• শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জৈষ্ঠ ১৪২৯
ডেঙ্গু ছড়িয়েছে ৬৪ জেলায়

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

ডেঙ্গু ছড়িয়েছে ৬৪ জেলায়

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ০২ আগস্ট ২০১৯

দেশের সব জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত প্রাপ্ত সরকারি তথ্যে সর্বশেষ নেত্রকোনায় আক্রান্তের তথ্য পাওয়ায় দেশের ৬৪ জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৭১২ জন। সংস্থাটি জানিয়েছে সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৯ হাজার ৫১৩ জন। তবে বেসরকারি হিসাবে এটি কয়েকগুণ। এছাড়া সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত ১৪ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করা হলেও বিভিন্ন হাসপাতালের তথ্য বলছে মৃতের সংখ্যা অর্ধশতাধিক ছাড়িয়েছে। এখন প্রতিদিনই ডেঙ্গুতে মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে।

বাংলাদেশের খবরের নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, নারায়ণগঞ্জে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত ৭০ জন চিকিৎসা নিয়েছে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইমতিয়াজ। তিনি বলেন, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে নারায়ণগঞ্জের তিনজন ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে মারা গেছেন।

বগুড়া প্রতিনিধি জানান, বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল সোয়া ৫টা পর্যন্ত নারী-শিশুসহ ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২৬ জনে। হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. আব্দুল ওয়াদুদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছে ৬০ জন, বাকিরা চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন। ১০ জন উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় গেছেন।

জানা গেছে, আক্রান্তদের অধিকাংশই ঢাকা থেকে জীবাণু বহন করে আনলেও বগুড়াতেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ৫ জন। যারা কয়েক মাসের মধ্যে ঢাকায় যায়নি। ফলে বগুড়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ডেঙ্গু আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, গতকাল বৃহস্পতিবারও ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মানিকগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৭ জন। এ নিয়ে এ পর্যন্ত ৬৯ জন আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৭ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে ৮ জন বাড়ি ফিরেছেন। এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছে ৫৪ জন।

মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মো. লুৎফর রহমান জানান, হাসপাতালে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু শনাক্তকরণের কিট ও রি-এজেন্ট আছে। তবে রোগীর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকলে চিকিৎসা সংকটের আশঙ্কা করছেন তারা।

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানান, ঝিনাইদহ জেলায় ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৭২ ঘণ্টায় ১৯ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। এই নিয়ে ঝিনাইদহে মোট ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ৩৫ জনে। এর মধ্যে বর্তমানে ২০ জন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ডা. সেলিনা বেগম।

কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, কুমিল্লার হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী ভর্তির সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত ১১ জন ভর্তি হয়েছে। এ নিয়ে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৬৫। এর আগে চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন আরো ৯৭ ডেঙ্গু রোগী।

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, গোপালগঞ্জে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় আরো ৬ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এতে গোপালগঞ্জে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ২২ জনে। এদিকে ডেঙ্গু প্রতিরোধে জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানার সভাপতিত্বে জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

জামালপুর প্রতিনিধি জানান, জামালপুরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গত ৭ দিনের ব্যবধানে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৩২ জন। বুধবারও আসিফ (৩১) নামে এক ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. প্রফুল্য কুমার সাহা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ভর্তি রোগীদের মধ্যে ৬ জনের অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ৮ জন চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছে। হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে আরো ১৯ জন।

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জানান, খাগড়াছড়িতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত আরো ৯ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে গত ৪ দিনে নার্স ও শিশুসহ খাগড়াছড়ি সদর আধুনিক হাসপাতালে ১৫ জন ভর্তি হয়েছেন। তার মধ্যে ৪ জন চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেলেও ১১ জন ভর্তি রয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে একজন শিশু ছাড়া সবাই ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়ে এসেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। আক্রান্তদের অধিকাংশই শিক্ষার্থী। ফলে খাগড়াছড়িতেও ডেঙ্গু আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

তবে এখন পর্যন্ত সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষায় ব্যবহূত কীট না আসায় কর্তৃপক্ষ বাইরে পরীক্ষা করে চিকিৎসাপত্র দিচ্ছেন। এ সুযোগে ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো গলাকাটা দাম নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

দোহার-নবাবগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি জানান, ঢাকার নবাবগঞ্জ ও দোহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গত ৮ দিনে ১৪৮ ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। গত বুধবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৫ জন ও দোহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩ জন ভর্তি রয়েছেন। নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শহিদুল ইসলাম ও দোহার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জসিম উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মির্জাগঞ্জ (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি জানান, পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বুধবার রাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছে দুই রোগী। মির্জাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. দিলরুবা ইয়াসমিন লিজা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাদের শরীরে ডেঙ্গুর জীবাণু পাওয়া গেছে। দুজনকেই হাসপাতালে ভর্তি করে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তবে মির্জাগঞ্জ হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই। পার্শ্ববর্তী ক্লিনিকগুলোতে পরীক্ষা করানো হচ্ছে।

জয়পুরহাট প্রতিনিধি জানান, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৪ জন। তবে এরা সবাই ঢাকায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি জানান, বগুড়ার শেরপুরে একজন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। গত বুধবার সন্ধ্যায় স্থানীয় একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ডেঙ্গু পরীক্ষার পর পজিটিভ হওয়ায় তাকে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সিলেট ব্যুরো জানায়, সিলেটে ক্রমেই বেড়ে চলছে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব। প্রতিদিনই নতুন নতুন রোগী আক্রান্ত হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেট বিভাগে ডেঙ্গুতে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৩ জন। এর আগে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন স্থানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ৫৫ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

টেকনাফ প্রতিনিধি জানান, টেকনাফে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আবদুল মালেক (৩৫) নামের এক কাপড় ব্যবসায়ীর ঢাকায় মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকা ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনি মারা যান। তিনি সাতকানিয়া উপজেলার ছদাহা লতা ফকিরপাড়ার বাসিন্দা মাস্টার আবুল কাশেমের ছেলে। মালেক দীর্ঘদিন ধরে টেকনাফ পৌরসভার ওপরের বাজারে ‘মনে রেখো’ নামে কাপড়ের দোকানি ছিলেন।

গত কয়েকদিন আগে চট্টগ্রামের শেভরণ ক্লিনিকে আব্দুল মালেককে ভর্তি করা হলে পরীক্ষায় ডেঙ্গু ধরা পড়ে। অবস্থা অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ২৮ জুলাই ঢাকায় ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই তিনি মারা যান।

মাদারীপুর প্রতিনিধি জানান, মাদারীপুরে বাড়ছে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। জেলার সদর হাসপাতালে এখন পর্যন্ত চিকিৎসা নিয়েছেন ২১ জন। বর্তমানে ভর্তি রয়েছেন ৭ জন। এছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতেও ভর্তি রয়েছেন আরো ৮ জন। এদিকে বুধবার মধ্যরাতে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে শিবচরের সলুবেপারীরর কান্দি এলাকার ফারুক খান (২২) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা গেছেন বলে জানিয়েছে তার পরিবার।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads