• মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪২৯
পদ্মায় ধরা পড়ছে ঝাঁকেঝাঁকে পাঙাশ, তবুও বিপাকে জেলেরা

ছবি: বাংলাদেশের খবর

জাতীয়

পদ্মায় ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে পাঙাশ, তবুও বিপাকে জেলেরা

  • লৌহজং (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১১ নভেম্বর ২০২০

গত ৪ নভেম্বর মা ইলিশ অভিযান শেষ হওয়ার পর থেকে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের পদ্মা নদীতে জেলেদের জালে আটকা পড়ছে ঝাঁকেঝাঁকে পাঙাশ। গত এক সপ্তাহে অন্তত পাঁচ শতাধিকের বেশি পাঙাশ শিকার করেছেন লৌহজংয়ের জেলেরা। কোনো কোনো জেলের জালে ১৫ থেকে ২৫/৩০টি পাঙাশ ধরা পড়েছে বলে জানা গেছে। নদীতে নেমে অন্তত ১/২ টি পাঙাশও পায়নি এমন জেলেকে পাওয়া যায়নি। মোট কথা, পদ্মানদীতে এখন চলছে রীতিমতো পাঙাশ শিকারের মহোৎসব। পাঙাশের আকারও বেশ বড়; গড় ওজন প্রায় ৭/৮ কেজি। ৫ কেজি ওজনের একটি পাঙাশের দাম প্রায় ৪ হাজার টাকা। গড়ে সাতশ’ টাকা কেজি দরে লৌহজংয়ের বাজারগুলোতে পাঙাশ কেটে বিক্রি করছেন মাছ ব্যবসায়ীরা। যাদের গোটা মাছ কেনার সামর্থ্য নেই, তারা কয়েকজন মিলে ভাগে কিনে নিচ্ছেন আস্তো পাঙাশ।

তবে পাঙাশ শিকার করতে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন জেলেরা। এ বছর পদ্মায় মা ইলিশ শিকারে ব্যাপক যৌথভাবে অভিযান চালিয়েছেন- প্রশাসন, মৎস্য অধিদপ্তর, নৌ-পুলিশ, কোস্ট গার্ড, র‌্যাব, থানা পুলিশ। এ বছর লৌহজংয়ে ২২দিনের অভিযানে ৩৮টি মোবাইল কোর্ট ও ১৭টি সাধারণ অভিযানে চালিয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ৫৪৯ জনকে বিভিন্ন দন্ডে কারাদণ্ড প্রদান করেন। এ সময় ৮২ জেলেকে ৩ লাখ ৩৬ হাজার টাকা জরিমানা, অবৈধ ৪৪.৩০৩ লাখ মিটার কারেন্ট জাল আটক করে পুঁড়িয়ে বিনষ্ট করেন। সে সাথে ৮.৮১৫ মেট্রিক টন মা ইলিশ জব্দ করে উপজেলার বিভিন্ন এতিমখানা, মাদ্রাসাসহ অসহায় গরীবদের মাঝে বিলিয়ে দেওয়া হয়েছে। সে সাথে জেলেদের মাছ ধরার প্রায় দুই শতাধিক ট্রলার পদ্মায় তলা ফুটা করে ডুবিয়ে দিয়েছে। এখন জেলেদের অভিযোগ পদ্মায় পাঙাশের জাল ফেললেই সে ট্রলারে তাদের জাল বেধে ছিঁড়ে যাচ্ছে। আর এতে অসহায় জেলেরা বিপাকে পড়ছেন। পদ্মায় পাঙাশ থাকলেও ধরতে পারছেন না তারা। এভাবে পদ্মায় ট্রলারগুলো তলা ফুটো করে বিনষ্ট করার তীব্র নিন্দ্র জানিয়ে জেলেরা বলেন। কিছু অসাধু জেলে ও মৌসুমে জেলেরা মা ইলিশ অভিযানে ইলিশ শিকারে বেড়িয়ে পড়ে। তাদের সে ট্রলারগুলো পদ্মায় তলা ফুটো করে বিনষ্ট করার প্রয়োজনবোধ ছিলো না। এ ট্রলারগুলো আটক করে রাখতে পারতো। এতে পদ্মার পানি দূষণও হতো না আর আমরাও ভালোভাবে মাছ শিকার করতে পারতায়।

পাঙাশ শিকার করা সিংহেরহাটি গ্রামের পদ্মাপাড়ের জেলে জয়নাল দেওয়ান, সালাম মাদবর, ইব্রাহিম ও ইসলাম শেখের মতো অনেকের মন অনেক ভালো। কারণ, এদের কেউ কেউ গত এক সপ্তাহে ১৫-৩০টি পর্যন্ত পাঙাশ শিকার করেছেন। কামিয়েছেন বেশ নগদ অর্থ। এ বছর মা ইলিশ রক্ষা অভিযান কড়াকড়ি হওয়ায় উপজেলার জেলেরা নদীতে মা ইলিশ শিকারে নামতে পারেননি। ফলে এ সময় নদীতে নেমে পাঙাশ শিকার করতে পেরে জেলেরা কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নিচ্ছেন।

গতকাল বুধবার সকালে পদ্মাপাড় থেকে ১১ হাজার ২০০ টাকায় সাড়ে ১৬ কেজি ওজনের একটি তাজা পাঙাশ কিনে আনেন কনকসার গ্রামের যুবক ওয়াসিম। তিনি এমন শতভাগ ফরমালিনমুক্ত ও তাজা পাঙাশ কিনতে পেরে বেজায় খুশি। পদ্মাপাড়ের জেলে আবদুর রহিম জানান, সামনের জোয়ারের মৌসুম থেকে জৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত জেলেরা এরকম পাঙাশ পেতে থাকবে।

লৌহজং উপজেলার কনকসার বাজারের মাছ ব্যবসায়ী রবীন্দ্র মালো বড়ো আকারের মাছ কাটায় বেশ পারদর্শী। এ বাজার কিংবা পাশের এলাকায় কেউ বড়ো মাছ কিনে আনলেই তাঁর ডাক পড়ে। তিনি দু’দিনেই অন্তত ৫০টি পাঙাশ কেটে দিয়েছেন বলে জানান। আকার ভেদে একেকটি মাছ কাটতে তিনি ২০০-৪০০ টাকা পর্যন্ত নিয়ে প্রায় ১৫ হাজার টাকা কামিয়েছেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads