• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯
ডেঙ্গু আক্রান্তদের বেশিরভাগের বয়স ১৬-৩০

ফাইল ছবি

জাতীয়

ডেঙ্গু আক্রান্তদের বেশিরভাগের বয়স ১৬-৩০

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ৩১ জুলাই ২০১৯

এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুতে ১৬ থেকে ৩০ বছর বয়সী তরুণ ও তরুণীরাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। আর আক্রান্তদের মধ্যে বেশির ভাগই পুরুষ। বর্তমানে দেশে চার ধরনের বা সেরোটাইপের ডেঙ্গু রোগ বেশি ধরা পড়ছে। তবে সব বয়সের মানুষই রোগটিতে কমবেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। বিশেষ করে শিশুদের আক্রান্তের হারও উদ্বেগজনক বলে মনে করেন অনেক বিশেষজ্ঞ। এদিকে রোগটির বিস্তার ও প্রকোপ ক্রমেই বাড়ছে। রাজধানীর সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসাকেন্দ্রগুলোতে রোগীর চাপও বাড়ছে। আক্রান্তের সংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে হাসপাতালের শয্যা সংকট। এমন পরিস্থিতিতে ঝুঁকিপূর্ণ অনেক ডেঙ্গু রোগীরও মিলছে না উপযুক্ত চিকিৎসা। পাওয়া যাচ্ছে না আইসিইউ।

গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে এক হাজার ৩৩৫ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে গতকাল মঙ্গলবার পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরে এ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে মোট ১৫ হাজার ৩৬৯ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে  স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মাত্র ৩৫টি (১০ শতাংশ) হাসপাতালে ভর্তি রোগীর তথ্য প্রকাশ করছে। এর বাইরে দেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া রোগীরা সরকারি হিসাবের বাইরে থেকে যাচ্ছেন।

অধিদপ্তরের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২২১, মিটফোর্ড হাসপাতালে ১০৫, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ৪৮, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ৬১, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ৪২, বারডেম হাসপাতালে ১৭, বিএসএমএমইউতে ২৬, পুলিশ হাসপাতাল রাজারবাগে ৩৩, বিজিবি হাসপাতাল পিলখানায় ২ এবং কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৯০ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ২৬৫ জন ভর্তি হন। কন্ট্রোল রুম থেকে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকার বাইরে এখন পর্যন্ত এক হাজার ৮৪৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৮৪৭ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

অন্যদিকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব (সমন্ব্বয় ও সংস্কার) শেখ মুজিবুর রহমান গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত ভর্তি রোগীর সংখ্যা তিন হাজার ৮৪৭ জন। এ পর্যন্ত ১৩ হাজার ৭৩৭ জন রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ৯ হাজার ৭৪০ জন। বর্তমানে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন তিন হাজার ৮৪৭ জন। এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা আটজন। তবে কিছু আশঙ্কাজনক রোগী থাকায় মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে।’

সরেজমিন কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, ডেঙ্গু রোগীর উপচে পড়া চাপ সামলাতে হিমশিম অবস্থা সরকারি ও বেসরকারি সব হাসপাতালে। অনেকে আবার জ্বর হলেই আতঙ্কে হাসপাতালে ছুটে আসছেন। ডেঙ্গু নিশ্চিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভর্তি করানোর জন্য ছুটছেন এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে। এরই মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত বেশ কয়েকজনের মৃত্যুভয় যেন আরো জাপটে ধরেছে অনেককে।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তদের চার ধরনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গুতে। এই সংখ্যা ৭০ থেকে ৮০ ভাগ, যাদের হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন নেই। তবে বাসায় ফিরেও রোগীকে রাখতে হবে পর্যবেক্ষণে।

ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ডা. মিল্টন হলে গতকাল আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ভাইরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সী জানান, ‘ডেঙ্গু জ্বরে ১৬ থেকে ৩০ বছর বয়সী তরুণ-তরুণীরাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন।’ ‘ডেঙ্গু সেলের কার্যক্রম ও চলমান ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাব ও সাম্প্র্রতিক গবেষণার ফলাফল প্রকাশ’ তুলে ধরতেই এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে বিএসএমএমইউ-এর ডেঙ্গু সেলের কার্যক্রমের বিষয়ে বিস্তারিত বক্তব্য তুলে ধরেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া।

গবেষণার ফলাফলে সাইফ উল্লাহ মুন্সী বলেন, ‘চলতি বছর ১ জানুয়ারি থেকে ২৫ জুলাই পযন্ত ৬ হাজার ১২৯ জনের মধ্যে ১২৭৮ জনের অর্থাৎ ২১ শতাংশ ডেঙ্গু ধরা পড়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে নারী ও পুরুষ অনুপাত হলো ১:২.৭। আক্রান্তদের মধ্যে বেশির ভাগই পুরুষ।’

চলমান ডেঙ্গু রোগসংক্রান্ত জনভোগান্তি নিরসনে ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চলমান কর্মকাণ্ড তদারক করতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক তার নিজ দপ্তরে গতকাল ডেঙ্গু রোগ সংক্রান্ত ‘মিনিস্টার মনিটরিং সেল’ নামক একটি আলাদা মনিটরিং সেল গঠন করে দিয়েছেন। নির্দেশনা অনুযায়ী ‘মিনিস্টার মনিটরিং সেল’ ডেঙ্গু রোগ পরীক্ষার ফি-সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশনার কোনো প্রকার লঙ্ঘন হলে তার অভিযোগ গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এ বিষয়ে জনভোগান্তি লাঘবে ‘মিনিস্টার মনিটরিং সেল’ এ সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে বলে গতকাল মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads