• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯
ডেঙ্গুর দায় কার

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

দুই সংস্থার পাল্টাপাল্টি অবস্থান

ডেঙ্গুর দায় কার

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০১ আগস্ট ২০১৯

এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এরই মধ্যে ছাড়িয়েছে অতীতের সব রেকর্ড। রাজধানী ঢাকায় শুরু হলেও এখন এ জ্বর ছড়িয়ে পড়েছে দেশের প্রায় সব জেলায়। রাজধানীতে এ রোগ নিয়ন্ত্রণের মূল দায়িত্ব সরকারের দুটি সংস্থার- স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের। কিন্তু অনেকটা দায়িত্ব এড়াতে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিচ্ছে সংস্থা দুটি।

সিটি করপোরেশনের কাজ হলো মশা নিয়ন্ত্রণ করা আর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তদের চিকিৎসা দেওয়ার দায়ভার নেবে। কিন্তু গত কয়েকদিনের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, চিকিৎসা দিতে গিয়ে অধিক রোগীর চাপে রাজধানীর হাসপাতালগুলো হিমশিম খেলেও মশার বংশবিস্তার নিয়ন্ত্রণে তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই দুই সিটি করপোরেশনের।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, তারা অনেক আগেই ডেঙ্গুর এমন মারাত্মক আশঙ্কার কথা জানালেও সিটি করপোরেশন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। যদিও বর্তমানে রোগটি নিয়ন্ত্রণে সমন্বয় করে কাজটি সম্পাদন করেছে বলে জানা যায় প্রতিষ্ঠানগুলোর সংশ্লিষ্ট সূত্রে।

নিয়মিত জরিপ অনুসারে চলতি মৌসুমে রাজধানীতে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার প্রাদুর্ভাব বাড়তে পারে- এমন শঙ্কার কথা গত তিন মাস আগেই সিটি করপোরেশনসহ সরকারের সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করেছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তাছাড়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কোন ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে, সে ব্যাপারেও প্রয়োজনীয় সুপারিশ দেওয়া হয়েছিল বলে জানায় অধিদপ্তর। তারা বলছে, এ ব্যাপারে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় ঢাকা উত্তর সিটিতে ৫৮ শতাংশ ও দক্ষিণে ৭৮ শতাংশ এলাকায় এডিস মশার লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. সানিয়া তাহমিনা বলেন, গত মার্চে রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পক্ষ থেকে এডিস মশার ওপর একটি জরিপ চালানো হয়। তখনই আমরা এমন পরিস্থিতির বিষয়টি ধারণা করি ও সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাই। এ ধরনের আশঙ্কা থেকেই আমরা চিকিৎসকদের বিষয়টি অবহিত করি এবং ডেঙ্গু গাইডলাইন আপডেট করি। ইতোমধ্যে ১০ হাজার গাইডলাইন চিকিৎসকদের হাতে পাঠানো হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর রাজধানীতে এডিস মশার লার্ভা আগের চেয়ে আরো বাড়ার প্রমাণ পেয়েছে। রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার উদ্যোগে জুলাই মাসে ১০ দিন ধরে চালানো এক জরিপের ফলাফলে এক ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে। দুই সিটির ১০০টি এলাকায় পরিচালিত এ জরিপে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে সবকটি এলাকা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ডেঙ্গুর ভয়াবহতা পর্যবেক্ষণে চলতি মাসেই ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৬৯টি এলাকায় এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৪১টি এলাকায় জরিপ পরিচালনা করা হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের কীটতত্ত্ববিদদের তত্ত্বাবধানে ১৮ থকে ২৭ জুলাই পর্যন্ত এ জরিপ পরিচালিত হয়। এতে দেখা যায়, রাজধানীর উত্তরা, গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, গ্লোরিয়া, বনশ্রীর মতো এলাকাগুলোর বাসাবাড়িতে এডিস মশার লার্ভা বেশি পাওয়া গেছে। তবে দুই সিটির মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি পাওয়া গেছে ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ঢাকা উত্তরের ৫৮ এবং দক্ষিণের ৭৮ শতাংশ এলাকায় বেশি মাত্রায় লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে আবার নির্মাণাধীন ভবনের অস্থায়ী চৌবাচ্চা, মেঝেতে জমিয়ে রাখা পানি, ডাবের খোসা ও গ্যারেজের টায়ারে শতভাগেই লার্ভা মিলেছে। অন্যদিকে বড় মশার ক্ষেত্রে গত মার্চ মাসের চেয়ে এ দফার সার্ভেতে দশগুণ বেশি এডিস মশার অস্তিত্ব পাওয়া যায়।

এদিকে দেশে প্রচলিত ও বহুল ব্যবহূত কীটনাশক প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে সব ধরনের মশা। ফলে রাজধানীসহ সারা দেশে নিয়মিত মশার ওষুধ ছিটানো হলেও মশা মরছে না। সম্প্রতি এমন তথ্য উঠে এসছে আইসিডিডিআর,বি-র এক গবেষণায়। সম্প্রতি ঢাকার দুটি সিটি করপোরেশনের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক যৌথ বৈঠকে এ গবেষণা তথ্য উপস্থাপন করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল- সিডিসি’র অর্থায়নে রাজধানী ঢাকা শহরে এ গবেষণা পরিচালিত হয়। কিন্তু এরপর প্রায় দুই সপ্তাহের বেশি পেরিয়ে গেলেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি সিটি করপোরেশন।

সংশ্লিষ্টরা জানায়, মশা মারার ওষুধ কিনবে সিটি করপোরেশন। তারা যে ওষুধ কিনবে, তার স্যাম্পল প্রথমে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইংয়ের কাছে পাঠাবে। এই বিভাগ ওষুধের টেকনিক্যালি টেস্ট করবে। অর্থাৎ ওই ওষুধে যে উপাদানের কথা বলা হয়েছে, তা সঠিক পরিমাণে আছে কিনা এবং যে প্রতিষ্ঠান ওষুধ সরবরাহ করছে, তাদের লাইসেন্স আছে কিনা তা পরীক্ষা করে সিটি করপোরেশনকে রিপোর্ট দেবে। এরপর সিটি করপোরেশন একই ওষুধের স্যাম্পল সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনির্ণয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে (আইইডিসিআর) পাঠাবে।

এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মমিনুর রহমান মামুন বলেন, গণমাধ্যমে এমন কিছু প্রতিবেদন দেখেছি এবং এ বিষয়ে সকালেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলেছেন, এ ধরনের কথা নাকি তারা বলেননি বা তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়নি। আমাদের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে এপ্রিল মাস থেকেই কাজ শুরু করলাম। কাজ করার সব নথিপত্র আমাদের কাছে আছে। ওনারাও আমাদের সঙ্গে কাজ করেছেন। বিভিন্ন ধরনের সহায়তা ওনারাই আমাদের দিয়েছেন। আমাদের প্রায় ৫০ শতাংশ কাজে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লোকজন জড়িত ছিলেন। এরপরেও কেউ যদি বলে থাকেন তাহলে আমার জানা নেই। আমাদের বক্তব্য এটাই যে, শুরু থেকেই আমরা একসঙ্গে কাজ করছি।

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. শরীফ আহমেদের মন্তব্য নিতে কয়েক দফা যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

তবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, রাজধানীর মশার যেহেতু প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়েছে, সে কারণে কোন ওষুধ ব্যবহার করলে ভালো হবে, সেটা টেকনিক্যাল কমিটিকে যাচাই-বাছাই করে দেখতে বলা হয়েছে। এছাড়া এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়েরও সহায়তা চাওয়া হয়েছে। আশা করি, দ্রুততম সময়ে আমরা নতুন ওষুধ কেনার সিদ্ধান্ত নিতে পারব।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads