• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯
দারিদ্র্য নিরসনে সাফল্যের পথে

দারিদ্র্য নিরসনে সাফল্যের পথে

প্রতীকী ছবি

জাতীয়

দারিদ্র্য নিরসনে সাফল্যের পথে

  • জাহিদুল ইসলাম
  • প্রকাশিত ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) ১৭ অভীষ্ট অর্জনে ১৬৯ লক্ষ্যের বিপরীতে রয়েছে ২৪১ সূচক বা নির্দেশক। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে এসডিজি-সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ তথ্য আছে মাত্র ৭০ সূচকে। তথ্যের অভাবই এসডিজি অর্জনের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ৬৩ সূচক ব্যবহার করে দুই বছরের এসডিজি বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা করেছে পরিকল্পনা কমিশন। এর মধ্যে ৩৩ সূচকের অগ্রগতি সঠিক পথে আছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এসব সূচকের লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে। বাকি সূচকে অগ্রগতি বাড়াতে নিতে হবে বাড়তি পদক্ষেপ। তবে এ সময়ে দারিদ্র্য নিরসনে ব্যাপক সাফল্য এসেছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) এসডিজি অগ্রগতি প্রতিবেদনে এসব বিষয় উঠে এসেছে। সূত্র জানায়, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনে বেশ সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদশে। চরম দারিদ্র্য ও ক্ষুধা নির্মূল, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতের অর্জন পেয়েছে প্রশংসা। শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমানো, সাক্ষরতার হার বৃদ্ধিতে প্রতিবেশী দেশগুলোর চাইতে ভালো অর্জন করেছে বাংলাদেশ। ২০৩০ সালের মধ্যে এমডিজির অর্জন টেকসই করার পাশাপাশি সব মানুষের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ২০১৬ থেকে শুরু হয়েছে এসডিজি বাস্তবায়ন। দুই বছরের মাথায় এসব লক্ষ্যের অগ্রগতি তুলে ধরতে প্রকাশ হবে প্রতিবেদনটি। আজ রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে এটি প্রকাশ করা হবে।

এসডিজি বাস্তবায়নের দুই বছরে বাংলাদেশে দারিদ্র্য নিরসনে ব্যাপক সাফল্য এসেছে বলে প্রতিবেদনটিতে উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, ২০১৭ সাল শেষে দেশে দারিদ্র্যের হার ২২ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে এসেছে। এ ছাড়া ক্ষুধা মুক্তি, সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ, গুণগত শিক্ষা, লিঙ্গসমতা, নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন, সাশ্রয়ী দূষণমুক্ত জ্বালানি, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, শিল্প উদ্ভাবন এবং অবকাঠামো, টেকসই নগর ও জনপদ, পরিমিত ভোগ ও টেকসই উৎপাদন এবং ন্যায়বিচার ও কার্যকর প্রতিষ্ঠান-সংক্রান্ত বিষয়ে কাঙ্ক্ষিত উন্নতি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

দেশে চরম দারিদ্র্য হার কমে এলেও শহর-গ্রামে দারিদ্র্য ব্যবধান এসডিজির লক্ষ্য অনুযায়ী কমেনি বলে দাবি করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের হিসাবে হতদরিদ্রের হার ১২ দশমিক ১ শতাংশে নেমে এসেছে। ২০১০ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে গ্রামীণ হতদরিদ্রের হার ২১ দশমিক ১ শতাংশ থেকে ১৪ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে আসে। এ সময়ে শহুরে দারিদ্র্য ৭ দশমিক ৭ থেকে নেমেছে ৭ দশমিক ৬ ভাগে। অর্থাৎ শহর এলাকায় দারিদ্র্য হার প্রায় একই রয়ে গেছে।

শতকরা হিসাবে অতি দারিদ্র্যের হার লক্ষ্য অনুযায়ী কমে এলেও অতিদরিদ্র মানুষের সংখ্যা আরো ধীরে কমছে। মাতৃমৃত্যুর হার কমে এলেও এসডিজির লক্ষ্য থেকে তা পিছিয়ে। সারা দেশে প্রতি লাখে মাতৃমৃত্যুর হার ১৭২ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ১০৫-এ নামিয়ে আনার লক্ষ্য রয়েছে। তবে নবজাতক ও পাঁচ বছরের কম বয়সিদের মৃত্যুহার কমছে কাঙ্ক্ষিত গতিতে।

অগ্রগতি প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম বলেন, এসডিজিতে দেওয়া অনেক সূচকের পূর্ণাঙ্গ তথ্য বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে নেই। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এ বিষয়ে কাজ করছে। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রথম এসডিজির অগ্রগতির প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। দুই বছরের অগ্রগতি প্রতিবেদনে ৬৩টি নির্দেশকের তথ্য রয়েছে। এর মধ্যে ২০টি সূচকের লক্ষ্য অর্জনে আরো গুরুত্ব দিতে হবে।

তিনি আরো বলেন, এসডিজি বাস্তবায়ন দ্রুত সূচনাকারী দেশ হিসবে বাংলাদেশ গর্ব করতে পারে। এ-সংক্রান্ত সব প্রস্তুতি কাজ শেষ করার পাশাপাশি সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় এসডিজি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। মন্ত্রণালয়ভিত্তিক লক্ষ্যমাত্রার ম্যাপিং, তথ্য-উপাত্তের ঘাটতি পূরণে প্রতিবেদন, এসডিজি পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন কাঠামো, এসডিজি অর্থায়ন কৌশল, এসডিজি বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয় বা বিভাগভিত্তিক জাতীয় কর্মপরিকল্পনাও তৈরি করা হয়েছে।

ড. শামসুল আলম আরো বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নে বড় চ্যালেঞ্জ অর্থায়ন। কারণ ২০৩০ সাল নাগাদ এসডিজির লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশে বাড়তি ৯২ হাজার ৮০০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করতে হবে। অর্থাৎ প্রতিবছর গড়ে বাড়তি বিনিয়োগ করতে হবে ৬ হাজার ৬০০ কোটি ডলার। মূলত নিজস্ব অর্থায়নের মাধ্যমেই এই বিশাল অর্থের জোগান দিতে হবে বলেও তিনি মনে করেন।

উল্লেখ্য, এমডিজির তুলনায় এসডিজির ক্ষেত্রে কিছু ভিন্ন নির্দেশক যুক্ত করা হয়েছে। যেমন, দেশে বায়ুদূষণ কত মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়েছে, ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কাজ করার ফলে অথবা অনিরাপদ পানি, স্যানিটেশনের ফলে মৃত্যুর হার কী, সে ধরনের তথ্য সন্নিবেশিত করতে হবে। শুধু দারিদ্র্য হার কমানো নয়, দারিদ্র্র্যের বহুমাত্রিকতা কমিয়ে আনতে হবে। সাধারণ মানুষের অন্তর্ভুক্তি কতটা হলো সেই তথ্য উঠে আসতে হবে। অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক সম্পর্ক উন্নয়ন, পরিবেশ উন্নয়নের বিষয়গুলোও রয়েছে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads