• শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জৈষ্ঠ ১৪২৯
বেড়েছে কয়েল অ্যারোসল মশারির চাহিদা ও দাম

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

বেড়েছে কয়েল অ্যারোসল মশারির চাহিদা ও দাম

  • নাজমুল হুসাইন
  • প্রকাশিত ০২ আগস্ট ২০১৯

ডেঙ্গুবাহিত এডিস মশার ভয়ে গরমেও সারা রাত কাটছে মশারির মধ্যে। কিন্তু মশারি টাঙিয়ে শুয়ে আতঙ্ক কাটছে না মানুষের। সেখানেও হাতে থাকে মশা মারার ব্যাট। এছাড়া দুপুরে বাচ্চারা ঘুমায় কয়েল জ্বালিয়ে। বাকি সময় ঘরে ব্যবহার হচ্ছে অ্যারোসল (মশার মারার স্প্রে)। গতকাল এভাবেই এডিস মশা প্রতিরোধে নিজ পরিবারের প্রস্তুতির কথা বলছিলেন রামপুরা এলাকার গৃহিণী সবিতা ইয়াসমিন। আরো বেশি নিরাপদে থাকার জন্য খিলগাঁও এলাকায় একজনকে মশা বিকর্ষণের ওষুধ (অ্যান্টি মাসকিউটো লোশন) কিনতে দেখা যায়। শিমুল হাসনাইন নামের এ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক বলেন, বাইরে অথবা স্কুলে পাঠানোর সময় বাচ্চাদের হাত-পায়ে লাগাই এ ওষুধ। কারণ সেসব জায়গায় মশা প্রতিরোধের ব্যবস্থা থাকে না বললেই চলে। 

ডেঙ্গুর প্রকোপে রাজধানীতে এখন কয়েল, অ্যারোসল, মশারি, বৈদ্যুতিক ব্যাট ও মশা বিকর্ষণের ওষুধের চাহিদা বেশি। বিশেষ করে যেসব পরিবারে শিশুসন্তান রয়েছে, তারা এখন খুব বেশি সতর্ক। এছাড়াও এমন কিছু পরিবার যারা মশা প্রতিরোধে কখনো কিছু ব্যবহার করত না, তারাও এখন এসব উপকরণ ব্যবহার করছে। এদিকে চাহিদা বাড়ায় এসব উপকরণের দাম বেড়ে গেছে— এমন অভিযোগ ক্রেতাদের।

যদিও বাজারে থাকা কয়েল ও অ্যারোসলের মান নিয়ে রয়েছে বড় ধরনের প্রশ্ন। দেশে অবৈধ ও নামকাওয়াস্তে চলছে বেশির ভাগ কয়েল কারখানা। আবার চীন ও ভারত থেকে প্রচুর নিম্নমানের পণ্য আমদানি হচ্ছে। কোনো ধরনের মানদণ্ড না মেনেই এসব উপকরণে অতিমাত্রায় ক্ষতিকর রাসায়নিক প্রয়োগ করা হয়। অন্যদিকে দেশের একমাত্র মান সংস্থা বিএসটিআইয়ের বাধ্যতামূলক তালিকায় না থাকায় সেসব অরাজকতা দেখছে না কেউই। এর মধ্যে কিছু ভ্রাম্যমাণ আদালতের নজরে আসছে এখানে-সেখানে গড়ে ওঠা শত শত অখ্যাত ও অবৈধ কারখানা। তবে তারপরেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে দায়সারা। ফলে উচ্চমাত্রায় রাসায়নিক প্রয়োগ করা কয়েল মশার কয়েল বাড়াচ্ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।

এদিকে চাহিদার সঙ্গে এসর পণ্যের দাম বাড়ারও প্রমাণ মিলছে। গতকাল পাইকারি চকবাজার বেগমবাজারসহ রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ ব্র্যান্ডের কয়েল ও অ্যারোসলের দামই বাড়তি। আগে যে অ্যারোসল ২৫০ টাকায় বিক্রি হতো, এখন তা ৩০০ টাকার নিচে দিতে চাচ্ছে না বিক্রেতারা। অন্যদিকে পাইকারিতে ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হওয়া কয়েলগুলো এখন ১০/১৫ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি হচ্ছে। যদিও বিক্রেতা বলছেন ভালো ব্র্যান্ডগুলো এখনো তাদের পণ্যের দাম বাড়াননি।

এদিকে খুচরা বাজারে এসে বাড্ডার ভাটারা কোকাকোলা রোডে এক বিক্রেতা সিরাজুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আগে দিনে ৮-১০ প্যাকেট কয়েল বিক্রি হতো তার দোকানে। এখন সেটা ১২ থেকে ১৫ প্যাকেট হয়েছে। অ্যারোসলও এখন বেশি বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু সে তুলনায় সরবরাহ বাড়েনি। এ কারণে কেউ কেউ বেশি দামে পণ্যগুলো বিক্রি করছেন।

তবে কয়েল থেকে বেশি সংকট মশা বিকর্ষণের ওষুধের। কিছু খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোম্পানি এখন ঠিকমতো এসব সরবরাহ করছে না। ফলে বাধ্য হয়ে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে পাইকারি বাজার থেকে। এ কারণে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে অন্যান্য মশা প্রতিরোধের উপকরণ থেকে মশারি অধিক কার্যকর বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। তাই চাহিদা বেড়েছে মশারিরও। গতকাল মশারির বড় পাইকারি বাজার রাজধানীর ফুলবাড়িয়া সিটি সুপার মার্কেটের নিচতলা ঘুরে দেখা যায়, দোকান মালিক ও কর্মচারী সবাই কর্মব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। সেখানে বেশ বেড়েছে ক্রেতার আনাগোনা।

ফুলবাড়িয়া সিটি সুপার মার্কেটের সসতা স্টোরের ফরিদ উদ্দিন বলেন, কয়েক দিন মশারি বিক্রি বেড়েছে কয়েক গুণ। আমাদের বেচা-বিক্রি আগের চেয়ে অনেকটাই বেশি। ডেঙ্গুর কারণে মশারি বিক্রিতে কী প্রভাব পড়েছে জানতে চাইলে দোকানমালিক বলেন, এ শহরের মানুষ মশারি খুব একটা ব্যবহার করে না। সবাই কয়েল, অ্যারোসল  ব্যবহার করে। কিন্তু টিভি-পত্রিকায় ও সরকারের প্রচারণায় মানুষের সচেতনতা আগের চেয়ে বেড়েছে। শহরের লোকজনও এখন রাতে ম্যাজিক মশারি বেশি ব্যবহার করে। এসব মোশারিতে বাতাস বেশি ঢোকে।

ম্যাজিক মশারিগুলোতে ফ্যানের বাতাস বেশি পাওয়া যায়। মশাও ঢুকতে পারে না। তাই এগুলো বেশি বিক্রি হতে দেখা যায়। ওখানে প্রতিটি সিঙ্গেল ম্যাজিক মশারির দাম ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। আর বড়গুলো মানভেদে ৪০০ থেকে ৭০০ টাকা। এছাড়াও সাধারণ মশারি মান ও আকৃতিভেদে ৫০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads