আজ ১২ ভাদ্র জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী । দিবসটি উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সব জেলায় নানা কর্মসূচি নিয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংস্থা ও সংগঠন। সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে কবির সমাধিতে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে দিবসটির কর্মসূচি পালন শুরু হবে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের পক্ষ থেকে কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা জানানো হবে।
দিবসটি উপলক্ষে দুদিনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বাংলা একাডেমি। এ ছাড়া শিল্পকলা একাডেমি, শিশু একাডেমি, নজরুল একাডেমিসহ বিভিন্ন সংগঠন পৃথক কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করবে। বিটিভির পাশাপাশি বেসরকারি চ্যানেলগুলো কবির ওপর নানা অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে। জাতীয় দৈনিকগুলো কবির ওপর বিশেষ সংবাদ ও নিবন্ধ প্রকাশ করবে।
প্রগতিশীল প্রণোদনার জন্য সর্বাধিক পরিচিত কবি কাজী নজরুল ইসলাম দ্রোহ, প্রেম, সাম্য, মানবতা ও শোষিত-বঞ্চিত মানুষের মুক্তির বার্তা নিয়ে এসেছিলেন। মূলত তিনি বিদ্রোহী কবি বলে খ্যাত। একাধারে কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, সম্পাদক এমনকি রাজনীতিবিদ ও সৈনিক হিসেবে অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন তিনি।
কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম বাংলা ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ (২৪ মে, ১৮৯৯) বর্ধমান জেলার আসানসোলের জামুরিয়া থানার চুরুলিয়া গ্রামের এক দরিদ্র মুসলিম পরিবারে। তার ডাকনাম দুখু মিয়া; প্রাথমিক শিক্ষা ছিল ধর্মীয়। বিচিত্র জীবনে স্থানীয় এক মসজিদে মুয়াজ্জিনের দায়িত্বও পালন করেন তিনি। রুটির দোকানেও কাজ করেন। ১৮ বছর বয়সে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন তিনি। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কিছুদিন কাজ করার পর সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। একসময় তিনি ব্রিটিশরাজের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সংগ্রামে অবতীর্ণ হন। এ সময় রচনা করেন ‘বিদ্রোহী’ ও ‘ভাঙার গান’ কবিতা। রচনা করেন সাময়িকী ধূমকেতু। একসময় জেলে বন্দি হন। বন্দি অবস্থায় লেখেন ‘রাজবন্দীর জবানবন্দি’।
কাজী নজরুলের লেখনী জাতীয় জীবনে অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে আসছে। তার কবিতা ও গান মানুষকে যুগে যুগে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়ে চলছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তার গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস। কাজী নজরুল ইসলাম নিজ গ্রামে মসজিদ ও স্কুলে অধ্যয়ন করেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি কবিতা ও গান লেখা শুরু করেন। নিজে বিভিন্ন আসরে গান পরিবেশন করেন। তার কবিতা ক্রমে ব্রিটিশরাজের শোষণের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদী ও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তার বিদ্রোহী কবিতায় সরাসরি ব্রিটিশরাজকে সমালোচনা করা হয়। ছোটবেলা থেকেই কবির রচনায় অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিকাশ ঘটে। তিনি বিদ্রোহী উপাধিতে ভূষিত হন। তার বই নিষিদ্ধ করেন ব্রিটিশ শাসকরা। প্রায় তিন হাজার গান রচনা করেন কাজী নজরুল। তার গানের বাণী হয়ে ওঠে মানবতাবাদ ও সাম্যবাদের পক্ষে শক্তিশালী হাতিয়ার। অসংখ্য গানের সুরারোপও করেন কবি নিজেই। পেশাগত জীবনে কবি দীর্ঘদিন সাংবাদিকতায় নিয়োজিত ছিলেন। দুটি পত্রিকা সম্পাদনা করেন।
স্বাধীনতার পরপরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তার বসবাসের ব্যবস্থা করেন। ধানমন্ডিতে কবির বসবাসের জন্য দেওয়া হয় একটি বাড়ি। মধ্য বয়সে কবি রোগাক্রান্ত হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। দীর্ঘকাল অসুস্থ থাকার পর ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট (১২ ভাদ্র) ঢাকায় মারা যান তিনি। তাকে দাফন করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে।
কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জেলা প্রশাসন, নজরুল ইনস্টিটিউট কুমিল্লা কেন্দ্র ও নজরুল পরিষদ দিনব্যাপী অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে- ‘চেতনায় নজরুল’ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ এবং নজরুল সঙ্গীত, হামদ-নাত ও আবৃত্তি, আলোচনা, দোয়া, কবিতা পাঠ ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান।