নতুন কাঠামোয় ২৯৯টি সরকারি কলেজে সমন্বিত পদ সৃষ্টির (এডহক নিয়োগ) প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। শিক্ষামন্ত্রীর অনুমোদন পেলেই নতুন কাঠামো অনুযায়ী এসব কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরি আত্তীকরণের কার্যক্রম শুরু হবে। দ্রুত পদ সৃষ্টি করতেই নতুন করে এ উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর ফলে এসব কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরি আত্তীকরণের দীর্ঘসূত্রতা দূর হতে যাচ্ছে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগে সরকারিকরণ করা কলেজের পদ সৃষ্টির প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আলাদা আলাদাভাবে জনপ্রশাসন, অর্থ বিভাগের ব্যয় ব্যবস্থাপনা, বাস্তবায়ন এবং প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির সভায় পাঠানো হতো। চারটি দফতরে একটি কলেজের পদ সৃষ্টির প্রক্রিয়া শেষ করতে প্রায় সাত থেকে আট মাস সময় লাগত। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাউশির কর্মকর্তাদের মতে, সম্প্রতি সরকারিকৃত ২৯৯ কলেজের পদ সৃষ্টি করতে আগের প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হলে চার থেকে পাঁচ বছর সময় লাগবে। এই প্রক্রিয়ায় অসংখ্য শিক্ষক-কর্মচারী সরকারি হওয়ার সুবিধাবঞ্চিত হয়ে অবসরে চলে যাবেন। যে কারণে দ্রুত পদ সৃষ্টি করতে নতুন করে এ উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে পদ সৃষ্টির অনুমোদনের পর অর্থ বিভাগের ব্যয় ব্যবস্থাপনা, বাস্তবায়ন অনুবিভাগ এবং প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। পরে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় (শিক্ষা মন্ত্রণালয়) নীতিমালা অনুযায়ী শিক্ষক-কর্মচারীদের যোগ্যতা সাপেক্ষে নিয়োগ দেবে। এক্ষেত্রে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে সৃষ্ট পদের সঙ্গে জাতীয়করণ করা কলেজে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীদের কোনো সংশ্লিষ্টতা থাকবে না। পদগুলো প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে সৃষ্টি হবে। এ প্রক্রিয়ায় পদ সৃষ্টির প্রস্তাব একবারই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগএবং প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির সভায় পাঠানো হবে। ফলে কম সময়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরি আত্তীকরণ প্রক্রিয়া শেষ হবে।
এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (কলেজ) ড. মোল্লা জালাল বলেন, আত্তীকরণ করতে আগে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের তথ্য মাউশি ও মন্ত্রণালয় যাচাই-বাছাই করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হতো। পরে সেটা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় যাচাই-বাছাই করত। এতে দীর্ঘ সময় চলে যেত। এভাবে ২৯৯ কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের পদ সৃষ্টি করতে কয়েক বছর লেগে যাবে। এই জটিলতা দূর করতে দ্রুত পদ সৃষ্টিতে ঢাকার চারটি কলেজের প্রস্তাব একই কাঠামোতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। মন্ত্রণালয় সেই কাঠামো অনুমোদন দিয়েছে। ফলে নতুন কাঠামোয় পদ সৃষ্টির প্রস্তাব পাঠালেই অনুমোদন পাওয়া যাবে।
তিনি আরো বলেন, নতুন কাঠামোয় শিক্ষক নিয়োগ যথাযথ প্রক্রিয়ায় হয়েছে কি না, প্রাপ্যতা সঠিক আছে কি না এসব যাচাই করে কলেজের সভাপতির দায়িত্বে থাকা ডিসি বা ইউএনও মাউশিতে পাঠাবেন। মাউশি সার্টিফাইড (সত্যায়ন) করে মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। মন্ত্রণালয় কয়েক ধাপে সেটা যাচাই করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। তারা যাচাই করে আত্তীকরণের অনুমোদন দেবে। এতে করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে কাজের চাপ কমবে এবং দ্রুত পদ সৃষ্টি হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গত বছর সারা দেশে ২৯৯টি বেসরকারি কলেজ সরকারি করা হয়েছে। এসব কলেজে সমন্বিত পদ সৃষ্টি করতে গত বছরের ২৩ অক্টোবর ঢাকা জেলার চারটি কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের আত্তীকরণের প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গত ৭ ফেব্রুয়ারি বিষয়টি নিয়ে সভা করে। সভায় কলেজগুলোয় শিক্ষক-কর্মচারীদের আত্তীকরণ কার্যক্রম স্বচ্ছ, ত্রুটিমুক্ত এবং দ্রুত শেষ করতে সংশ্লিষ্ট কলেজের ১৫ দফা তথ্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব, যুগ্মসচিব বা অতিরিক্ত সচিবের প্রত্যয়নসহ পাঠাতে মত দিয়েছেন।
তথ্যগুলো হলো- ১. আত্তীকরণের প্রস্তাবিত পদটি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্যাটার্নভুক্ত কি না? প্যাটার্নভুক্তির সমর্থনে মন্ত্রণালয়ের প্রত্যয়ন ও পরিপত্র। ২. প্রস্তাবিত জনবলকে প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ নিষেধাজ্ঞা জারির আগে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে কি না? ৩. বিধিমোতাবেক সরকারি প্রতিনিধির উপস্থিতিতে সকলের নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে কি না? নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে কি না? প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল কি না অর্থাৎ নিয়োগ প্রক্রিয়াটি যথাযথ কি না, এ বিষয়ে প্রাশসনিক মন্ত্রণালয়ের সুস্পষ্ট প্রত্যয়ন। শিক্ষক-কর্মচারীদের নিয়োগ প্রক্রিয়া যথাযথ ছিল কি না তা যাচাই। ৪. সকল পরীক্ষার সনদ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে এনটিআরসিএ নিবন্ধন সনদ)। ৫. নিয়োগের সিদ্ধান্ত সংবলিত রেজুলেশন, ৬. নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, ৭. নিয়োগ কমিটি গঠনের রেজুলেশন, ৮. ডিজির প্রতিনিধি মনোনয়নের কপি, ৯. নিয়োগ পরীক্ষার টেবুলেশন শিট, ১০. নিয়োগ অনুমোদন সংক্রান্ত রেজুলেশন, ১১. নিয়োগপত্র, ১২. যোগদানপত্র, ১৩. এমপিও শিট, ১৪. প্রদর্শক ও কর্মচারীদের ক্ষেত্রে সনদ এবং নম্বরপত্র, ১৫. অধিভুক্তির সমর্থনে পত্র/পাঠদানের অনুমতিপত্র।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের বেসরকারি কলেজ শাখার কর্মকর্তারা এ বিষয়ে সভা করেছেন। কলেজ থেকে তথ্যগুলো সংগ্রহ করতে ‘ক’, ‘খ’ ও ‘গ’ এ তিনটি ছক তৈরি করা হয়। কলেজগুলো সরকারি হওয়ার পর থেকে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা সদরের ক্ষেত্রে ডিসি ও উপজেলার ক্ষেত্রে ইউএনও এবং সংশ্লিষ্ট কলেজের অধ্যক্ষের যৌথ স্বাক্ষরে কলেজগুলো সকল কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। তাদের যৌথ স্বাক্ষরে তথ্য পাঠানো হলে সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত হয়।
‘ক’ ছকে শিক্ষক-কর্মচারীদের পদভিত্তিক জনবল কাঠামো ২০১০ ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাটার্ন মোতাবেক প্রাপ্যতা। কর্মরত পদের সংখ্যা (এমপিও এবং নন-এমপিও)। প্রস্তাবিত পদের সংখ্যা। ‘খ’ ছকে মাউশির পাঠানো পদ সৃষ্টির প্রস্তাবের তালিকায় শিক্ষক-কর্মচারীদের নাম, পদবি, বিষয়, জন্ম তারিখ ও ইনডেক্স নম্বর। প্রাপ্ত বেতন গ্রেড ও মূল বেতন। পাঠদানের স্তর এবং অধিভুক্তির স্মারক ও তারিখ। শিক্ষাগত যোগ্যতার বিবরণ। নিয়োগ নিষেধাজ্ঞার তারিখ। প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের তারিখ। বর্তমান প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের তারিখ। এমপিওভুক্তির তারিখ। সংশ্লিষ্ট পদে নিয়োগ প্রক্রিয়াটি যথাযথ ছিল কি না? পরিদর্শনের সময়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ও কর্মচারীদের কাম্য শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল কি না? পদটি ওই প্রতিষ্ঠানের প্যাটার্নভুক্ত কি না? শিক্ষক-কর্মচারীরা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নেই মর্মে প্রতিবেদন দিতে হবে। ‘গ’ ছকে শিক্ষক-কর্মচারীদের নাম ও বর্তমান কর্মস্থল, পদবি ও বিষয় উল্লেখ করতে হবে। প্রতি মাসের ১৫ তারিখ এবং ৩০ তারিখের মধ্যে অন্তত ১৮টি কলেজের পদ সৃষ্টির প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে মাউশিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
