• রবিবার, ৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪২৯
বাড়ছে জবাবদিহিতা

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়

জাতীয়

জনপ্রশাসন

বাড়ছে জবাবদিহিতা

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

নিশ্চিত করা হচ্ছে প্রশাসনে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, ন্যায়পরায়ণতা এবং সেবাপরায়ণতা। সাধারণ মানুষ যাতে কোনো ধরনের হয়রানির স্বীকার না হয় সেজন্য জনগণের সেবক হিসেবে প্রশাসনকে গড়ে তুলতে চায় নতুন সরকার। জনপ্রশাসন শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠায় হাতে নেওয়া হয়েছে সুনির্দিষ্ট কার্যক্রম।

টানা তৃতীয় মেয়াদে রাষ্ট্র পরিচালনায় এসে আওয়ামী লীগ সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে কোনো ধরনের দীর্ঘসূত্রতা, দুর্নীতি, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা রাখতে চায় না। সরকারের চাওয়া, বিশেষভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের নানা স্তর কঠোরভাবে সঙ্কুচিত করা ও প্রশাসনকে নির্ধারিত নীতিমালা ও নির্বাহী নির্দেশাবলি বাস্তবায়নের মনোভাব সম্পন্ন করা। সূত্র বলছে, এর মাধ্যমে সরকার জনগণের আরো কাছাকাছি আসতে চায়।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগ যে ইশতেহার দেয় তাতে প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার বিষয়টি অগ্রাধিকার পায়। তাই নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় ক্ষমতাসীনদের আত্মবিশ্বাস যেমন বাড়িয়েছে তেমনি জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতাও বেড়েছে। দেশের মানুষের শিক্ষা ও আর্থসামাজিক অগ্রগতি তৈরি হয়েছে। ফলে মানুষ এখন আগের থেকে অনেক বেশি সচেতন ও দুর্নীতিবিরোধী মনোভাব লালন করছে।

এসব বিষয় বিবেচনায় সরকার মনে করছে, জনপ্রশাসনে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা আনতে হবে। প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয় থেকে মাঠ প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে সরকারের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সেবার মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে। তাদের দক্ষতা বাড়াতে হবে। কার্যত, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরাসরি তদারকিকে মাঠ প্রশাসন পরিচালিত হয়। আর মাঠ প্রশাসন সরকারের পক্ষে জনগণকে সেবা দিয়ে থাকে। উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এরই মধ্যে তার মনোভাবের কথা মন্ত্রিসভার সদস্যদেরকে জানিয়েছেন। তাদেরকে দুর্নীতি থেকে দূরে থাকতে বলেছেন। সাধারণ মানুষের সেবাকে অগ্রাধিকার দিতে বলেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অফিস করেন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, সরকারের ঘোষিত নির্বাচনী ইশতেহার আমরা সংগ্রহ করেছি। সেটি নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। আমরা যারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী তারা নতুন সরকারের মনোভাব ও অভিপ্রায় পরিপালন করতে প্রস্তুত। সে মোতাবেক একটি পলিসি তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।

সাবেক জনপ্রশাসন সচিব আলী ইমাম মজুমদার বাংলাদেশের খবরকে বলেন, জনপ্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার কথা আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনী ইশতেহারে বলেছে। এটি ইতিবাচক। প্রধানমন্ত্রী কয়েকটি ফোরামে কেমন প্রশাসন দেখতে চান তার মনোভাবও প্রকাশ করেছেন। প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে জবাবদিহিতা আনা গেলে মানুষ হয়রানিবিহীনভাবে সেবা পাবে। দুর্নীতি কমবে। অর্থের অপচয় কমবে। এর জন্য প্রশাসনে নিয়োগ, পদায়ন, পদোন্নতিতে কেবল মেধাকে প্রাধান্য দিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে প্রশাসনে যাতে রাজনীতিকরণ করা না হয়। এ ছাড়া কর্মকর্তাদের কাজে অকারণে হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে।

জনপ্রশাসনের মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, মন্ত্রণালয়ের একটি বিশদ সুপারিশ তৈরি করছে। সেটি মন্ত্রণালয়ের সচিব দেশে ফেরার পর আলোচনা করে চূড়ান্ত করা হবে। তারপর প্রতিমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করা হবে। মন্ত্রালয়ের যাচাই ও পর্যালোচনা শেষে তা সচিব কমিটিতে পাঠানো হবে। সেখানে অনুমোদন দেওয়া হলে রূপনকশাটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করা হবে। 

ওই কর্মকর্তা জানান, প্রধানমন্ত্রী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে এসে বেশকিছু দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন। সেবা প্রদানের মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নতুন সরকার প্রতিশ্রুতির কথা জানিয়েছেন।

সূত্র বলছে, রূপকল্প-২০২১ এবং ২০৪১-এর উন্নত বাংলাদেশের লক্ষ্য অর্জনে একটি দক্ষ ও জবাবদিহিতামূলক সেবামুখী প্রশাসন গড়ে তোলার লক্ষ্যে পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ গ্রহণের বিকল্প নেই। সরকারের প্রচেষ্টা, তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষতা এবং আধুনিক প্রশিক্ষণের ফলে সরকারি দফতরে কাজের দক্ষতা ও পরিধি বৃদ্ধি পেয়েছে। সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে বর্তমানে বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে অহেতুক কালক্ষেপণ এবং কাজের জটিলতা কমিয়ে বাস্তবমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য এই ধারাকে অগ্রসর করে নিতে হবে।

জানা গেছে, প্রজাতন্ত্রের কর্মবৃত্তে নিয়োগ, পদায়ন ও পদোন্নতির মাপকাঠি শুধু জ্যেষ্ঠতা নয়; যোগ্যতা, দক্ষতা, সততা, নিষ্ঠা, ন্যায়পরায়ণতা, শৃঙ্খলাবোধ এবং জনগণ ও সংবিধানের প্রতি শর্তহীন আনুগত্য বিবেচনায় রাখা হচ্ছে। এজন্য জনপ্রশাসন সংস্কারসহ প্রয়োজনীয় আইন ও বিধিমালা প্রণয়ন এবং কার্যকর করা হচ্ছে।

জানতে চাইলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এ প্রতিবেদককে গতকাল মঙ্গলবার বলেন, প্রধানমন্ত্রী এই মেয়াদে রাষ্ট্র পরিচালনায় এসেছেন বিপুল জয়ে। তিনি অতীতেও দেশের মানুষের সেবাকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। এই ধারাকে আরো জোরালো করা হবে।

সরকার মনে করছে, সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ভালো কাজের পরিবেশ, জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ও সৎভাবে সম্মানজনক জীবন ধারণের জন্য বেতনভাতা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানো হয়েছে। গত ১০ বছরের দুইবারে প্রায় সাড়ে তিন গুণ বেতন বেড়েছে সরকারি চাকরীজীদের। তারা ব্যাংক থেকে ৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত গৃহ ঋণ নিতে পারছেন। উপসচিব পদমর্যাদা পর্যন্ত সামরিক ও অসামরিক সকলে গাড়ি কেনার জন্য ৩০ লাখ টাকা সুদবিহীন ঋণ পাচ্ছেন। গাড়ি পরিচালনা বাবদ পাচ্ছেন মাসিক ৫০ হাজার টাকা। শতভাগ পেনশন সমর্পণকারী অবসরপ্রাপ্তদের মাসিক পেনশন পুনঃস্থাপন করা হচ্ছে। যারা এককালীন পেনশনের অর্থ উত্তোলন করবেন, তাদের ১৫ বছর অতিবাহিত হওয়ার পর পেনশন সুবিধা পুনঃস্থাপনের আদেশ জারি করা হয়েছে। শতভাগ পেনশন সমর্পণকারীদের মাসিক পেনশন পুনঃস্থাপন করা হয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং তাদের পরিবার এই সুবিধার আওতায় আসবে। এই বিপুল পরিমাণ সুযোগ নিশ্চিত করে সরকার এবার তাদের জনগণের সেবামুখী করতে উদ্যোগ নিচ্ছে।

জানা গেছে, সরকার জনপ্রশাসনসহ অন্য সংস্থা, ব্যাংকিং খাত, জাতীয় রাজস্ব প্রশাসন, স্বাস্থ্য খাতেও অনিয়ম ও দুর্নীতি রোধ করতে চায়।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads