• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯

হজ ব্যবস্থাপনায় শেষ মুহূর্তে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে

ছবি: সংগৃহীত

জাতীয়

বদলি কোটা নিয়ে এজেন্সি-মন্ত্রণালয় মুখোমুখি

হজযাত্রায় বিশৃঙ্খলা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৮ জুলাই ২০১৮

হজ ব্যবস্থাপনায় শেষ মুহূর্তে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। হজ ফ্লাইট শুরুর চতুর্থ দিন অতিবাহিত হলেও এখনো বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের প্রায় ৮ হাজার টিকেট অবিক্রীত রয়ে গেছে। ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও হজযাত্রীরা এজন্য এজেন্সিগুলোকে দুষছে। অপরদিকে এজেন্সি মালিকরা বলছেন, অসুস্থতাসহ বিভিন্ন কারণে অনেকে হজে যেতে পারছেন না। এক্ষেত্রে বদলির (রিপ্লেসমেন্ট) সুযোগ বাড়ানোর দাবি জানান তারা।

এবার বাংলাদেশ থেকে মোট ১ লাখ ২৬ হাজার ৭৯৮ জন হজে যাওয়ার কথা রয়েছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী আগে হজযাত্রীদের বিমানের টিকেট কাটতে হবে, এরপর ভিসার জন্য আবেদন করা যাবে। বাংলাদেশ বিমান ১৮৭টি ফ্লাইটে ৬৪ হাজার ৯৬৭ হজযাত্রী ও সৌদি এয়ারলাইনস (সাউদিয়া) ৬১ হাজার ৮৩১ হজযাত্রী পরিবহন করবে। গত ১৪ জুলাই থেকে হজ ফ্লাইট শুরু হলেও বিমান জানায়, এখন পর্যন্ত ২৩ হাজার ১৯১ হজযাত্রীর অনুকূলে টিকেট কাটার প্রক্রিয়া শুরু করেনি ১৪৪টি এজেন্সি। এর মধ্যে ৫৬টি এজেন্সি তাদের হজযাত্রীদের অনুকূলে একটি পে-অর্ডারও ইস্যু করেনি। এদের হজযাত্রী রয়েছে ১২ হাজার ৯৪৯ জন। এ ছাড়া ৮৮টি এজেন্সি তাদের ২১ হাজার ১৭৯ হজযাত্রীর মধ্যে ১০ হাজার ৯৩৭ জনের জন্য টিকেট কেটেছে। বাকি ১০ হাজার ২৪২ হজযাত্রীর জন্য কোনো পে-অর্ডারও ইস্যু করেনি।

এ অবস্থায় গত সোমবার ধর্ম মন্ত্রণালয়ে ৫৬টি এজেন্সিকে তলব করা হয়। এদের মধ্যে ৪৩টি এজেন্সি শুনানিতে উপস্থিত হয়। গতকাল মঙ্গলবার দুই দফায় ৮৮টি এজেন্সির সঙ্গে বৈঠক করে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এজেন্সিগুলো ২৭ জুলাই থেকে ২ আগস্ট পর্যন্ত ফ্লাইটের ৭ হাজারেরও বেশি টিকেট এখনো কাটেনি। অথচ সৌদি সরকার আগেই ঘোষণা দিয়েছে, এ বছর কোনোভাবেই অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে না। এমন অবস্থায় হজ এজেন্সিগুলো দাবি জানায়, সরকার নির্ধারিত বদলি কোটা ৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করার। তাদের দাবি, গত বছরের মতো এবারো বদলি কোটার পরিমাণ বাড়ানো হলে সঙ্কট সৃষ্টি হবে না।

বৈঠকে হজ এজেন্সিদের সংগঠন হাবের সভাপতি আবদুস সোবহান ভূঁইয়া মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘যদি অল্প সময়ের মধ্যে রিপ্লেসমেন্টের ব্যাপারটা সমাধান করে দেন, তাহলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে টিকেটের সমস্যা সমাধান হয় যাবে। রিপ্লেসমেন্টের সুযোগ না দিলে পাঁচ থেকে সাত হাজার হজযাত্রীর কোটা পূরণ হবে না।’ এর উত্তরে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (হজ) মো. হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘রিপ্লেসমেন্ট নিয়ে আগে কোনো নীতিমালা ছিল না। এবার নীতিমালা করা হয়েছে। যা মন্ত্রিসভায় অনুমোদন করা হয়েছে। সে অনুযায়ী আগেই ৪ শতাংশ রিপ্লেসমেন্ট করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। মৃত্যু অথবা গুরুতর অসুস্থতার কারণে এ সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এখন নতুন করে রিপ্লেসমেন্ট করা জটিল ও কঠিন। নীতিমালার বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই বললেই চলে।’

এর আগের বৈঠকে রিপ্লেসমেন্ট নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ধর্ম সচিব আনিছুর রহমান বলেছিলেন, ‘এজেন্সিগুলো ভুয়া হজযাত্রী বানিয়ে রেজিস্ট্রেশন (নিবন্ধন) করেছে। এখন তাদের বিপরীতে রিপ্লেসমেন্ট চাচ্ছে।’ এ সময় উপস্থিত বেসরকারি এজেন্সিগুলো সমস্বরে এর প্রতিবাদ করে বলে, তারা এ ধরনের কোনো ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়। তখন সচিব বলেন, ‘আমরা প্রমাণ নিয়েই কথা বলছি।’

বেশ কয়েকজন হজযাত্রীর সঙ্গে কথা বলেও সচিবের এই বক্তব্যের সমর্থন পাওয়া যায়। তারা জানান, প্রতি বছরই শেষ মুহূর্তে এসে এ ধরনের জটিলতার সৃষ্টি করে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় এজেন্সিগুলো। রিপ্লেসমেন্টের সুযোগ পেলে টিকেটপ্রতি যাত্রীদের কাছ থেকে ১৫-২০ হাজার করে বাড়তি টাকা আদায় করা হয়। আর টিকেট না পাওয়া গেলে জমা দেওয়া অর্থ থেকে খরচ বাবদ মোটা অঙ্কের টাকা কেটে রাখে। অসাধু উপায়ে বাড়তি উপার্জনের জন্য হজযাত্রীদের সঙ্গে এই প্রতারণা করে থাকে এজেন্সিগুলো। এর ফলে অনেক যাত্রী নির্দিষ্ট টাকা জমা দেওয়া, কাগজপত্র সব ঠিক থাকলেও শেষ পর্যন্ত হজে যেতে পারেন না।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads