• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯
প্রযুক্তিবান্ধব হচ্ছে গ্রন্থমেলা নকশায়ও থাকছে নতুনত্ব

প্রযুক্তিবান্ধব হচ্ছে গ্রন্থমেলা

সংরক্ষিত ছবি

জাতীয়

প্রযুক্তিবান্ধব হচ্ছে গ্রন্থমেলা নকশায়ও থাকছে নতুনত্ব

  • সোহেল অটল
  • প্রকাশিত ৩০ জানুয়ারি ২০১৯

প্রযুক্তির বহুমুখী ব্যবহার দেখা গেছে গত গ্রন্থমেলায়। তবে এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলাকে নানা দিক থেকে আধুনিক করতে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে। আয়োজক বাংলা একাডেমি তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে মেলায় আসা বইপ্রেমীদের বই ও স্টলসহ নানা তথ্য সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে। ডিজিটাল মনিটরে সারাক্ষণ প্রদর্শিত হবে বিভিন্ন তথ্য ও নির্দেশনা। এছাড়া আর্থিক লেনদেনবিষয়ক দেশে চলমান সব প্রযুক্তি ব্যবহার করে ক্রেতারা বই কেনার সুযোগ পাবেন। থাকছে জিপিএস (গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম) সুবিধাও।

এবারের মেলাকে বিন্যস্ত করা হয়েছে পাঁচটি চত্বরে। এগুলোর নামকরণ করা হয়েছে ভাষাশহীদদের নামে— সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার ও শফিউর চত্বর। সেই অনুযায়ী সাজসজ্জা চলছে। চত্বরগুলোয় থাকছে পৃথক পৃথক স্তম্ভ। তাতে ভাষাশহীদদের জীবনবৃত্তান্ত উপস্থাপিত হবে, থাকবে প্রতিকৃতি। প্রতিটি চত্বরের স্টলে রঙের ব্যবহারে থাকবে তারতম্য। লাল, সবুজ, নীল, হলুদ মেজেন্টায় সজ্জিত হবে এসব চত্বর। এর মধ্যে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণটি উৎসর্গ করা হয়েছে শহীদ বরকতের নামে।

প্রস্তুতি নিয়ে গ্রন্থমেলার সদস্য সচিব ও বাংলা একাডেমির পরিচালক ড. জালাল আহমেদ বলেন, আমরা তথ্যপ্রযুক্তিগত দিক থেকে মেলাকে একটি সমৃদ্ধ জায়গায় নিয়ে যেতে চাই। সে লক্ষ্যে মেলার নকশা, সাজসজ্জা ও অন্যান্য কার্যক্রম চলছে। প্রথমবারের মতো উন্মোচিত হবে মেলার লোগো। পাঠকের সুবিধার্থে মেলার দুই প্রবেশপথ টিএসসি ও দোয়েল চত্বরে থাকবে দুটি বিশাল মনিটর। সেই মনিটরের মাধ্যমে দর্শনার্থীরা খুঁজে পাবেন স্টল ও বইসহ মেলাবিষয়ক নানা নির্দেশনা।

তিনি বলেন, প্রথমবারের মতো মেলাকে কেন্দ্র করে খোলা হয়েছে একাডেমি থেকে আলাদা ওয়েবসাইট (.িনধ২১নড়ড়শভধরৎ.পড়স)। এ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পাঠকরা স্টলের নাম কিংবা নম্বর ব্যবহার করে জানতে পারবেন কোথায় সেটির অবস্থান।

ড. জালাল আহমেদ বলেন, শুরু থেকেই এবার বাংলা একাডেমি তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারে জোর দিচ্ছে। সে কারণে এবার মেলার স্টলের আবেদনপত্র এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে ফলাফল, লটারি, স্টল ভাড়া সবকিছুই করা হয়েছে ডিজিটাল পদ্ধতির মাধ্যমে। এবার মোট ৬৫০ ইউনিটের মেলায় ৪৫০টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। প্যাভিলিয়ন থাকছে ২৪টি।

কয়েক বছর ধরে মেলা জিপিএসের আওতায় আনার কথা বলা হলেও সেটি বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। এবার সেটা কার্যকর হতে যাচ্ছে। প্রকাশক ও পাঠকদের একটি বড় দাবি ছিল, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন পজ মেশিনের মাধ্যমে বই কেনার সুযোগ রাখা। এবার সেটির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হবে বলে মেলার একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

গতকাল মঙ্গলবার মেলার দুই প্রাঙ্গণ বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘুরে দেখা যায়, শেষ মুহূর্তের কাজ চলছে। বাঁশ ও কাঠের তৈরি কাঠামোতে সাজসজ্জার কাজ শেষের পথে। বেশকিছু স্টল ও প্যাভিলিয়নের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে। কোনো কোনো প্রকাশনী মেলায় বইও নিয়ে এসেছে।

এবারের মেলার আরেকটি বড় বিষয় নকশার নান্দনিকতা। ‘বিজয় ১৯৫২ থেকে একাত্তর : নবপর্যায়’ এই প্রতিপাদ্যে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধকে উপজীব্য করে তোলা হচ্ছে মেলা প্রাঙ্গণ।

তবে গত সপ্তাহে আয়োজনের সার্বিক অবস্থা দেখে সন্তুষ্ট হতে পারেননি সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বাবু। মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে তিনি জানিয়েছিলেন, মেলার সার্বিক প্রস্তুতিতে তিনি খুশি নন। পরে বাংলা একাডেমি থেকে আশ্বস্ত করা হয়, বাকি সময়ে যথাযথভাবে কাজ শেষ করা হবে।

আগামী ১ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমি চত্বরে অমর একুশে গ্রন্থমেলা উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেদিন তিনি ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইনটেলিজেন্স ব্রাঞ্চ : ফাদার অব দ্য নেশন শেখ মুজিবুর রহমান’-এর দ্বিতীয় ভলিউমের মোড়ক উন্মোচন করবেন। একইসঙ্গে মিসরের লেখক মুহসেন আল আরিসির ‘শেখ হাসিনা : যে রূপকথা শুধু রূপকথা নয়’ বইটিরও মোড়ক উন্মোচন করবেন।

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবিবুল্লাহ সিরাজী জানান, এবার গ্রন্থমেলা থেকে প্রতিদিন অন্তত পাঁচটি বই বেছে নেবে একাডেমি। পরে সে বইয়ের লেখককে নিয়ে আসা হবে একাডেমিতে প্রথমবারের মতো চালু করা ‘লেখক বলছি’ কর্নারে।

তিনি বলেন, মাসব্যাপী এই আয়োজনটি চলবে আমাদের। এ কর্নারে দর্শক, পাঠকরা আসবেন। লেখককে প্রশ্ন করবেন তারা।

হাবিবুল্লাহ সিরাজী বলেন, অবকাঠামোকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করতে সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছি আমরা। এবার এটাকে নতুন পর্ব বলা যেতে পারে। বায়ান্নর চেতনাকে সামনে রেখে সম্পৃক্ত করা হবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের স্বাধীনতা স্তম্ভকেও।

২০১৮ সালের মেলায় ৪ হাজার ৫৯১টি বইয়ের মধ্যে ৪৮৮টিকে মানসম্পন্ন বলেছিল বাংলা একাডেমি। সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মহাপরিচালক বলেন, মেলার বইয়ের মানের প্রশ্নে দুটি প্রতিষ্ঠান কিন্তু জড়িত। পুস্তক প্রকাশক সমিতি এবং জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি। কিন্তু দায়টা চলে আসে বাংলা একাডেমির কাঁধে। বইয়ের মানের প্রশ্নে কঠোর অবস্থানে যেতে গেলে দুই সমিতি তাদের স্বার্থরক্ষায় নানা আবদার করে বসে। স্টল বরাদ্দ নিয়েও তাদের মধ্যে একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতা রয়েছে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads