• মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪২৯
বাংলাদেশে ঢুকতে নাইক্ষ্যংদিয়া সমুদ্রপাড়ে রোহিঙ্গাদের অপেক্ষা

বাংলাদেশে ঢুকতে রোহিঙ্গাদের অপেক্ষা

সংরক্ষিত ছবি

জাতীয়

সতর্ক অবস্থায় বিজিবি

বাংলাদেশে ঢুকতে নাইক্ষ্যংদিয়া সমুদ্রপাড়ে রোহিঙ্গাদের অপেক্ষা

  • জাবেদ ইকবাল চৌধুরী, টেকনাফ
  • প্রকাশিত ২৮ আগস্ট ২০১৮

এখনো যেসব রোহিঙ্গা মুসলমান মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে অবস্থান করছে চরম আতঙ্ক-উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে তাদের। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টে শুরু হওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর সেনাবাহিনীর নৃশংসতার পরিসমাপ্তি ঘটেনি আজো। ওই রাজ্যে এখানো নিগৃহীত হচ্ছে রোহিঙ্গারা। চাষবাস তো দূরের কথা, এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্বাভাবিক চলাফেরাও বন্ধ হয়ে গেছে তাদের। নেই কাজকর্ম, দিন কাটছে সীমাহীন আর্থিক অনটনে। নিপীড়ন-নির্যাতন জমানো ধান-চাল প্রায় শেষ। এ পরিস্থিতিতে বিভিন্নভাবে বিদেশে অবস্থানরত আত্মীয়স্বজন ও মানবাধিকার সংগঠনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সহযোগিতা কামনা করেছে রাখাইনের অবশিষ্ট মুসলিম জনগোষ্ঠী। শুধু তাই নয়, নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে থাকতে হবে ক্যাম্পে— মিয়ানমারের সেনা ও উগ্র বৌদ্ধদের কণ্ঠে এমন ত্রাসের প্রেক্ষাপটে আরো নিরুপায় হয়ে পড়েছে তারা। নিজ দেশে উদ্বাস্তু হওয়ার এই আতঙ্ক তাদের বাংলাদেশমুখী করছে। ইতোমধ্যে কক্সবাজারে আসার জন্য  হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা জড়ো হয়েছে রাখাইনের মংডু শহরের দক্ষিণে নাইক্ষ্যংদিয়া সি-বিচে। রাখাইনে আবারো মুসলিমদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছে জড়ো হওয়া রোহিঙ্গারা। সৌদি আরবে অবস্থানরত রাখাইনের পাত্তরী কিল্লা গ্রামের মো. নূর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, হাজারখানেক রোহিঙ্গা গত কয়েক দিনে রাখাইনের মংডু শহরের দক্ষিণে নাইক্ষ্যংদিয়া নামক সি-বিচে অবস্থান নিয়েছে।

নাইক্ষ্যংদিয়ার কাছাকাছি রয়েছে বাংলাদেশের টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ ও সেন্টমার্টিন্স। সহজেই সাগর বা নদী পাড়ি দিয়ে তারা বাংলদেশে ঢুকে যেতে পারে।

বুথিডং এলাকার সিন্ডিপ্রাং গ্রামের মো. জোবাইর জানিয়েছেন, ওখানে খাবার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। চিকিৎসাসেবা পাওয়া যাচ্ছে না। এভাবে কিছু দিন থাকলে মৃত্যু অবধারিত। তিনি ভিডিও বার্তার মাধ্যমে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তার অভিযোগ, রাখাইনের বিভিন্ন গ্রামে যেসব রোহিঙ্গা এখনো রয়ে গেছে তাদের বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন ও দেশ ত্যাগে বল প্রয়োগ করছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে নাফ নদের মিয়ানমার সীমান্ত এলাকা নাইক্ষ্যংদিয়া চরে দু’দিন ধরে তাঁবু করে অবস্থান করছে।

স্থানীয় রোহিঙ্গাদের সূত্রে জানা যায়, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে পাহাড়ের পশ্চিম ও পূর্ব তীরের বিভিন্ন গ্রামে বসবাস করে আসছিল রোহিঙ্গারা। সেনাবাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধদের নৃশংসতার শিকার হয়ে গত বছর ২৫ আগস্টের পর থেকে রাখাইনের ঢংখালী, গর্জনদিয়া, গদুছড়া, খুইন্যাপাড়া, মন্নিপাড়া, সাইরাপাড়া, সিকদারপাড়া, ফাতনজা, কিলায় ঢং, হাচ্ছুরতা সিন্দিপ্রাং ও পুইমালীসহ তিন শতাধিক গ্রামের ৭ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। তবে সে সময় শহর এলাকায় বসবাসকারী রোহিঙ্গারা পালিয়ে না এসে সেখানেই অবস্থান করছিলেন।

কিন্তু এ বছরের ২৩ আগস্ট থেকে আলিয়ং, গুদামপাড়া, জংশং, পুইমালী ও সিন্দিপ্রাং এলাকার রোহিঙ্গাদের ওপরও মিয়ানমার সেনাবাহিনী নির্যাতন শুরু করেছে। শুধু তাই নয়, সেখানকার রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধমকিসহ তাদের বাড়ির গবাদিপশু ও গোলার ধান লুট করে নিয়ে যাওয়ার খবরও পাওয়া গেছে। পাশাপাশি ওইসব রোহিঙ্গাকে রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে যেতেও হুমকি দিচ্ছে।

মিয়ানমার সেনাদের এমন আচরণে রাখাইনে বসবাসরত অবশিষ্ট রোহিঙ্গা মুসলমান তাদের ওপর আবারো পরিকল্পিত বর্বর পাশবিক নির্যাতনের আশঙ্কা প্রকাশ করছে। রাখাইনে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের বরাত দিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা কয়েকজন রোহিঙ্গা জানান, নতুন করে শুরু হওয়া নির্যাতন ও হুমকির মুখে ইতোমধ্যে সহস্রাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে আপাতত নাইক্ষ্যংদিয়া নামক চরে জড়ো হয়েছে। গত দুই দিনে নাইক্ষ্যংদিয়ায় জড়ো হওয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যাও বাড়ছে। তারা যেকোনো মুহূর্তে বাংলাদেশে ঢুকে পড়তে পারে।

এদিকে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদ ও টেকনাফ সীমান্তে বিভিন্ন পয়েন্টে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বিশেষ করে নাফ নদে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও কোস্টগার্ডের টহল জোরদার করা হয়েছে।

টেকনাফ বিজিবি-২ ব্যাটালিয়ন অধািনায়ক লে. কর্নেল মো. আছাদুজ্জামান চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, মিয়ানমারের সীমান্তে কয়েকশ রোহিঙ্গা জড়ো হওয়ার সংবাদ বিভিন্ন মাধ্যমে এসেছে আমাদের কাছে। তবে যাতে অবৈধ অনুপ্রবেশ ঘটতে না পারে সে লক্ষ্যে সীমান্তরক্ষী বাহিনী তৎপর রয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads