• বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জৈষ্ঠ ১৪২৯
আলমারি তালায় ৫ হাজার চাবি

প্রতীকী ছবি

জাতীয়

আলমারি তালায় ৫ হাজার চাবি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১

দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের মূল ভবনে ঢুকতেই চোখ চলে যায় ডান দিকের বিশালাকৃতির এক তালার দিকে। তালাটি আসলে একটি আলমারি। এর ভেতরে আছে হাজার পাঁচেক চাবি। সেগুলো যেনতেন চাবি নয়, দেশের প্রধান বিচারপতি থেকে শুরু করে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতি এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই সেগুলো ব্যবহার করেন। সংশ্লিষ্টদের ধারণা, এটিই সম্ভবত দেশের সবচেয়ে বড় ‘তালা’।

১০ ফুট উঁচু ও পাঁচ ফুট চওড়া এই ‘তালা’র ওজন প্রায় ১০০ কেজি। এটি থাকে সার্বক্ষণিক নজরদারির আওতায়। তালা আকৃতির এ আলমারিটি তৈরি করা হয়েছিল ২০১৬ সালে। শুরুর দিকে চাবির সংখ্যা কম থাকলেও বাড়তে বাড়তে এখন সেই সংখ্যা পাঁচ হাজারে গিয়ে ঠেকেছে। ভবিষ্যতে তা আরো বাড়তে পারে। হাজার পাঁচেক চাবি! কে কোনটা ব্যবহার করেন, কোন তালার চাবি কোথায় রাখা হবে, এসব দক্ষ হাতে ব্যবস্থাপনা করেন দায়িত্বরতরা। রাতের বেলায়ও থাকে পাহারা।

বিশাল এই আলমারির সুনির্দিষ্ট তাকে রাখা চাবিগুলো রাতের বিশ্রাম শেষে প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৬টা থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যবহারকারীর হাতে উঠতে শুরু করে। দুপুর ১টা পর্যন্ত যে যার প্রয়োজনমতো চাবি নেন এখান থেকে। পাখিদের নীড়ে ফেরার মতো সুপ্রিম কোর্টের চাবিগুলো আলমারিতে ফিরতে শুরু করে বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে। ফেরৎ নেওয়ার এই প্রক্রিয়া চলে রাত ১০টা পর্যন্ত। দৈত্যাকৃতির এ তালার প্রহরীরা জানান, দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আপিল বিভাগ থেকে শুরু করে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিদের রুম, বেঞ্চ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা, কোর্টের বিভিন্ন শাখা এবং সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর রুমের চাবি এর ভেতরে রাখা হয়। আদালতপাড়ার মহাব্যস্ততার দিনে চাবিগুলোর ‘তালা’য় ফিরতে অনেক রাত হয়ে যায়। সেখানে দায়িত্বরত নিরাপত্তারক্ষী মো. রাসেল বলেন, ‘প্রতিটি রুমের লোকজন (কর্মচারী) এসে এখান থেকে চাবি নিয়ে যান। কাজকর্ম শেষে আবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত চাবি জমা নেওয়া হয়।’

ভোর সাড়ে ৬টার দিকে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা প্রথমে এসে চাবি নেন। এরপর ধীরে ধীরে বিভিন্ন বিভাগের কর্মচারীরা তাদের চাবি নেন। কাজ শেষে তারাই ফেরৎ দিয়ে যান। রাসেল বলেন, ‘আমাদের কাজ হলো যথাযথ স্থানে সেগুলোকে সংরক্ষণ করে রাখা।’

চাবির সংখ্যার বিষয়ে জানতে চাইলে রাসেল বলেন, ‘এখন আপিল বিভাগের পুরোনো কোর্ট ছাড়া অতিরিক্ত (অ্যানেক্স) বিল্ডিংয়ে অনেকগুলো রুম বাড়ানো হয়েছে। ফলে তালা-চাবির সংখ্যাও বেড়েছে।’

এদিকে সুপ্রিম কোর্টে বিশাল এক বহুতল ভবনের নির্মাণকাজ চলছে। চাবির সংখ্যা আরো বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।

রাসেল বলেন, ‘আমি এবং এবিএম শাহীন রেজা, এই দুজন দিনে দায়িত্ব পালন করি। রাত ১০টা থেকে সকাল পর্যন্ত শিডিউল অনুযায়ী একজন প্রহরী থাকেন শুধু এই তালার আকৃতির আলমারিটির পাহারায়।’

রাসেল এবং শাহীন রেজা ছাড়াও এটির দেখভাল ও পাহারার দায়িত্বে আছেন আরশাদুল আলম বুলবুল আর দিলীপ কুমার দাস। ফরহাদ হোসেন নামে আরেক নিরাপত্তাকর্মী থাকেন মূল প্রবেশদ্বারে। আদালতের কার্যক্রম শুরুর আগে এই দরজাটি দিয়ে ঢোকার সময় মেটাল ও আর্চওয়ে ডিটেক্টর দিয়ে পরীক্ষা করে কর্মচারীদের ভেতরে ঢুকতে দেন পুলিশ সদস্যরা।

ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবনের নিচতলা সংলগ্ন বিশাল আকৃতির ধাতব তালাটি যক্ষের ধনের মতো আগলে রাখেন নিরাপত্তাকর্মীরা। আমরা এই বিশাল তালার মধ্যে সারিবদ্ধভাবে চাবিগুলো সাজিয়ে রাখি। সবসময় মাথা ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করি, যেন নির্দিষ্ট কক্ষের চাবি ঠিকভাবে দেওয়া হয়।’

সারাদিন পাহারা আর চাবি দেওয়া-নেওয়ার কাজের অনুভূতি জানিয়ে রাসেল, ফরহাদসহ অন্যরা জানান, এ কাজে খারাপ লাগে না। গল্পসল্প এবং চাবি দেওয়া-নেওয়া করতে করতে ভালোই কেটে যায় সময়।

তারা মনে করেন, এতোগুলো চাবির একটা দায়িত্বভার সবসময় মাথায় থাকেই। কারণ প্রতিটি চাবিই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই সতর্কতার কোনো বিকল্প নেই।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads