• শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জৈষ্ঠ ১৪২৯
বঙ্গবন্ধুকে বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

বঙ্গবন্ধুকে বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০২ আগস্ট ২০১৯

বাঙালির ইতিহাসে রক্তাক্ত ও কলঙ্কিত আগস্ট মাস শুরুর প্রথম দিন গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকাসহ দেশজুড়ে ছিল শোকাচ্ছন্ন পরিবেশ। সর্বত্র ছিল শোকের কালো পতাকা। অনেকের হাতে ছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি। তাদের বুকে ছিল কালো ব্যাজ। হূৎপিণ্ডের গভীরে ছিল বাঙালির স্বাধীনতা ও মুক্তির প্রতীক বঙ্গবন্ধুর জন্য অকৃত্রিম ভালোবাসা ও গভীর শ্রদ্ধা। পুরো জাতি বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করে বাংলার মাটি ও মানুষের পরম আত্মীয় এবং ইতিহাসের বিস্ময়কর নেতৃত্বের কালজয়ী স্র্রষ্টা বঙ্গবন্ধুকে। স্মরণ করে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে নিহত বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদেরও। আওয়ামী লীগসহ নানা সাংস্কৃতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠন নানা আয়োজনের মাধ্যমে পালন করে শোকের মাসের কর্মসূচির প্রথম দিন।

শোকাবহ মাসের প্রথম দিনটি নানা কর্মসূচিতে পালন করে আওয়ামী লীগের সহযোগী ও অঙ্গসংগঠনগুলোও। শোকের মাসকে স্মরণ করতে প্রথম প্রহরে রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানো হয়। রাত ১২টা এক মিনিটে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় স্বেচ্ছাসেবক লীগ। এ সময় সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ মহানগরের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। পরে জাতির জনককে স্মরণ করে হাজারো মোমবাতি প্রজ্বালন করা হয়। স্বেচ্ছাসেবক লীগের উদ্যোগে বের করা হয় আলোর মিছিল। এতে স্বেচ্ছাসেবক লীগ ছাড়াও আওয়ামী লীগের অন্য অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। এ সময় বিদেশে পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করার দাবি জানান নেতারা। এ ছাড়া অসংখ্য সংগঠন প্রথম প্রহরেই শ্রদ্ধা জানায় জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে।

গতকাল সকালে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। প্রতি বছরের মতো এবারো আগস্টের প্রথম দিন বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর বাসভবনের সামনে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি ও আলোচনা সভার আয়োজন করে কৃষক লীগ। সরকারি সফরে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সেখান থেকে টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে ধানমন্ডিস্থ বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর প্রাঙ্গণে রক্তদান ও বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের মাধ্যমে জাতির জনকের রক্তের ঋণ পরিশোধ করা হবে বলে এ সময় বক্তব্যে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

রক্তদান কর্মসূচিতে ২০০ জন ব্যক্তি স্বেচ্ছায় রক্তদান করেন বলে জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। কৃষক লীগের সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম, কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলি এবং কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক সমীর চন্দ্র প্রমুখ।

বঙ্গবন্ধুর ৪৪তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল দুপুরে ঢাকার শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালা মিলনায়তনে কেন্দ্রীয় যুবলীগ আয়োজিত মাসব্যাপী সংবাদ চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক অপশক্তি আগস্ট মাস এলেই সক্রিয় হয়ে ওঠে। একদিকে আমাদের মধ্যে হারানোর বেদনা আবার নতুন করে কাউকে হারানোর আশঙ্কা তৈরি করে।’ তাই এ মাসে শুধু শোক প্রকাশ করলেই হবে না, আরো যে আশঙ্কাগুলো থাকে সে বিষয়েও সতর্ক থাকার জন্য তিনি সবার প্রতি আহ্বান জানান। যুবলীগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।

গতকাল সচিবালয়ের ক্লিনিক ভবনের সামনে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে তথ্য অধিদপ্তর আয়োজিত ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর দুর্লভ আলোকচিত্র প্রদর্শনী’র উদ্বোধন করেন তথ্যমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। এ সময় তিনি বলেন, ‘কমিশন গঠন করে জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের নীলনকশার সঙ্গে জড়িতদের মুখোশ উন্মোচন করা প্রয়োজন। পনের আগস্টের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জিয়াউর রহমানসহ যারা নীল নকশার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন একটি কমিশন গঠন করে তাদের মুখোশ জাতির সামনে উন্মোচন করাই আজকে জনগণের দাবি।’

এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে শোকের মাসের প্রথম দিনে বঙ্গবন্ধু পরিষদ রাজধানীর কলাবাগানের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাশ্রিত রাজনৈতিক ধারাকে বদলে ফেলার কুপ্রচেষ্টা ছিল ঘাতকদের। শুধু দিক পরিবর্তন নয়, মুক্তিযুদ্ধের  চেতনা ও দর্শনাশ্রিত গতিধারা চিরতরে রুদ্ধ করে বাংলা ও বাঙালির চিরায়ত রাজনীতি, সংস্কৃতি, ইতিহাস এবং ঐতিহ্যবিরোধী দর্শন চালুরও অপচেষ্টা হয়েছে। পনেরো আগস্টের সকাল ছিল রাতের চেয়েও অন্ধকার। বাঙালির সৌভাগ্য যে, সেদিনের নৃশংসতা থেকে সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা— শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।

প্রধানমন্ত্রী সভাপতি শেখ হাসিনা তার পিতা বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজগুলো করতে পারছেন বলেই আজ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, দর্শন, আদর্শকে আঁঁকড়ে ধরে বাঙালি জাতীয়তাবাদের পথে চলতে পারছে। তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের উদ্যোগ নিয়ে তা বাস্তবায়ন করেছেন। কার্যকরও করেছেন বিচারের রায়। স্বাধীনতাবিরোধী মহল ছাড়া এটি সব বাঙালির কাঙ্ক্ষিত ছিল।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads