• বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জৈষ্ঠ ১৪২৯
সরকারের শেষ সময় উন্নয়নে সবাইকে খুশি রাখার চেষ্টা

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

সরকারের শেষ সময় উন্নয়নে সবাইকে খুশি রাখার চেষ্টা

ফেরত পাঠানো প্রকল্পও উঠছে একনেকে

  • জাহিদুল ইসলাম
  • প্রকাশিত ৩০ অক্টোবর ২০১৮

গুলশান বনানী বারিধারা লেক উন্নয়নে ৪১৪ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয় ২০১০ সালে। তিন বছরের প্রকল্পে সাত বছরে ব্যয় হয়েছে মাত্র মাত্র ২৬০ কোটি টাকা। এ অবস্থায় বাস্তবায়নকারী সংস্থা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) প্রকল্পটির ব্যয় ৪ হাজার ৮৮৬ কোটি টাকায় উন্নীত করতে চায়। প্রায় ১১ গুণ ব্যয় বৃদ্ধির এ প্রস্তাব জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা থেকে ফেরত পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফেরত যাওয়া এ প্রকল্পের বিষয়ে একনেকের সায় পেতে নতুন করে তোড়জোড় শুরু হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানিয়েছে, আজ মঙ্গলবার অনুষ্ঠিতব্য একনেক বৈঠকে মোট ২৩ প্রকল্প উপস্থাপন করা হচ্ছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৯ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা। এ তালিকায় রাজউকের প্রকল্পটি অন্তর্ভুক্ত নেই। তালিকার বাইরের একাধিক প্রকল্প একনেক সভায় উপস্থাপন করা হতে পারে বলে জানা গেছে। সরকারের শেষ সময়ে এসে অনেকটাই বেহিসাবি প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। বাস্তবায়নের সামর্থ্য, অর্থায়নের সক্ষমতা বিচার বিশ্লেষণ না করেই প্রকল্প অনুমোদনের রেকর্ড ভেঙে গড়া হচ্ছে নতুন রেকর্ড।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সংসদ সদস্যসহ সরকারদলীয় জনপ্রতিনিধিরা সরকারের শেষ মেয়াদে এসে নিজেদের এলাকার উন্নয়নে প্রকল্প চাইছেন। অনেকেই প্রতিশ্রুতি পূরণে চাইছেন প্রকল্প। আবার নির্বাচনে ভোট চাইতেও নতুন প্রকল্প চাইছেন অনেকে। পুলিশ, শিক্ষকসহ সরকারের বিভিন্ন বাহিনী ও পেশাজীবীদের খুশি রাখতেও প্রস্তাব করা হচ্ছে বেশকিছু প্রকল্প। আর সবাইকে খুশি রাখতে অনেকটা ‘অনুরোধে ঢেঁকি গেলা’র মতো প্রকল্প অনুুমোদন করা হচ্ছে।

জানতে চাইলে পরিকল্পনা বিভাগের সচিব মো. জিয়াউল ইসলাম বলেন, প্রকল্প অনুমোদনে কিছুটা তাড়াহুড়ো আছে। সবাই ভাবছেন আগামী দুই মাসে হয়তো একনেক বৈঠক হবে না। এ ভাবনা থেকে আগেভাগেই প্রকল্পের অনুমোদন নিতে চাইছেন। তবে নির্বাচন সামনে রেখে একনেকের বৈঠক বন্ধ হবে না বলে তিনি মনে করেন। সরকারের রুটিন কাজের অংশ হিসেবে নিয়মিত একনেক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বাংলাদেশের খবরকে বলেন, প্রতিটি প্রকল্প অনুমোদনের আগে এর লাভ ও ক্ষতির বিষয়ে পর্যাপ্ত ধারণা নিতে হবে। ভাবতে হবে বিকল্প সম্পর্কেও। পরিপূর্ণ সম্ভাব্যতা যাচাই না করে অনুমোদন করা প্রকল্প পরবর্তী সময়ে হয়তো লাভজনক হিসেবে বিবেচিত হবে না। তিনি বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থ, দক্ষ জনসম্পদের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার অভাব আছে। এসব সমস্যার সমাধান না করে প্রকল্প নেওয়া হলে গুণগত বাস্তবায়ন হবে না।

আজ একনেকে উপস্থাপনের অপেক্ষায় থাকা প্রকল্পের তালিকায় ঈশ্বরদী থেকে পাবনা হয়ে ঢালারচর পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণে নেওয়া প্রকল্পের তৃতীয় সংশোধনী প্রস্তাবটি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এ প্রকল্পটিও গুলশান বনানী বারিধারা লেক উন্নয়নের মতোই এর আগে একনেক থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। ৯৮২ কোটি ৮৭ লাখ টাকার প্রকল্পটি ১ হাজার ৭৩৭ কোটি ১৮ লাখ টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব উঠলে আগের ব্যয়ে কাজ শেষ করতে ফেরত পাঠানো হয়। তবে অনুমোদিত ব্যয়ের চেয়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ৩০১ কোটি টাকার কাজ বেশি করায় পাওনা পরিশোধে প্রস্তাবটি আবারো একনেকে উপস্থাপন করা হচ্ছে।

সরকারের শেষ সময়ে অনুমোদনে তাড়াহুড়ার কারণে অনেক সময় প্রকল্পের ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে না।

অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা মাদানি অ্যাভিনিউ থেকে বালু নদ পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ এবং বালু নদ থেকে শীতলক্ষ্যা নদী পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ২৫৯ কোটি টাকা। রাজউক পূর্বাচল ৩০০ ফুট মহাসড়ক থেকে মাদানি অ্যাভিনিউ পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় হবে ৪৫৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা। রাজধানীর পূর্বদিকে সম্প্রসারণে বিশেষজ্ঞরা তাগিদ দিয়ে আসলেও গুরুত্বপূর্ণ এই দুই প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে সরকারের শেষ সময়ে।

পুলিশের কনস্টেবল থেকে উঁচু পর্যায়ের কর্মকর্তাদের আবাসন সমস্যা প্রকট। এ অবস্থায় পুলিশের আবাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন সময়ে দাবি জানিয়ে আসছেন এ বাহিনীর কর্মকর্তারা। এ চাহিদা পূরণ করতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ৯টি আবাসিক টাওয়ার নির্মাণ করা হবে। সরকারের শেষ সময়ে প্রস্তাবিত এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯২৭ কোটি টাকা। সচিবালয়ে কর্মকর্তাদের বসার স্থান নিশ্চিত করতে প্রস্তাবিত ২০তলা ভবনের ব্যয় ধরা হেয়ছে ৪২০ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads