• বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪২৯
মিয়ানমারের প্রতিনিধিদের বিশ্বাস করেনি রোহিঙ্গারা

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

মিয়ানমারের প্রতিনিধিদের বিশ্বাস করেনি রোহিঙ্গারা

  • কক্সবাজার প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২৮ জুলাই ২০১৯

রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনসহ শরণার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল গতকাল শনিবার কক্সবাজার যায়। এদিন কুতুপালং এক্সটেনশন-৪ রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের পর সেখানে উভয়পক্ষে বৈঠক হয়।

বৈঠকে রোহিঙ্গা নেতারা বরাবরের মতো তাদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া তুলে ধরলে প্রতিনিধিদলের নেতা মিন্ট থোয়ে বলেন, এটি মিয়ানমার সরকার বিবেচনা করছে। আমরা আপনাদের ফিরিয়ে নিতে এসেছি। রাখাইনে আপনাদের জন্য ঘরবাড়ি, স্কুলসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আপনারা (রোহিঙ্গা) ফিরে যান। তবে তার কথায় আশ্বস্ত হতে পারেননি রোহিঙ্গা নেতারা। যদিও মিয়ানমারের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, আলোচনা অব্যাহত থাকবে।

এদিন সকাল ১০টার দিকে ১৫ সদস্যের প্রতিনিধিদলটি কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছায়। এরপর ইনানীতে অবস্থিত রয়েল টিউলিপ হোটেল হয়ে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উখিয়ার কুতুপালং এক্সটেনশন-৪ রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যান। পরিদর্শন শেষে দুপুর ১টার দিকে রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে  বৈঠক করেন। এ সময় রোহিঙ্গা ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালাম, অতিরিক্ত কমিশনার শামসুদ্দোজা নয়ন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এস এম সরওয়ার কামালসহ ‘আরআরআরসি’ জেলা প্রশাসন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন দাতা সংস্থার লোকজন উপস্থিত ছিলেন।

মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে রয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক জোট আসিয়ানের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক আহা সেন্টারের একটি প্রতিনিধিদলও। আহা সেন্টার ও মিয়ানমারের প্রতিনিধিদল একসঙ্গে রোহিঙ্গাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছে তারা যেন রাখাইনে ফিরে যায়। রোহিঙ্গাদের জন্য মিয়ানমার সরকার যেসব কাজ করছে, তারা সেগুলো তুলে ধরেন।

কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলটির সঙ্গে আসিয়ানের (দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১০টি দেশের আঞ্চলিক জোট) দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাবিষয়ক মানবিক সহায়তা কেন্দ্র বা আহা সেন্টারের একটি প্রতিনিধিদলও আছে। রাখাইনের পরিবেশ নিয়ে গত মাসে একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর সমালোচনার মুখে পড়ে আহা সেন্টার। ওই প্রতিবেদনকে পক্ষপাতদুষ্ট বলে সমালোচনা করেছে আসিয়ানের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য রাষ্ট্র মালয়েশিয়া। গত বছরও মিয়ানমারের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল রোহিঙ্গা শিবিরে যায়। তারা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে। তবে তাতেও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় কোনো গতি আসেনি।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার শামসুদ্দোজা নয়ন বলেন, প্রতিনিধিদলের সদস্যরা কয়েকটি ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে সেখানে কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা তৈরি করা হয়েছে সে ব্যাপারে জানিয়েছেন।

বৈঠকে অংশ নেওয়া রোহিঙ্গা নেতারা জানান, প্রত্যাবাসন ইস্যুতে যৌথ ডায়ালগে সম্মতি জানিয়েছেন মিয়ানমারের প্রতিনিধিরা। বৈঠকে অংশ নেওয়া রোহিঙ্গা নেতা মুহিব উল্লাহ বলেন, দ্বিতীয়বারের মতো মিয়ানমারের প্রতিনিধিদল রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এসে আমাদের সঙ্গে কথা বলেছে। তারা আমাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে চায়। কিন্তু কীভাবে, কখন মিয়ানমারে ফিরে যাব, সে ব্যাপারে আশ্বস্ত করেনি। আমরা আমাদের মৌলিক অধিকারগুলো ফিরিয়ে দিতে বার বার তাদের অনুরোধ করেছি। কিন্তু মিয়ানমার সরকার কথা দিয়ে কথা রাখেনি।

রোহিঙ্গা নেতা জোবায়ের হোসেন জানান, আমাদের ৪০ জন নেতা বৈঠকে অংশ নিয়েছি। সবার একই দাবি ছিল, প্রথমে আমাদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। অবাধ চলাফেরার সুযোগ দেওয়াসহ একটি দেশের নাগরিকরা যেসব সুযোগ-সুবিধা পায়, তা দিতে হবে। প্রতিনিধিনদল বলেছে, মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে তারা আমাদের জানাবে এবং নিয়মিত সংলাপে বসতে চেষ্টা করবে। আরেক রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ বলেন, মিয়ানমার আমাদের কোনোদিন ফিরিয়ে নেবে না। তারা এ নিয়ে নাটক শুরু করেছে। আন্তর্জাতিকভাবে যখন চাপ সৃষ্টি হয়, তখনই নানা ফন্দি শুরু করে মিয়ানমার সরকার। আজকের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন এরই অংশ।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৪ আগস্ট থেকে রোহিঙ্গাদের ওপর রাখাইন রাজ্যে চলা হত্যা, ধর্ষণসহ বিভিন্ন সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। বর্তমানে তারা কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ পাহাড়ে ৩২টি ক্যাম্পে অবস্থান করছে। দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনার পর রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে দ্বিপক্ষীয় একটি চুক্তিতে সই করে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। সব রকমের প্রস্তুতির পরও মিয়ানমার রহস্যজনক কারণে চুক্তি বাস্তবায়নে এগিয়ে আসেনি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads