• বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জৈষ্ঠ ১৪২৯
বায়োমেট্রিক ডেবিট কার্ডে বিতরণ হবে সামাজিক নিরাপত্তার অর্থ

বায়োমেট্রিক জাতীয় পরিচয়পত্র

জাতীয়

বায়োমেট্রিক ডেবিট কার্ডে বিতরণ হবে সামাজিক নিরাপত্তার অর্থ

আড়াই হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক আজ সরকারের সঙ্গে ঋণচুক্তি

  • জাহিদুল ইসলাম
  • প্রকাশিত ২৮ অক্টোবর ২০১৮

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে ২৬ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দেবে বিশ্বব্যাংক। তবে এ খাতে ব্যাপক সংস্কারের শর্তে অর্থ ছাড় করবে সংস্থাটি। ব্যাপক প্রচারণার পর অনলাইনে আবেদন আহ্বানের মাধ্যমে কর্মসূচির সুবিধাভোগী নির্বাচন করার শর্ত দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। আর সুবিধাভোগীদের মধ্যে অর্থ বিতরণে সংস্থাটি প্রচলন করতে চায় বায়োমেট্রিক ডেবিট কার্ড। এ কার্ডের মাধ্যমে অন্তত ৫০ লাখ দরিদ্র মানুষের কাছে অর্থ পৌঁছাতে আরো ৪ কোটি ডলার ব্যয় করা হবে। সব মিলে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে ৩০ কোটি ডলার দেবে বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। রাজধানীর এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে আজ এ বিষয়ে ঋণচুক্তি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্র জানায়, সামাজিক নিরাপত্তায় ২০১৪ সাল থেকে বিশ্বব্যাংকের সহায়তা চেয়ে আসছে সরকার। ইআরডির প্রস্তাব পর্যালোচনায় সংস্থাটি একটি কৌশলপত্র প্রণয়ন করেছে। এতে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বেহালদশা নিয়ে চরম হতাশা প্রকাশ করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কর্মসূচির উপকারভোগী নির্বাচনে স্বজনপ্রীতির কারণে গরিব মানুষের বরাদ্দ অর্থে ধনীরা ভাগ বসাচ্ছে। সুফলভোগী নির্বাচনে দারিদ্র্যকে প্রাধান্য না দেওয়া, প্রশাসনিক অদক্ষতা ও দায়বদ্ধতার অভাবে এ কর্মসূচি কাজে আসছে না।

বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ কার্যালয় সূত্র জানায়, ‘ক্যাশ ট্রান্সফার মডার্নাইজেশন প্রজেক্ট’ শীর্ষক প্রকল্পে ৩০ কোটি ডলার সহায়তার প্রস্তাব ইতোমধ্যেই সংস্থার বোর্ড সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সহজ শর্তে ঋণ দানে সংস্থার সহযোগী প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (আইডিএ) তহবিল থেকে আসবে এ অর্থ। সরকারের সমাজসেবা অধিদফতর ও বাংলাদেশ ডাক বিভাগ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

প্রকল্পের প্রস্তাবে বিশ্বব্যাংক বলেছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর ১ হাজার ৮৯০ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে বয়স্ক ভাতায়। বছরে ১০ হাজার টাকার কম আয় করেন এমন ৬৫ বছরের বেশি বয়সী পুরুষ ও ৬২ বছরের বেশি বয়সী নারী প্রতি মাসে ৫০০ টাকা করে ভাতা পাচ্ছেন। মোট ৩১ লাখ বয়স্ক মানুষ এ সুবিধা পাচ্ছেন। তবে এ খাতের বরাদ্দের অর্ধেকের বেশি পাচ্ছেন সম্পদশালীরা। বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ভাতা মিলে প্রায় ৩ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা বিতরণ করা হচ্ছে। দরিদ্র মানুষের হাতে এ অর্থ তুলে দিতেই প্রকল্পটি নেওয়া হচ্ছে।

বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বাংলাদেশের খবরকে বলেন, সামাজিক নিরাপত্তায় তুলনামূলক কম বরাদ্দ নিয়ে প্রয়োজনের বেশি কর্মসূচি চালু রাখা হয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এ খাতে প্রায় ১৪৫টি কর্মসূচি চালু রেখেছে। প্রয়োজন চিহ্নিত করে কর্মসূচির সংখ্যা কমিয়ে আনার কথা ছিল। এসব কর্মসূচির আওতায় প্রতিজন সুবিধাভোগী সামান্য অর্থ পেয়ে থাকেন। তিনি আরো বলেন, মাসে ৫০০ টাকায় একটি পরিবারের এখন কিছুই হয় না। তাছাড়া সুবিধাভোগী নির্বাচন ও বিতরণে দুর্নীতি রয়েই গেছে। খাদ্যভিত্তিক কর্মসূচিতে দুর্নীতির পরিমাণ অনেক বেশি। এ অবস্থায় খাদ্য সহায়তা বাদ দিয়ে সামাজিক নিরাপত্তায় অর্থ হস্তান্তরে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এক দশক ধরে ধারাবাহিক উচ্চ প্রবৃদ্ধির পরও বাংলাদেশে এখনো ২ কোটি ৮০ লাখ মানুষ চরম দরিদ্র। সরকারের অনেক কর্মসূচি সত্ত্বেও দারিদ্র্য এখনো একটি বড় ঝুঁকির নাম। দারিদ্র্য নিরসনে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ব্যাপক কর্মসূচি নেওয়া প্রয়োজন। বিশ্বব্যাংক সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় যোগ্য সুবিধাভোগী নির্বাচন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে ২৪০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। এর মাধ্যমে কোনো পক্ষপাতিত্ব ছাড়াই দরিদ্র মানুষ কর্মসূচির আওতাভুক্ত হতে পারবেন। এ অর্থ ব্যয় করে কম্পিউটার যন্ত্রাংশ ক্রয় ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

সামাজিক নিরাপত্তার অর্থ বিতরণে ব্যাংকের শাখানির্ভরতা কমিয়ে অনলাইন পরিশোধ ব্যবস্থায় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আধুনিক হস্তান্তর ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে প্রায় ৮০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। প্রকৃত সুবিধাভোগীর হাতে অর্থ পৌঁছে দিতে ডাক বিভাগের মাধ্যমে দেওয়া হবে নিরাপদ বায়োমেট্রিক ডেবিট কার্ড। এর মাধ্যমে মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে ব্যক্তি পর্যন্ত অর্থের হাতবদল পর্যবেক্ষণ করা যাবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads