• বৃহস্পতিবার, ৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪২৯
জেলে পরিবারে শুরু হয়েছে হাহাকার

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

মাছ ধরায় ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা

জেলে পরিবারে শুরু হয়েছে হাহাকার

  • বরগুনা (সদর) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২৯ মে ২০১৯

ইলিশের ভরা মৌসুমেও মাছ ধরতে পারছেন না জেলেরা। সাগরে মাছ ধরার ওপর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে জেলে নুর মোহাম্মদ তার ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, ‘৬৫ দিন মাছ না ধরলে খামু কী? মাইয়া-পোয়া লইয়া খয়রাত (ভিক্ষা) করা লাগবে। হের চাইতে মোগো এন্ডিল (বিষ) দেউক, খাইয়া মইরা যাই।’

গত মঙ্গলবার পাথরঘাটা বিএফডিসি মৎস্য ঘাটে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

নুর মোহাম্মদ বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকারে যাওয়া ট্রলারের একজন ভাগী জেলে। তিন সন্তান, মা বাবা ও স্ত্রীকে নিয়ে সাতজনের সংসার তার। সাতজনের সংসারে তিনিই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি, যার ওপর ভর করে চলে পুরো সংসার। নিজে বিদ্যালয়ে যেতে না পারলেও ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন। ৬৫ দিন মাছ শিকার থেকে বিরত থাকলে পরিবার পরিজন নিয়ে তাকে না খেয়ে থাকতে হবে বলে জানালেন তিনি।

শুধু নুর মোহাম্মদই নন, টানা ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার ফলে হতাশার ছাপ পড়েছে উপকূলের জেলে পল্লীগুলোতে। সাগরে মাছ ধরা জেলেরা নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। ২০১৫ সালে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মৎস্য-২ (আইন) অধিশাখা দেশের সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বঙ্গোপসাগরে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সরকার। এতদিন এই নিষেধাজ্ঞার বাস্তবায়ন ছিল না। তবে এ বছর মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে এ আইনটি বাস্তবায়নে গুরুত্ব দেওয়া হয়। নির্দেশনায় ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে সব ধরনের মাছ ধরায় ব্যবহূত যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। তবে স্থানীয় নদ-নদী থেকে জেলেরা মাছ ধরতে পারবেন।

বরগুনার পাথরঘাটা বিএফডিসি মৎস্য ঘাটের জেলে আলম মোল্লা বলেন, ‘মোরা ছোডকাল হইতে মাছ ধরি। মাছ ধরা ছাড়া আর কোনও কাম শিহি নাই। অ্যাহন ৬৫ দিন মাছ না ধরতে পারলে কী করমু, কী খামু, কিছুই কইতে পারি না। সরকার মোগো লগে এরহম হরলে মোরা যামু কই?’

এই ঘাটেই কথা হয় আব্বাস, আউয়াল, মোকছেল, মহিউদ্দিনসহ একাধিক জেলের সঙ্গে। তারা জানান, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা তাদের জন্য একরকম মরণ ফাঁদ। এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে জেলেদের মাছ ধরা নিশ্চিত না করলে উপকূলের জেলে পল্লীগুলোতে হাহাকার শুরু হবে। জেলেরা আরো জানান, প্রথমে ৮ মাস জাটকা ধরা নিষেধ, পরে ২২ দিন মা ইলিশ শিকারের ওপর নিষেধাজ্ঞা, এরপর বিভিন্ন সময় ইলিশের অভয়াশ্রমগুলোতে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এখন আবার শুরু হয়েছে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা। বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আবুল হোসেন বলেন, ‘জেলেদের ওপর এরকম জুলুম আল্লাহ সহ্য করবেন না। মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না হলে আমরা কঠোর আন্দোলনে যাব।’ বাংলাদেশ ফিশিং বোট মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, ‘সরকার সারাবছর নিষেধাজ্ঞা দেয়, আমরা কিছু বলি না। কিন্তু এবার ইলিশের ভরা মৌসুমে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় জেলেরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। উপকূলীয় জেলেদের যৌক্তিক দাবি এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা। জেলেদের দাবি মানা না হলে আন্দোলনে নামার বিষয়ে জোর দেন তিনি।

তবে বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদের দাবি, নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর জেলেরা আরো বেশি বেশি ইলিশ শিকার করতে পারবেন। তিনি বলেন, ‘সময় দেওয়া হলে কয়েকগুণ ইলিশ বেশি উৎপাদন হবে। এতে জেলেরাই লাভবান হবেন।’ তিনি জানান, ২০১৫ সালে আইনটি পাস হলেও প্রথম দিকে শুধু চট্টগ্রামের বড় বড় ফিশিং জাহাজের জন্য তা কার্যকর ছিল। এ বছর গোটা উপকূলীয় জেলেদের ওপর বঙ্গোপসাগরে ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads