• মঙ্গলবার, ৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

তিস্তা এখন ধু-ধু বালুচর

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ০৭ নভেম্বর ২০২০

কিছুদিন আগেও তিস্তায় ভেসেছিল জনপদ। নদীটির উপচেপড়া পানিতে প্লাবিত হয়েছিল গ্রামের পর গ্রাম। বন্যার ক্ষত না মুছতেই তিস্তার বুকজুড়ে এখন শুধুই ধু-ধু বালুচর। সেই ধু-ধু বালুচরে হেঁটেই পাড়ি দেওয়া যাচ্ছে তিস্তা।

সরেজমিনে তিস্তা অববাহিকা এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিদিনই পানি কমছে। কোথাও সামান্য পানি আবার কোথাও দিগন্তজোড়া বালুচর।  তিস্তা ব্যারাজ থেকে শুরু করে তিস্তার ১৬৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পানি নেই। তিস্তার নাব্য এতটাই হ্রাস পেয়েছে যে আসন্ন রবি মৌসুমে তিস্তা ব্যারাজের সেচ কার্যক্রম চালানো কঠিন হয়ে পড়বে। এতে শঙ্কায় পড়েছেন হাজারও কৃষক। এ অবস্থায় তিস্তা ব্যারাজের মোট ৫২টি গেটের মধ্যে ৪৫টি বন্ধ করে উজানের পানি আটকানোর চেষ্টা করছে কর্তৃপক্ষ। এতে করে যেটুকু পানি উজানে জমছে তাতেই ব্যারাজটির বাকি ৭টি গেটের মাধ্যমে সেচ কার্যক্রম চালানো হবে।

লালমনিরহাটের দোয়ানীতে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে তিস্তা সেচ প্রকল্প চালু হয় ১৯৯৮ সালে। নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুর জেলার ১২টি উপজেলার ৯০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দিতে পারার কথা এই প্রকল্পের। পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রাফিউল বারী জানান, তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের আওতায় আগামী ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে সেচ কার্যক্রম শুরু করা হবে। তবে পানি প্রবাহ দেখে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হবে। জানা গেছে, তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় একদিকে বর্ষা মৌসুমে ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ নিঃস্ব হচ্ছে, ভাঙছে কৃষকের ফসলের ক্ষেত, কষ্টে দিনাতিপাত করা দিনমজুরের তিল তিল করে গড়ে তোলা স্বপ্নের বসতবাড়ী।

অপরদিকে শুষ্ক মৌসুমে তিস্তা ব্যারাজের ভাটিতে ভারত তাদের গোজলডোবা বাঁধের সাহায্যে একতরফাভাবে পানি আটকে বাংলাদেশের উত্তর জনপদের লাখ লাখ কৃষকের চাষাবাদ ব্যাহত করছে। ফলে দিন দিন প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে দেশের বৃহত্তম তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পটি।

নদী গবেষকদের মতে, বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত পানি এবং শুষ্ক মৌসুমে প্রয়োজনের তুলনায় কম পানি থাকায় উত্তর জনপদের জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে।

এ অবস্থায় পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করে তিস্তা নদী বাঁচানোর আকুতি জানিয়েছে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজাপুরসহ সেচ নির্ভর মানুষজন।

নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন লালমনিরহাট জেলার গড্ডিমারী ইউনিয়নের সীমান্ত বাজারে আকবার হোসেন (৪০)। তিনি বলেন, গত মাস থেকে নদীর পানি কমতে থাকায় নদীতে আর মাছের দেখা মেলে না। তাই কয়েক মাস পরিবার নিয়ে কষ্টে কাটাতে হবে।

হাতীবান্ধা উপজেলার দক্ষিণ পারুলিয়া গ্রামের কৃষক মজিবর রহমান (৭০) বলেন, তিস্তার পানি শুকিয়ে যাওয়ায় বালুচরে পিঁয়াজ আবাদ করছি। নদীর বাঁধ না দিলে আমরা কী খেয়ে বাঁচব। আমরা বাঁধ চাই।

হাতীবান্ধা মহিলা ডিগ্রি কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবু সাঈদ বলেন, তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি না হওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে শুকিয়ে চৌচির হয়ে পড়ে তিস্তা নদী। জেগে ওঠে অসংখ্য চর। আর বর্ষায় হঠাৎ করে পানির ঢল নামায় নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে বন্যার সৃষ্টি হয়। এতে বাড়িঘর গ্রাম-গঞ্জ-হাটবাজার, রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পুল-কালভার্ট সব ভেঙে তছনছ হয়ে যায়। এখন দাবি একটাই তিস্তার শাসন ও বাঁধ নির্মাণ।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ২০ অক্টোবর ব্যারাজ পয়েন্টে পানি রয়েছে ২৫ হাজার কিউসেক। ব্যারাজের স্বাভাবিক পানি প্রবাহ প্রয়োজন ৪০ হাজার কিউসেক। পানি প্রবাহ কম হওয়ায় সেচযোগ্য জমির আওতা এ বছর কমে যেতে পারে।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান জানান, চায়না পাওয়ার কোম্পানি দুই বছর ধরে তিস্তা পাড়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মহাপরিকল্পনায় নির্মাণকৃত প্রকল্প বাস্তবায়নে নকশা ও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ করছে। তারা সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয় ধরেছে। পৃথক প্রজেক্ট আকারে পানি উন্নয়ন বোর্ড এই কাজ বাস্তবায়ন করবে।

তিনি আরো বলেন, খুব শিগগির টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হলে এই জেলার বর্তমান চিত্র রাতারাতি পাল্টে যাবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads