• রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪২৯
শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

বাসচাপায় রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৫ আগস্ট ২০১৮

রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী দিয়া খানম মিম ও আবদুল করিম রাজীবের মৃত্যুর প্রতিবাদে গত সাত দিন ধরে শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলনে ঢাকাসহ সারা দেশে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ায় চরম বিপাকে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে অসংখ্য যাত্রীদের গন্তব্যে যেতে। সড়কে বাস না চলায় বিকল্প যানবাহনে লাগছে অতিরিক্ত ভাড়া। অনেকে হেঁটেই যাচ্ছেন গন্তব্যে। এতে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হচ্ছে। শঙ্কায় পড়ছেন সাধারণ মানুষ।

পড়াশোনা রেখে শিক্ষার্থীরা আর কতদিন রাজপথে থাকবে। নিম্নবিত্তের খেটে খাওয়া মানুষের দিন কাটবে কীভাবে। গতকাল শনিবার ছুটির দিনে এসব ছিল ‘টক অব দ্য সিটি’। সরকার দাবি মেনে নেওয়ার পরও শিক্ষার্থীরা কেন রাজপথ ছাড়ছে না। এর পেছনে কোনো অপশক্তি রাজনৈতিক ফায়দা লুটছে কি না- এ প্রশ্নও ঘুরপাক খেয়েছে সর্বত্র।

গতকাল শনিবারও কেরানীগঞ্জের কদমতলী মোড়ে সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা গাড়ির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পরীক্ষা শুরু করায় যানশূন্য হয়ে পড়ে পুরো এলাকা। নিরাপদ সড়ক চেয়ে ওই দুই সহপাঠীর মৃত্যুর দিন ২৯ জুলাই থেকেই ঢাকায় সড়ক অবরোধ শুরু করে শিক্ষার্থীরা।

কদমতলী চৌরাস্তায় শত শত শিক্ষার্থীর অবস্থানে ঢাকা-মাওয়া-দোহার-নবাবগঞ্জ-রুহিতপুর সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শুধু  মোটরসাইকেল, সিএনজি অটোরিকশা আর ভ্যানে বাবুবাজার ব্রিজে তীব্র যানজট দেখা যায়। শিক্ষার্থীরা কাগজপত্র দেখতে থাকলে যানজটে অতিষ্ঠ এক ভ্যানচালক উচ্চকণ্ঠে বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ যামু কই, খামু কী? এই চিন্তা কারো নাই। মাইকিং করে বইলা দিলেই হয়।’ যানবাহনের কাগজপত্র পরীক্ষার ছিল মহানগরের অন্য সড়কেও। যাত্রাবাড়ী, নিউমার্কেট, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, জিগাতলা, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, আসাদগেট, মিরপুর, মিরপুর ১০ নম্বর, ফার্মগেট, বাংলামোটর, শাহবাগ, মতিঝিল, উত্তরা, টঙ্গী, গাজীপুরেও ছিল একই অবস্থা।

কদমতলী চৌরাস্তায় ছাত্রদের অবস্থানে ঢাকার বাইরে কোনো গাড়ি যেতে পারছিল না। ঢাকার ভেতরেও ঢুকতে পারছিল না কোনো গাড়ি। এতে ঢাকার বাইরে থেকে আসা যাত্রীদের কাজলায় নেমে হেঁটে যান ঢাকা। ঢাকায় যাওয়ার একমাত্র বাহন রিকশা। গুনতে হয়েছে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া। এতে ভুক্তভোগীরা বলছেন, কী অবস্থার মধ্যে পড়লাম? তারা এ অবস্থায় সরকারের নীরব ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করেন। কেউ কেউ বলেন, পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সরকারের দায়িত্ব। কিন্তু সরকার এ ক্ষেত্রে ঠুঁটো জগন্নাথের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।

গতকালও সকাল থেকেই উত্তরার আবদুল্লাহপুর থেকে বিমানবন্দর সড়কে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। এদিকে বেলা ১১টা থেকেই শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে আসাদগেট, সায়েন্সল্যাব, ফার্মগেট ও মৌচাক এলাকায় রাস্তা অবরোধ করে। তারা রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে কাগজপত্র ও চালকদের লাইসেন্স চেক করে।

মহাখালীতে বেলা ১১টার দিকে ইউনিভার্সাল মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজের কয়েকশ’ শিক্ষার্থী ইউনিফর্ম পরে অবস্থান নেয়। মিরপুর ১০ নম্বরেও শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেয়। এদিকে মিরপুর ১৪ নম্বরেও শিক্ষার্থীরা ইউনিফর্ম পরে সড়ক অবরোধ করে। সড়কে ছিল স্বল্পপরিসরে বিআরটিসি বাস।

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কথা হয় মো. আকরামের সঙ্গে। তিনি চট্টগ্রাম থেকে আসা একটি পরিবহন থেকে দনিয়ায় নেমে যাত্রাবাড়ীর দিকে হেঁটে যাচ্ছিলেন। তিনি জানান, চাকরির জন্য খুলনায় যাচ্ছেন, সেখানে বিকাল ৫টার মধ্যেই তার পৌঁছানোর কথা। কিন্তু একবারে যেতে না পেরে তিনি নেমে যাত্রাবাড়ী পার হয়ে আরো সামনে এগিয়ে মাওয়া হয়ে খুলনায় যাবেন। না পৌঁছাতে পারলে চাকরিটা হবে না। তাই তিনি এ পরিস্থিতিতে ত্যক্ত-বিরক্ত বলেও জানালেন। তিনি বললেন, বাচ্চাদের কী দোষ দেব। তাদের তো ইলমোটিভ নেই। যারা দেশের চালিকাশক্তি তাদের উচিত দ্রুত এই অবস্থার অবসান ঘটানো।

শনিরআখড়া এলাকার আরেক বাসিন্দা আফজাল। তিনি প্রতিদিন ১৫ টাকায় যাত্রাবাড়ী থেকে রামপুরায় অফিস করেন। কিন্তু গতকাল তার লেগেছে ৯০ টাকা। কীভাবে তাই জানালেন। বললেন, আমি সকাল ৮টায় বাসা থেকে বের হয়েছি। তখন দুই-একটা গাড়ি চলছিল। আমি তুরাগ বাসে উঠি। খিলগাঁও পুলিশ লাইনের সামনে এসে গাড়ির লোকজন জানায়, গাড়ি আর যাবে না। যাত্রবাড়ী থেকে রাজারবাগ পুলিশ লাইন পর্যন্ত ৮ টাকার স্থলে ভাড়া রেখেছে ২০ টাকা। সেখান থেকে রামপুরা পর্যন্ত আসতে আমার মোট খরচ হলো ৯০ টাকা। তিনি আরো বললেন, এভাবে যদি বিকালে বা সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে তাহলে অফিস শেষ করে বাসায় ফেরাও মুশকিল হয়ে যাবে। চাকরি করে যদি প্রতিদিন এত ভাড়া গুনতে হয়, তাহলে বউ-বাচ্চা নিয়ে খাব কী?

এ প্রসঙ্গে সাবেক আইজিপি মোদাব্বির হোসেন চৌধুরী বাংলাদেশের খবরকে বলেন, এটুকু নাড়া দেওয়া প্রয়োজন ছিল। এটা সরকারের বিরুদ্ধে নয়, সিস্টেমের বিরুদ্ধে। পরিবর্তনটা দরকার। তিনি আরো বলেন, সরকার দাবি মেনে নিয়েছে। এখন শিক্ষার্থীদের উচিত আন্দোলন স্থগিত করে ঘরে ফিরে যাওয়া।

ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, আন্দোলনকে রাজনৈতিকীকরণ করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের মাঝে ছদ্মবেশে অনেকে ঢুকে পড়েছে। স্কুল ড্রেস বানানোর হিড়িক পড়েছে।

গত ২৯ জুলাই রোববার দুপুরে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়। এ সময় বেশ কয়েকজন আহত হন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা ভিআইপি সড়কের উভয় পাশ অবরোধ করে রাখে। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট চালকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত ও নৌমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদসহ ৯ দফা দাবি জানায় শিক্ষার্থীরা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads