গত ১৪ দিন ধরে আমরণ অনশন করছেন তারা। অনশন শুরুর পর শিক্ষক-কর্মচারীরা অসুস্থ হওয়া শুরু করলে তাদের স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়। এছাড়া বেশি অসুস্থদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু ২৫ দিনেও কোনো সাড়া না পেয়ে শিক্ষকরা গত বুধবার থেকে চিকিৎসা নেওয়াও বন্ধ করে দিয়েছেন। এদিকে আমরণ অনশনরত শিক্ষক-কর্মচারীদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করতে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-২ ওয়াহিদা আক্তার শনিবার দুপুরে আন্দোলনকারী সংগঠনের সভাপতিকে টেলিফোনে প্রধানমন্ত্রীর বার্তা জানান।

নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার বলেন, প্রধানমন্ত্রী এমপিওভুক্তির প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতিকে পাশ কাটিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকম কথা বলছেন। আর এখন যে নীতিমালার কথা বলা হচ্ছে তা হতাশাজনক। এ নীতিমালা অবৈধ মন্তব্য করে তিনি বলেন, এমপিওভুক্ত না হওয়ায় প্রায় ৮০ হাজার শিক্ষক মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। আমরণ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে এরই মধ্যে ২৫০ জনের বেশি শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একযোগে এমপিওভুক্তির ঘোষণা না আসা পর্যন্ত চলমান আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে জানান এ শিক্ষক নেতা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads