• বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জৈষ্ঠ ১৪২৯
রাখাইনকে অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব নাকচ

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

রাখাইনকে অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব নাকচ

  • বাসস
  • প্রকাশিত ০৯ জুলাই ২০১৯

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা রাখাইন চাই না। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যকে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসম্যানের প্রস্তাব প্রসঙ্গে এ কথা বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, আমরা ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গকিলোমিটার নিয়েই খুশি। মিয়ানমার তার সার্বভৌমত্ব নিয়ে থাকবে। আমরা আমাদেরটা নিয়ে থাকব। গতকাল সোমবার বিকালে গণভবনে চীন সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। রাখাইন মিয়ানমারের অংশ। আমরা এটা চাই না। সেখানে বাংলাদেশের সঙ্গে রাখাইনকে জুড়ে দিতে চায় কেন? কোনো বড় দেশের কংগ্রেসম্যান হয়তো ভুলে গেছেন তাদের অতীত। তাদের দেশে গৃহযুদ্ধ লেগেই থাকত। রাখাইনে সারাক্ষণ গোলযোগ লেগেই থাকে। আমরা গোলযোগপূর্ণ অংশ কেন নেব? এটা কোনোদিনই করব না।

মিয়ানমার আমাদের প্রতিবেশী দেশ। সেখানে যখন এ ধরনের একটা ঘটনা ঘটেছে, সেখানকার লোকজন আমাদের কাছে আশ্রয় চেয়েছে, মানবিক কারণে আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছি। আশ্রয় দেওয়ার অর্থ এটা নয়, আমরা তাদের রাষ্ট্রের একটা অংশ নিয়ে চলে আসব। এই মানসিকতা আমাদের নেই। এটা আমরা চাই না। আমি চাই প্রত্যেকটা দেশ তাদের সার্বভৌমত্ব নিয়ে থাকবে। প্রতিবেশীদের সঙ্গে আমরা শান্তি চাই। যুক্তরাষ্ট্র যেখানেই সমস্যা সমাধানের মোড়লগিরি করেছে, সেখানেই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের সৃষ্টি হয়েছে। রাখাইনকে জুড়ে দেওয়ার পরামর্শ না দিয়ে মিয়ানমার কীভাবে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে, সে বিষয়ে কাজ করতে যুক্তরাষ্ট্রকে তাগিদ দেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ধর্ষণ প্রতিরোধে পুরুষদের সোচ্চার হতে হবে। এ ব্যাপারে কি কেবল নারীরাই চিৎকার করে যাবে? পুরুষদেরও সোচ্চার হওয়া উচিত। ধর্ষণ প্রতিরোধে যা যা করণীয় বা প্রয়োজনে আরো কঠোর পদক্ষেপ নিতে হলে সরকার তা-ই করবে। ধর্ষকদের শাস্তি দিতেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে। দুর্ভাগ্য হচ্ছে, ধর্ষণ সব সময় সব দেশে আছে। তবে এখন মেয়েরা সাহস করে কথাটা বলে। একটা সময় সামাজিক লজ্জার কারণে তা বলতে পারত না।

সম্প্রতি রাজধানীর ওয়ারীতে ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হওয়া শিশু সায়মার কথা উল্লেখ করে বলেন, অপরাধীকে পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে গ্রেপ্তার করেছে এবং সে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে। ধর্ষণের মতো জঘন্য কাজ যারা করে, তারা মানুষ না। সরকার অপরাধীদের বিরুদ্ধে সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নিচ্ছে। ধর্ষণ রোধে পুরুষদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধর্ষণটা তো পুরুষ সমাজ করে যাচ্ছে। এটা রোধে পুরুষদেরও আওয়াজ তোলা উচিত। নারীরা নির্যাতিত হয়ে সব চিৎকার করবে তা হয় না। আমি মনে করি, নির্যাতনকারীর স্বজাতি যারা আছে, তাদেরও এ ব্যাপারে সোচ্চার হওয়া উচিত। 

গ্যাসের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্যাস আমাদের আমদানি করতে হচ্ছে। এলএনজি আমদানিতে খরচ বেশি পড়ে। যেটুকু দাম বাড়ানো হয়েছে, তা যদি না বাড়ানো হয়, তাহলে এলএনজি আমদানি কমে যাবে। গ্যাসের দাম বাড়ানোর ফলে আন্দোলন নিয়ে বলেন, যারা বলছে ভারত কমিয়েছে, আমি তাদের উদ্দেশে জানাতে চাই, সে দেশে বছরে দুবার দাম বাড়ানো হয়। এটা তাদের নীতি। পয়লা এপ্রিল ও অক্টোবরে গিয়ে তারা গ্যাসের দাম অ্যাডজাস্ট করে। অর্থাৎ মূল্য বাড়ায়।

আমরা এলএনজি ৬১ দশমিক ১২ টাকায় এনে দিচ্ছি ৯ টাকায়। সব ট্যাক্স মওকুফ করা হয় যাতে মানুষ সহজে গ্যাস কিনতে পারে। তারপরও আন্দোলন? মজার ব্যাপার হচ্ছে, বাম আর ডান মিলে গেছে। আমরা জিডিপি ডাবল ডিজিটে নিয়ে যাব। এ জন্য আমাদের গ্যাস লাগবে। দেশে এখন লোডশেডিং নেই। মানুষ অতীতের কথা ভুলে গেছে। 

২০০৪-০৫ সালে মিয়ানমারের গ্যাস নিতে ভারত, চীন ও জাপান বিনিয়োগ করেছিল। সেই গ্যাস বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে পাইপলাইন বসিয়ে ভারত নিতে চেয়েছিল। কিন্তু খালেদা জিয়া সেটা হতে দেয়নি। আমি হলে ভারতে গ্যাস নিতে তো দিতাম-ই, আমার ভাগটাও রেখে দিতাম। আসলে নেতৃত্বের ভুল হলে এর খেসারত দিতে হয় জনগণকে। মিয়ানমার থেকে গ্যাস আমদানি করতে পারলে এই মুহূর্তে এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আনতে হতো না। ফলে গ্যাসের দামও বাড়ত না।  কিন্তু বিএনপির কারণে তা হয়নি।

তিনি আরো বলেন, ২০০০ সালে আমার কাছে প্রস্তাব ছিল গ্যাস বিক্রি করার। আমি রাজি হইনি। খালেদা জিয়া মুচলেকা দিয়েছিল গ্যাস বিক্রি করবে। যে কারণে ২০০১ সালে ভোট বেশি পেয়েও আমরা ক্ষমতায় আসতে পারিনি। আমাকে জানতে হবে গ্যাসের মজুত কত? বিক্রি করতে পারব কি-না। প্রতি ঘনমিটার এলএনজি আমদানি করতে খরচ হয় ৬১ দশমিক ১ টাকা। ভারতে গৃহস্থালির জন্য স্থানভেদে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৩০-৩৭ টাকা। বাংলাদেশে তা ১২ দশমিক ৬০ টাকা। শিল্পে গ্যাসের দাম ১০ দশমিক ৭০ টাকা, ভারতে এর দাম ৪০ থেকে ৪২ টাকা।

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর প্রসঙ্গে বলেন, এ নিয়ে আমি ইতোমধ্যে পিএসসির চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করেছি। কিন্তু এটা সম্ভব না। গত কয়েকটি বিসিএস পরীক্ষায় পাসের পরিসংখ্যান তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটু দেরি হলেও ১৬ বছরে এসএসসি, ১৮-তে ইন্টারমিডিয়েট, চার বছর অনার্স, এক বছর মাস্টার্স। সে হিসাবে ২৩-২৪ বছরে পড়াশোনা শেষ করে সরকারি চাকরিতে আবেদন করতে পারে।

কাজ করার জন্য মানুষের একটা সময় ও বয়স থাকে। একটা সময় পর তা আর হয় না। এ নিয়ে পার্লামেন্টেও একটা প্রস্তাব হয়েছে। শুধু আন্দোলন করার জন্যই যদি দাবি তোলা হয়, তাহলে কিছু বলার নেই। এ ক্ষেত্রে তারা হয়তো কোনো জায়গা থেকে সুবিধা, ভালো ভাষায় বললে অনুপ্রেরণা পাচ্ছেন কি না-তা খুঁজে দেখা দরকার। তারা আন্দোলন করেই যাবে। আন্দোলন করুক, তাতে অন্তত রাজনীতিটা শিখবে। এ সময় পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরেন তিনি।

বাংলাদেশ বিদেশি ঋণের ফাঁদে পড়বে না বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করছি। উন্নয়ন প্রকল্পগুলোও নেওয়া হচ্ছে নিজস্ব অর্থায়নে। চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক বাড়লে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো সমস্যা হবে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, জাতির পিতার দিয়ে যাওয়া পররাষ্ট্রনীতি- সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়। আমরা এ নীতি মেনে চলছি। কার সঙ্গে কার দ্বন্দ্ব, সেটা দেখার দরকার আমাদের নেই। আমার কাজের ধরনটা আলাদা। সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব রেখে চলতে চাই। দেশকে এগিয়ে নিতে কোথা থেকে সাহায্য আসবে, সুবিধা কোথায় পাব, সেটাই মূল বিষয়।

চলতি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্স নিয়ে বলেন, বাংলাদেশ খেলায় যথেষ্ট উন্নতি করেছে। বিশ্বের নামিদামি টিমের সঙ্গে খেলে হারিয়ে দিচ্ছে, কম কথা না। তাদের পারফরম্যান্স বেশ ভালো ছিল। সাকিব ও মোস্তাফিজ একটা স্থান করে নিয়েছে। খেলায় ভাগ্যও লাগে। তবে সাহস নিয়ে আমাদের ছেলেরা মোকাবেলা করেছে, এজন্য প্রশংসার দাবিদার তারা। চীন সফরেও খেলা দেখার কথা জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, বিশ্বকাপে চারটা দেশ সেমিফাইনালে উঠেছে। তাই বলে কি বাকিরা খারাপ খেলেছে? আমরা নিজেরাই নিজেদের ছোট করব কেন? জাঁদরেল দলের সঙ্গে আমাদের ছেলেরা খেলেছে, সেটাই বা কম কী?

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads