• মঙ্গলবার, ৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪২৯
সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না কোথাও

প্রতীকী ছবি

জাতীয়

সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না কোথাও

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৭ নভেম্বর ২০২০

করোনাভাইরাস সংক্রমণের সেকেন্ড ওয়েভ বা দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন সচেতন মানুষ ও স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্টরা। খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং স্বাস্থ্য ও রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা বার বার মুখে মাস্ক পরিধান ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা ও পরামর্শ দিচ্ছেন।

একইসঙ্গে ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ (মাস্ক নেই তো সেবা নেই) নীতি অনুসরণের কথা বললেও হাসপাতালসহ বিভিন্ন পরিবহন, মার্কেট ও শপিংমলের বেশিরভাগ স্থানের কোথাও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলছে না কেউ। এসব স্থানে আগতদের কেউ কেউ মাস্ক পরিধান করলেও সঠিক নিয়মে পরিধান করছেন না। যখন-তখন খুলছেন, আবার থুতনির নিচে নামিয়ে রাখছেন। সরকারি অফিস-আদালতের সর্বত্র মাস্ক না পরলেও সেবা মিলছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) ঘুরে সামাজিক দূরত্ব রক্ষার চিত্র চোখে পড়েনি। বহির্বিভাগ ভবনের পঞ্চম তলায় চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞের কক্ষের বাইরে রোগীদের দীর্ঘলাইন ছিল। সবাই নির্দিষ্ট দূরত্ব তো মানেইনি, বরং গায়ের সঙ্গে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেন। হাসপাতালের স্টাফ ও তাদের আত্মীয়-স্বজনের পরিচয়ে সিরিয়াল ভেঙে কক্ষের ভেতরে প্রবেশ করা নিয়ে কিছুক্ষণ পর পর হইচই করেন রোগীরা।

শুধু পঞ্চম তলাতেই নয়, আন্ডারগ্রাউন্ডে ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরি ও নিচতলার টিকিট কাউন্টার থেকে শুরু করে পঞ্চম তলা পর্যন্ত বিভিন্ন ফ্লোরের বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকের কক্ষের সামনে রোগীদের উপচেপড়া ভিড় এবং গায়ের সাথে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। আজিমপুরের বাসিন্দা গৃহবধূ আসমা আক্তার মেয়ের চর্মরোগের চিকিৎসার জন্য বিএসএমএমইউতে এসেছিলেন। তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে রোগীরা গায়ে গা ঘেঁষে দাঁড়াচ্ছেন। সবাই যেভাবে মাস্ক খুলে কথাবার্তা বলছেন, তাতে হাসপাতালে রোগের চিকিৎসা নিতে এসে আবার করোনা না ধরে!’

পুরান ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মুখে মাস্ক পরিধান, কমপক্ষে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রেখে চলা, সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, স্যানিটাইজার ব্যবহারের প্রবণতা কমছে। জীবন ও জীবিকার সন্ধানে মানুষ স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হয়ে উঠলেও, করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুঝুঁকির কথা যেন ভুলেই গেছে।

কারওয়ানবাজারে প্রতিদিন হাজারো মানুষের সমাগম হয়। সরেজমিন দেখা গেছে, বাজারে আগত ক্রেতাদের অর্ধেকেরও বেশি মানুষের মুখে মাস্ক নেই। বিক্রেতারা যেন ভুলেই গেছে মাস্ক পরার কথা। হাসপাতালের মতো সেখানেও সামাজিক দূরত্বের বালাই নেই।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় করোনা সংক্রমণের শুরুতে ওয়াসাসহ অন্যান্য বেশ কয়েকটি সংগঠনের উদ্যোগে পানির ড্রাম, বেসিন ও সাবানের ব্যবস্থা থাকলেও এখন তা নেই। মার্কেটগুলোতে আগে প্রবেশের সময় জীবাণুনাশক টানেল দিয়ে প্রবেশ করতে হতো। সেইসঙ্গে শরীরের তাপমাত্রা মাপা হতো। কিন্তু এখন সেসব কার্যক্রম চোখে পড়ে না।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোশতাক হোসেন বলেন, মাস্ক পরিধান ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে শুধুমাত্র নির্দেশনা, কিংবা আইন প্রয়োগ করে করা যাবে না। এ ব্যাপারে কমিউনিটিকে যুক্ত করতে হবে। প্রয়োজনে মাস্ক সরবরাহ করতে হবে। করোনার উপসর্গ হলে পরীক্ষা করানোর ব্যাপারে উৎসাহিত করতে হবে। অসহায়-গরিবদের জন্য বিনামূল্যে পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।

তিনি বলেন, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে করোনার সেকেন্ডে ওয়েভে বিপুল সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত ও মৃত্যুবরণ করছে। আমাদের দেশেও এখন পর্যন্ত করোনার সংক্রমণ আগের তুলনায় কম থাকলেও, যে কোনো সময় সেকেন্ড ওয়েভ শুরু হয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে উদাসীনতার কারণে বড় মাশুল দিতে হতে পারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও করোনা ঠেকাতে শুধু মাস্ক পরাই যথেষ্ট নয় বলে মত দিচ্ছে। সামাজিক দূরত্বের বিধি মানার পরমর্শ দিয়ে সংস্থাটি বিভিন্ন দেশে সামাজিক দূরত্বের বিধি না মানায় ক্ষুব্ধও।

সংস্থার অন্যতম প্রধান বিজ্ঞানী মারিয়া ফন কারকোভ বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, সাধারণ মানুষ আর সামাজিক দূরত্বের বিধি মানছেন না। আমরা মাস্ক পরছি। কিন্তু করোনাকে ঠেকাতে গেলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতেই হবে। অন্তত ছয় ফুটের দূরত্ব বজায় রাখুন। যদি পারেন তাহলে আরো দূরে থাকুন।

মারিয়া ফন কারকোভ বলেন, শুধু মাস্ক পরলে হবে না, শুধু সামাজিক দূরত্ব রাখলে হবে না, শুধু বার বার হাত ধুলে হবে না। সবকটি বিধি মানতে হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads