• রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

ঢিমেতালের প্রথম দিন

  • সোহেল অটল
  • প্রকাশিত ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর মেলায় ঢোকার অপেক্ষায় মানুষের জটলা— এটা অমর একুশে গ্রন্থমেলার উদ্বোধনী দিনের চিরাচরিত চিত্র। প্রতিবছরই এ চিত্র দেখা যায়। এবারো তার ব্যত্যয় ঘটেনি। গতকাল শুক্রবার বিকাল ৫টায় প্রধানমন্ত্রী মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলা উদ্বোধন এবং মেলা ত্যাগের পর অপেক্ষারত দর্শনার্থীরা হুড়মুড় করে মেলায় ঢুকে পড়েন। তবে কেনাকাটা খুব বেশি হয়নি। বেশির ভাগ মানুষই এসেছিলেন ঘুরতে। বই হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করেছেন তারা। মেলার প্রথম দিন নতুন বইও খুব বেশি আসেনি। বেশির ভাগ প্রকাশনী পুরনো বই দিয়ে মেলা শুরু করেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, দুই-এক দিনের মধ্যেই মেলায় নতুন বই আসা শুরু হবে। সেরকম প্রস্তুতিই নিয়েছেন প্রকাশকরা। সুতরাং স্টল গোছানো আর দর্শনার্থীদের এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়ানোতেই কেটেছে মেলার প্রথম দিন।

এবার অবশ্য মেলাকে অন্যরকমভাবে আবিষ্কার করছেন দর্শনার্থীরা।

স্টলে স্টলে ডিজাইনের বৈচিত্র্য। চোখ জুড়িয়ে যাওয়ার মতো পরিবেশ। চলতে ফিরতে দারুণ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন পাঠকরা। প্রতিটি স্টলের মাঝে রয়েছে চলাফেরার প্রশস্ত পথ। প্রকাশকরাও বলছেন, এবারের মেলার বিন্যাস হয়েছে পাঠকবান্ধব। আর নয়নাভিরাম এমন পরিবেশে বইপ্রেমী দর্শনার্থীরাও ঘুরে বেড়িয়েছেন স্টল থেকে স্টলে। ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের সম্মিলন ঘটিয়ে বাংলা একাডেমিকে বায়ান্নোর স্মারক আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে একাত্তরের স্মারক বিবেচনায় সাজানো হয়েছে এবারের গ্রন্থমেলাকে। সেই কারণে একুশের চেতনায় শানিত এবারের গ্রন্থমেলার প্রতিপাদ্য বিষয় নির্বাচন করা হয়েছে ‘বিজয় : ১৯৫২ থেকে ১৯৭১, নব পর্যায়’।

এর আগে শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার নেতৃত্বে সাংস্কৃতিক সংগঠন সুরের ধারা’র শিল্পীদের সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় উদ্বোধনের মূল অনুষ্ঠান। মহান ভাষা আন্দোলনের শহীদ স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয় এবং ঐতিহাসিক ভাষার গান— ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ পরিবেশন করা হয়। 

মেলা উদ্বোধনের পর অনুষ্ঠানে হাক্কানী পাবলিশার্স প্রকাশিত ঝঊঈজঊঞ উঙঈটগঊঘঞঝ ঙঋ ওঘঞঊখখওঊেঘঈঊ ইজঅঘঈঐ ঙঘ ঋঅঞঐঊজ ঙঋ ঞঐঊ ঘঅঞওঙঘ ইঅঘঅেইঅঘউঐট ঝঐঊকঐ গটঔওইটজ জঅঐগঅঘ (ঠঙখটগঊ-২, ১৯৫১-১৯৫২)-এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়। অনুষ্ঠানে মোহসেন আল-আরিশি’র আরবিতে লেখা শেখ হাসিনার জীবনীগ্রন্থ এবং বাংলা একাডেমি প্রকাশিত মোহসেন আল-আরিশি রচিত বইয়ের অনুবাদ ‘শেখ হাসিনা : যে রূপকথা শুধু রূপকথা নয়’ প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন বাংলা একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ও মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী।

আনিসুজ্জামানের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির মহাপরিচালক। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল এনডিসি। বিদেশি অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলা ভাষার প্রখ্যাত কবি শঙ্খ ঘোষ (ভারত) এবং প্রখ্যাত লেখক-সাংবাদিক ও গবেষক মোহসেন আল-আরিশি (মিসর)। প্রকাশক প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ এমপি।

গ্রন্থমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০১৮ প্রদান করা হয়। বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০১৮ পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন কাজী রোজী (কবিতা), মোহিত কামাল (কথাসাহিত্য), সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ (গবেষণা), আফসান চৌধুরী (মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গবেষণা)। অনুষ্ঠানে পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখকদের হাতে দুই লাখ টাকার চেক, ক্রেস্ট ও সম্মাননাপত্র তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

 

নতুন বই

অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৯-এর প্রথম দিনের নতুন বইয়ের বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেনি বাংলা একাডেমির জনসংযোগ বিভাগ। তবে বিভিন্ন স্টল ঘুরে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, গতকাল তাম্রলিপি থেকে বেরিয়েছে মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘নিয়ান’ ও ‘রাজাকার ইজ্জত আলীর জীবনের একদিন’ এবং অধ্যয়ন থেকে ‘টুনুর আজব কাহিনী’। সব মিলিয়ে প্রথম দিনে পাঠকসমাদৃত এই লেখকের তিনটি বইয়ের সন্ধান মিলেছে। মেলায় নতুন আসা অন্য বইগুলোর মধ্যে রয়েছে অবসর থেকে এ কে এম শাহনাওয়াজের ‘কিশোরদের বঙ্গবন্ধু’ প্রথমা থেকে হরিশংকর জলদাসের ‘সুখলতার ঘর নেই’, অন্বেষা থেকে পিয়াস মজিদের ‘কিছু হুমায়ূন’ ও কালো থেকে প্রকাশিত আবুল হোসেন আজাদের ‘পথ হারালো ফড়িং ছানা’।

আজকের অনুষ্ঠান

আজ শনিবার অমর একুশে গ্রন্থমেলার দ্বিতীয় দিন। মেলা চলবে  বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকাল ৪টায়  গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে বিজয় : ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন প্রাবন্ধিক-গবেষক আবুল মোমেন। আলোচনায় অংশ নেবেন লেখক-সাংবাদিক হারুন হাবীব, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এমরান কবির চৌধুরী এবং গবেষক মোফাকখারুল ইকবাল। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিক। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, আবৃত্তি এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads