• বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জৈষ্ঠ ১৪২৯
আক্রান্তের সঠিক পরিসংখ্যান নেই

বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস আজ

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস আজ

আক্রান্তের সঠিক পরিসংখ্যান নেই

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮

সচেতনতা ও সঠিক পদক্ষেপের অভাবে কমছে না জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যাও কমছে না উল্লেখযোগ্য হারে। রোগটির জীবাণুর প্রধানতম বাহক কুকুর নিধনের বদলে প্রাণিটিকে জলাতঙ্কের টিকা দেওয়া ও বেওয়ারিশ কুকুরের বাচ্চা জন্ম দেওয়া কমানোর কার্যক্রমেও প্রত্যাশিত সাফল্য নেই।

এ পরিস্থিতিতে আজ ২৮ সেপ্টেম্বর বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হবে বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘জলাতঙ্ক : অপরকে জানান জীবন বাঁচান’। জলাতঙ্কের বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়ানো, প্রতিরোধ ও নির্মূলের লক্ষ্যে ২০০৭ সাল থেকে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। দিবসটি উদযাপনে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও প্রাণিসম্পদ অধিদফতরসহ বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা দিবসটি পালন উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করেছে। ২০২১ সালের মধ্যে দেশ থেকে জলাতঙ্ক নির্মূলের লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। সংশ্লিষ্টদের মতে, নগর ও শহরের বাসিন্দারা বেওয়ারিশ কুকুরের কামড়ে জলাতঙ্কে বেশি আক্রান্ত হন। বেওয়ারিশ কুকুরের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ রাজধানীবাসীও। সরকারি হিসাব মতে, রাজধানী ও আশপাশের এলাকা থেকে দৈনিক ২০০ জন কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। দেশে জলাতঙ্ক রোগের বিষয়ে সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই।

আগে অনুমান করে বলা হতো, বছরে ৬০ হাজারের বেশি মানুষ কুকুরের কামড়ের শিকার হন এবং বছরে দুই হাজার মানুষ জলাতঙ্ক রোগে মারা যান। অন্য এক পরিসংখ্যান মতে, বছরে এখনো ৪০ হাজার মানুষ জলাতঙ্কে আক্রান্ত হন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে ৯৫ শতাংশ জলাতঙ্ক কুকুরের মাধ্যমে ছড়ায়। এ ছাড়া বিড়াল, শিয়ালের কামড় বা আঁচড়ের শিকার হয়েও মানুষ জলাতঙ্কে আক্রান্ত হন।

সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে এক সময় বেওয়ারিশ কুকুর নিধন করা হতো। পরিবেশ অধিদফতরের আইনি বাধার কারণে গত কয়েক বছর ধরে সিটি করপোরেশনগুলো কুকুর নিধন করতে পারে না। এ ছাড়া উচ্চ আদালত ২০১২ সালে এ ধরনের অমানবিক আচরণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। ২০১২ সালের জানুয়ারিতে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রণালয়ের এক অফিস আদেশের মাধ্যমেও কুকুর নিধন কার্যক্রম বন্ধ করা হয়। ওই আদেশে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় কুকুর বন্ধ্যাকরণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন কুকুর নিধন বন্ধ করে দেয়।

তখন জলাতঙ্ক রোধে বিকল্প পদ্ধতি হিসেবে বেওয়ারিশ কুকুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের কার্যক্রম নেয় সিটি করপোরেশনগুলো। এর অংশ হিসেবে কুকুরের টিকাদান (এমডিভি) কার্যক্রম শুরু হয়। এ কার্যক্রমে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য নেই বলে সমালোচনা আছে।

জাতীয় জলাতঙ্ক নির্মূল কার্যক্রমের দেওয়া তথ্য মতে, এ পর্যন্ত ৬ দশমিক ৫ লাখের বেশি কুকুরকে জলাতঙ্কের টিকা দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে তিন রাউন্ড জলাতঙ্কের টিকা দেওয়ার কার্যক্রম চলছে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক ২০১৬ সালের অক্টোবরে জানিয়েছিলেন, জলাতঙ্ক রোধে পর্যায়ক্রমে ডিএনসিসি এলাকার প্রায় ২৫ হাজার বেওয়ারিশ কুকুর বন্ধ্যাকরণ কর্মসূচি নেওয়া হবে। তার মৃত্যুর পর এ কর্মসূচি ঠিকমতো বাস্তবায়ন হচ্ছে না। তবে কার্যক্রম চলছে বলে দাবি ডিএনসিসির কয়েক কর্মকর্তার। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) স্বাস্থ্য বিভাগের দুজন ভেটেরিনারি সার্জনসহ ১০ জনের একটি টিম প্রত্যেক কর্মদিবসে কুকুর বন্ধ্যাকরণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. সানিয়া তহমিনা জানান, সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমের ফলে জলাতঙ্ক ২০০৭ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে শতকরা প্রায় ৬০ ভাগ কমেছে। আর ২০১০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত রোগীর সংখ্যা কমে ২১৪৭ থেকে ১৪৪৫ হয়েছে। ওই হাসপাতালসহ ৬৭টি জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষিত চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যান্য জনবলের মাধ্যমে বিনামূল্যে কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা ও টিকা দেওয়া হচ্ছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২ লাখ ৬৫ হাজারের বেশি রোগীকে সরকারি সেবা দেওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, ২০১০ সালের আগে প্রতিবছর প্রায় দুই হাজার মানুষ জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যেতেন। ওই বছর থেকে স্বাস্থ্য অধিদফতর, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় যৌথ উদ্যোগে জাতীয় জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণ এবং নির্মূল কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। ফলে মৃত্যুর হার আগের তুলনায় অনেক কমেছে। এখন বছরে গড়ে একশ’র মতো মানুষ জলাতঙ্কে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads