• বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জৈষ্ঠ ১৪২৯

জাতীয়

ভাসানচরে স্বাবলম্বী হতে পারবেন রোহিঙ্গারা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৮ অক্টোবর ২০২০

কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে স্থানান্তরিত বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা চাইলে অর্থনৈতিক নানা কাজে অংশ নিতে পারবেন। সেখানে নানা ধরনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। অসহায় রোহিঙ্গারা যেন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়ে দক্ষ কর্মী হয়ে মিয়ানমার ফিরে যেতে পারেন সে জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার।

ভাসানচরে বসবাসকারী রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাধ্যতামূলক নয়। তারা অন্য শরণার্থীদের মতো কার্ডের মাধ্যমে রেশন ও খাবার পাবেন। তবে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এবং রোহিঙ্গারা চাইলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারবেন।

জানা যায়, ভাসানচরে নৌবাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন ও অন্যান্য প্রশাসনিক সহায়তা প্রদানকারী সদস্যদের জন্য কিছু অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা করা হয়েছে। ভবিষ্যতে শরণার্থীরা চলে গেলে সেখানে দেশের অন্যান্য দুস্থ পরিবার আশ্রয় নিলে তাদের জন্যও এসব অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রয়োজন হবে। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের মধ্যে গবাদি পশুপালন, দুগ্ধজাত দ্রব্য উৎপাদন, মৎস্যচাষ এবং ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প উল্লেখযোগ্য।

সরেজমিন দেখা গেছে, দ্বীপে বর্তমানে প্রায় ছয় হাজার মহিষ রয়েছে। ব্যক্তিগত উদ্যোগে এসব মহিষের খামার পরিচালনার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থা কর্তৃক মহিষের দুধ ব্যবহার করে দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদন কার্যক্রম গ্রহণ করা যেতে পারে। এ ছাড়া ছাগল ও ভেড়া পরীক্ষামূলকভাবে পালন করা হচ্ছে, যার বৃদ্ধির হার যথেষ্ট ভালো। প্রকল্পের অব্যবহূত ১১৮ একর জমিতে এবং ক্লাস্টার হাউসের ভেতরে ফাঁকা স্থানে ভবিষ্যতে ফলদ ও বনজ বৃক্ষরোপণ করা হবে। প্রকল্পের জলাধার হিসেবে একটি বড় লেক করা হয়েছে যা সুপেয় পানির মৎস্যচাষে যথেষ্ট সহায়ক হবে। প্রকল্পের আরো দুটি লেক সংশোধনী প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আর ইতোমধ্যেই সেখানে মাছ চাষ হচ্ছে। এ ছাড়া ছোটখাটো আরো জলাশয় বিদ্যমান রয়েছে যা মৎস্যচাষের জন্য যথেষ্ট অনুকূল। অব্যবহূত ১১৮ একর জমিতে ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের উদ্যোগসহ অন্যান্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা চলমান।

পরীক্ষামূলকভাবে ধান চাষ করেও সফলতা মিলেছে। মূলত বরিশাল এলাকায় উৎপাদন হয় এমন ধান চাষ করা হচ্ছে। এ ছাড়া মিঠাপানিতে হয় এমন বিভিন্ন বনজ ও ফলদ বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি চাষ করা হচ্ছে।

প্রাথমিকভাবে ভাসানচরে ৩০৬ জন রোহিঙ্গাকে রাখা হয়েছে। এরা প্রত্যেকে অবৈধপথে মালয়েশিয়া পাড়ি দিচ্ছিলেন। সাগরে ভাসতে ভাসতে তাদের অবস্থা খুবই খারাপ হয়েছিল। কিন্তু কোথাও ভিড়তে পারছিলেন না। পরে বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ সরকার তাদের আশ্রয় দেয়। এদের মধ্যে ৯৭ জন পুরুষ, নারী ১৭৬ জন এবং শিশু ৩৩। তাদের অনেক নারী ইতোমধ্যে সেলাইকাজে অংশ নিচ্ছেন।

মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য নির্মিত ভাসানচরের অস্থায়ী আবাসস্থল পুরোপুরি প্রস্তুত হয়েছে। মৌলিক সুবিধা নিয়ে এখানে প্রায় লাখ খানেক রোহিঙ্গাকে স্থানান্তর করা হবে। প্রকৃতির অকৃত্রিম দান জল ও সবুজ গাছগাছালিবেষ্টিত নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার আওতাধীন দ্বীপটি এখন পরিকল্পিত বাসস্থানের বাস্তব উদাহরণ, যা দৃষ্টিনন্দনও বটে। এখানে কাজের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের বিনোদনের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

প্রকল্পটিতে যাতে এক লাখ এক হাজার ৩৬০ জন শরণার্থী বসবাস করতে পারেন সেই ব্যবস্থার আলোকে সেখানে গুচ্ছগ্রাম নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি গৃহে, প্রতি পরিবারের চারজন করে মোট ১৬টি পরিবার বসবাস করতে পারবে। এ ছাড়া প্রতিটি ক্লাস্টারের জন্য দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে আশ্রয় নেওয়ার জন্য তৈরি শেল্টার স্টেশনে স্বাভাবিক সময়ে ২৩টি পরিবার বসবাস করতে পারবে।

এ হিসাবে ক্লাস্টারের ১২টি হাউসে মোট ৭৬৮ জন এবং একটি শেল্টার স্টেশনে মোট ৯২ জনসহ মোট ৮৬০ জন সদস্য বসবাস করতে পারবেন। প্রতিটি হাউসের একপ্রান্তে বসবাসকারী পরিবারের নারী-পুরুষের জন্য আলাদা গোসলখানা, শৌচাগার ও রান্নাঘরও রয়েছে। সেখানকার ভেড়া লালনপালনকারী আমিরুল ইসলাম বলেন, সাড়ে ৩০০ ভেড়া আছে। মাত্র ৫০টি ভেড়া দিয়ে শুরু করা হয়েছিল। সেখানকার ঘাস দিয়েই তাদের লালনপালন করা হয়। বাড়তি কোনো খাবার লাগে না।

সেখানে তিন বছর ধরে অটো চালাচ্ছিলেন আলমগীর হোসেন। তিনি রংপুর থেকে সেখানে কাজ করতে গেছেন। তিনি বলেন, এখানকার পরিবেশ খুব ভালো। কোনো যানজট নেই। রাস্তা খুবই ভালো ও প্রশস্ত।

রোহিঙ্গাদের আবাস্থল সম্পর্কে তিনি বলেন, এখানে যে শেল্টার আছে সেখানে ক্লাস্টার করা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।

আশ্রয়ণ-৩-এর প্রকল্প পরিচালক কমোডর আবদুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী বলেন, পতেঙ্গা পয়েন্ট থেকে ৫১.৮ কিলোমিটার হাতিয়া থেকে ২৪.৫ কিলোমিটার এবং সন্দ্বীপ থেকে ৮.৩ কিলোমিটার দূরের ভাসানচরের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ জন্য বঙ্গোপসাগরে ১৭২ বছরে হওয়া সব ধরনের ঝড়ের ডাটা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। পাশাপাশি ১০ হাজার বছর ধরে এ অঞ্চলের প্রাকৃতিক দুর্যোগের গতিপ্রকৃতি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ৯ ফুট উচ্চতার ১২.১ কিমি বাঁধের নির্মাণ শেষ হয়েছে। এই বাঁধকে আট স্তরে কম্পেকশন করা হয়েছে। বাঁধে রয়েছে ১৮টি স্লুইস গেট। বাঁধ থেকে সমুদ্রতীরবর্তী এলাকায় বনায়নও হয়েছে। ধীরগতির ভাঙন প্রতিরোধে ৪০০-৫০০ মিটার দূরে ওয়েভ স্ক্রিন পাইলিং, গ্র্যাভেল স্থাপন ও জিও ব্যাগসংবলিত তিন স্তরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আরডিপিপি অনুযায়ী ৯ ফুট থেকে ১৯ ফুট বাঁধের উচ্চতা বাড়ানোর কাজ গত জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা প্রকল্পে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা রেখেছি। তবে মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। আর রোহিঙ্গাদেরও মতামত নেওয়ার বিষয় আছে। সরকার অগ্রাধিকার প্রকল্পের মধ্যে এটি অন্যতম। এর সফল বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী সার্বক্ষণিক নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের জীবনধারণের সব সুবিধা রয়েছে এখানে। যেটি কক্সবাজারের চেয়ে হাজারগুণ উন্নত। বিদেশি প্রতিষ্ঠানের পরামর্শে পরিকল্পিত নকশায় দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা করে এটি গড়ে তোলা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, রোহিঙ্গারা এখানে অস্থায়ীভাবে থাকবে। তারা নিজ দেশে চলে গেলে বাংলাদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর একটি অংশ এখানে স্থানান্তরের পরিকল্পনা রয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads