• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯
দাম না পেয়ে ধানক্ষেতে আগুন দিলেন কৃষক

মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সর্বস্ব বিনিয়োগ করে কৃষক ফসল ফলান। কিন্তু মৌসুম শেষে যখন পরিশ্রম আর বিনিয়োগের সঙ্গে প্রাপ্তির হিসাব মেলাতে পারেন না, তখন আগুন চড়ে মাথায়। ধানের উপযুক্ত মূল্য না পেয়ে তাই টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার বানকিনা গ্রামের কৃষক আবদুল মালেক শিকদার আগুন ধরিয়ে দিলেন নিজের ক্ষেতে

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

দাম না পেয়ে ধানক্ষেতে আগুন দিলেন কৃষক

  • টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১৩ মে ২০১৯

টাঙ্গাইলে প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকায়। আর একজন শ্রমিকের দিনমজুরি ৮৫০ টাকা। এতে প্রতি মণ ধানে কৃষককে লোকসান গুনতে হচ্ছে।  এ অবস্থায়  ধানের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে পাকা এ ফসলের ক্ষেতে আগুন দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার পাইকড়া গ্রামের আবদুল মালেক সিকদার নামে এক কৃষক। গতকাল রোববার দুপুরে উপজেলার পাইকড়া ইউনিয়নের বানকিনা এলাকায় আবদুল মালেক তার নিজের ধানক্ষেতে পেট্রল দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন।

তার অভিনব প্রতিবাদ দেখে ছুটে আসেন এলাকার লোকজন। তারাও ধানের ন্যায্য মূল্য না আবদুল মালেকের মতো কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

এ বিষয়ে আবদুল মালেক বলেন, প্রতি মণ ধানের দাম থেকে প্রতি শ্রমিকের মজুরির দাম দ্বিগুণ।এবার ধান আবাদ করে আমরা মাঠে মারা পড়েছি। তাই মনের দুঃখে পাকা ধানে আগুন দিয়েছি।

তিনি বলেন, মণপ্রতি ধান কিনতে ৫০০ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। ধান কাটতে দিনমজুরকে দিতে হচ্ছে প্রায় এক হাজার টাকা মণপ্রতি। এরপরও ধান ঘরে তুলতে আরো খরচ। অন্যদিকে বেশি মজুরি হলেও কামলা পাওয়া যায় না। ক্ষেতে ধান পাকলেও তা ঘরে তুলতে পারছি না। তাই এক দাগের ৫৬ শতাংশ ধানে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছি।

টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গাইল সদরসহ ১২টি উপজেলায় এবার বোরো ধানের আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার ৭০২ হেক্টর জমিতে। গত বছরের তুলনায় এ বছর বাম্পার ফলন হয়েছে।

এ পর্যন্ত জেলায় প্রায় ৩০ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে। বাকি ৭০ শতাংশ কিন্তু ধান পেকে গেলেও কৃষক দিনমজুরের অভাবে ঘরে তুলতে পারছে না। দিনপ্রতি একজন দিনমজুরকে দিতে হয় ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা। বর্তমান বাজারে ধানের মূল্য ৫০০ টাকা মণ। এতে প্রায় দুই মণ ধান বিক্রি করে কৃষক একজন দিনমজুরকে  মজুরি দিতে হচ্ছে। আবার অধিক মজুরি দিয়েও দিনমজুর পাচ্ছেন না কৃষকরা। ফলে জমিতে পড়েই নষ্ট হচ্ছে পাকা ধান।

কালিহাতীর আউলটিয়া গ্রামের মিজানুর রহমান মজনু নামের আরেক কৃষক তার ক্ষেতের পাকা ধান এলাকাবাসীকে বিনা মূল্যে দিয়ে দিয়েছেন। এলাকাবাসী ধান কেটে অর্ধেক অংশ নিজে এবং বাকি অর্ধেক অংশ ক্ষেত মালিককে দিয়ে দিচ্ছেন।

জেলার মির্জাপুরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেখানে প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ টাকায়। অথচ শ্রমিকের মজুরি ৯০০-১০০০ টাকা পর্যন্ত গুনতে হচ্ছে।

রকিবুল ইসলাম নামের এক চাষি বলেন, বীজতলা থেকে শুরু করে প্রতি মণ ধান ঘরে তুলতে হাজার টাকার ওপরে খরচ হয়। কিন্তু ধান বিক্রি করছি তার অর্ধেক দামে। এবার আমরা পথে বসে গেছি।

কৃষককে ধানের ন্যায্য দাম দিয়ে বাঁচাতে হলে সরকারের সুদৃষ্টি প্রয়োজন বলেও জানান কয়েকজন কৃষক।

কৃষি নিয়ে কাজ করা এনজিও কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, বর্তমানে কৃষকদের অবস্থায় খুবই শোচনীয়। লাভতো দূরের কথা, ধান চাষ করে কৃষকদের উল্টো আর্থিকভাবে বড় আকারে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হচ্ছে। বিষয়টি সরকারের বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত।

আবদুল মালেকের ক্ষেতে আগুন দেওয়ার বিষয়ে পাইকড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজাদ হোসেন বলেন, এটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক ঘটনা। কৃষকদের ধানের ন্যায্য মূল্য দেওয়া উচিত। কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হলে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. আবদুর রাজ্জাক বলেন, এই সময়ে ধানের বাজার কিছুটা কম থাকলেও কৃষক যদি ধান সংরক্ষণ করে রাখে তবে কয়েকদিন পরই অধিক মূল্য পাবে।

তাপদাহসহ নানা কারণে কিছুটা শ্রমিক সংকট থাকলেও তা তীব্র নয়। জেলায় গত বছরের তুলনায় এবার ব্যাপক পরিমাণ বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ১ লাখ ৭১ হাজার ৭০২ হেক্টরের ধানের প্রায় ৩০ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়ে গেছে। তবে শ্রমিকদের অধিক মজুরি দিতে হয় এটা সত্য।

কালিহাতী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ এম শহীদুল ইসলাম জানান, প্রতি বিঘা জমিতে ধানের উৎপাদন খরচ ১৩ থেকে ১৪ হাজার টাকা। আর ধানের বর্তমান বাজার মূল্যে প্রতি বিঘায় ২ থেকে ৩ হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে কৃষকের। এমতাবস্থায় সরকারকে কৃষিকাজে যান্ত্রিকীকরণ ও ভর্তুকির পরিমাণ বাড়ানো প্রয়োজন। তবেই কৃষক উপকৃত হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads