• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯
ইলিশ ধরতে প্রস্তুত জেলেরা

চাঁদপুরের বহরিয়র চর ঐলাকায় মেঘনা নদীতে জেলেরা জাল মেরামতে ব্যস্ত সময পার করছে।

ছবি : বাংলাদেশের খবর

জাতীয়

মধ্যরাতে শেষ হচ্ছে নিষেধাজ্ঞা

ইলিশ ধরতে প্রস্তুত জেলেরা

  • নাজমুল হুসাইন
  • প্রকাশিত ২৮ অক্টোবর ২০১৮

টানা ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার পর আজ মধ্যরাত থেকে ইলিশ আহরণে নদীতে নামবে জেলেরা। আহরণের পাশাপাশি পরিবহন, মজুত, বাজারজাতকরণ এবং ক্রয়-বিক্রয়ও শুরু হবে সারা দেশে। ফলে দীর্ঘ অবসর শেষে ইলিশ আহরণের জন্য প্রস্তুত ৩৭ জেলার প্রায় সাত লাখের বেশি জেলে। আর কর্মচঞ্চল হয়ে উঠবে ৩০ লাখ মানুষ, যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ইলিশ প্রক্রিয়াকরণ, পরিবহন ও বিপণনের সঙ্গে যুক্ত। ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম অর্থাৎ চলতি মাসের ৭ থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত প্রজননক্ষেত্রের ৭ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকায় সব ধরনের মাছ আহরণ, পরিবহন, মজুত, বাজারজাতকরণ এবং ক্রয়-বিক্রয় সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করেছিল সরকার। এ নিষেধাজ্ঞার সময় দেশের মাছঘাট, আড়ত, হাটবাজার, চেইনশপসহ সংশ্লিষ্ট এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানও পরিচালিত হয়।

তবে অন্যান্য বছর থেকে এ বছর ইলিশ সুরক্ষায় অভিযান ছিল বেশ ঢিলেঢালা। এ কারণে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এবার প্রচুর ইলিশ নিধন করেছে জেলেরা- সংবাদমাধ্যমগুলোয় এমন খবর এসেছে প্রতিদিনই। এ সময় বিভিন্ন এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বাসা থেকে জব্দ হয়েছে মণে মণে ইলিশ, প্রজনন এলাকার পাশে রাতে হাট-বাজারে ইলিশের রমরমা কেনাবেচা চলেছে, মোবাইলের ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করে ইলিশ বেচাসহ রাজধানীতে কাটা ইলিশ বিক্রির মতো ঘটনাও ঘটেছে।

তবে মৎস্য অধিদফতর থেকে ইলিশ রক্ষায় গঠিত কেন্দ্রীয় মনিটরিং কমিটির প্র্রধান সমন্বয়কারী মনোয়ার হোসেন বলেন, এ বছরও অভিযান আগের থেকেও কঠোর ছিল। তবে মাছের প্রচুর প্রাপ্তির কারণে জেলেরা এবার মরিয়া হয়েছিল বেশি। এজন্য তাদের সাজাও হয়েছে বেশি।

তিনি বলেন, এ বছর জেলে ছাড়াও নিষিদ্ধ ইলিশ আহরণে প্রচুর দুষ্কৃতকারী জড়িত হয়ে পড়েছিল। যাদের মধ্যে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি, মাছ ব্যবসায়ীসহ পরিবহন ও বাজারজাতকরণের সঙ্গে যুক্তরা ছিল। এ কারণে আমাদের অভিযানে অনেক বাধা এসেছে। এ বছর অভিযানে আমাদের ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রচুর কর্মকর্তা হতাহত হয়েছে। এমনকি গোলাগুলির ঘটনাও ঘটেছে কয়েকটি জায়গায়, যা অন্যান্য বছর এতটা হয়নি।

কেন্দ্রীয় মনিটরিং কমিটির তথ্যে, ২৬ অক্টোবর (নিষেধাজ্ঞার ২০ দিন) পর্যন্ত সারা দেশে ইলিশ সুরক্ষায় ১৩ হাজার ৩২৪টি অভিযান পরিচালনা করতে হয়েছে। এরমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ২ হাজার ৪৬৬টি মামলায় জেল জরিমানা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ আহরণের সময় ৩ হাজার ৮৪৯ জনকে সাজা প্রদান করা হয়েছে। এ সংখ্যা গত বছর ২২ দিনে ছিল ২ হাজার ৩৮৯ জন।

এদিকে প্রজনন মৌসুমে চলতি অর্থবছর ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধকালীন সময়ে ৭ লাখ ৭ হাজার ৮৪৭ জন জেলেকে দেওয়া হয়েছে নগদ খাদ্যসহায়তা। আর ইলিশের নিরাপদ প্রজননের জন্য গত বছর ২৭টি জেলা নিষিদ্ধের আওতায় থাকলেও এ বছর সে আওতা বাড়িয়ে করা হয় ৩৭টি। এ জন্য সরকার পরিবারপ্রতি ৪০ কেজি হারে এক মাসের জন্য ২৮ হাজার ২১৩ টন চাল বরাদ্দ দেয় বলে জানায় মৎস্য অধিদফতর।

এদিকে আজ মধ্যরাত থেকে আবারো ইলিশ আহরণে নামছে জেলেরা। ইলিশ আহরণের প্রসিদ্ধ এলাকা চাঁদপুর থেকে আমাদের প্রতিনিধি জানিয়েছেন, শনিবার দুপুরে চাঁদপুর সদর উপজেলার আনন্দ বাজার, হরিণা, বহরিয়া, লক্ষ্মীপুরসহ বেশ কয়েকটি স্থান ঘুরে দেখা যায়, জেলেরা নৌকা মেরামত কাজ শেষ করে নদীতে নামিয়েছে। কিছু জেলের ধারণা এখন আর খুব একটা ইলিশের উৎপাদন বাড়বে বলে মনে হয় না। কারণ নিষেধাজ্ঞা চলাকালে রাতের অন্ধকারে মেঘনার চরাঞ্চলে মা ইলিশ নিধন হয়েছে দেদার।

তাদের মধ্যে প্রবীণ জেলে ইমান হোসেন বেপারি বলেন, পদ্মা-মেঘনা নদীতে অনেক চর জেগেছে। নদীর নাব্য সঙ্কটের কারণে ইলিশের বিচরণ কমে যাচ্ছে। অন্যান্য প্রজাতির মাছ ধরা পড়লেও বড় সাইজের ইলিশের দেখা নেই। তারপরও ২২ দিন বেকার থাকার পর জীবন জীবিকার তাগিদে নদীতে নামবে জেলেরা।

তবে মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট নদীকেন্দ্র চাঁদপুরের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মাসুদ হোসেন খান জানিয়েছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, এ বছর ইলিশের ভরা মৌসুম কিছুটা দেরিতে এসেছিল। আমরা নিষেধাজ্ঞার সময়ও যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছি, তাতে নদীতে ইলিশের অধিক্য এখনো চলমান রয়েছে। ফলে আবারো প্রচুর ইলিশ ধরা পড়বে বলে আশা করা যায়।

আমাদের ভোলা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ২২ দিন নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরতে নদীতে নামতে প্রস্তুত ভোলার জেলেরাও। জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২২ দিন  মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীর ১৯০ কিলোমিটার এলাকায় ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিল।

এদিকে জেলায় প্রায় তিন লাখ জেলে নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে। জেলার নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা এক লাখ ২৫ হাজার। মাছ ধরা বন্ধ থাকার ২২ দিন নিবন্ধিত জেলেদের ভিজিএফ চাল দেওয়ার কথা থাকলেও জেলার অধিকাংশ জেলেই সরকারি এ সহায়তা পায়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads