• রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

খাদ্যে ভেজাল ও দূষণ রোধে ৮৮ কোটির প্রকল্প আসছে

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১

খাদ্যে ভেজাল ও দূষণ রোধে নানাবিধ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে শক্তিশালী করা হচ্ছে। এজন্য ‘বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। তা বাস্তবায়িত হলে খাদ্যে ও খাদ্যোপকরণ তাৎক্ষণিক বিশ্লেষণের জন্য বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্যের প্রধান কার্যালয়ে মিনি ল্যাবরেটরি ও কেমিক্যাল স্টোর স্থাপন করা হবে। জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ খাদ্য সম্পর্কে জনসাধারণের অভিযোগ, আপত্তি, মতামত, পরামর্শ ও করণীয় সম্পর্কে অবহিত করার জন্য ৯৯৯ এর আদলে হটলাইন নম্বর চালু হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৮ কোটি টাকা।

পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, ইতোমধ্যেই প্রকল্পটির প্রক্রিয়াকরণ শেষ হয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর গত বছরের ১৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো প্রতিপালন করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করা হয়। এখন সেটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী সভায় উপস্থাপনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে শুরু হয়ে ২০২৪ সালের জুনের  মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য জাকির হোসেন আকন্দ বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ খাদ্য ও খাদ্যোপকরণ নমুনা বিশ্লেষণে দক্ষতা, মোবাইল মিনি ল্যাবরেটরি ও কেমিক্যাল স্টোর স্থাপনের মাধ্যমে ধারণ ক্ষমতা ও দক্ষতা বাড়বে। এতে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি কম হবে।’

প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে- ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে সার্ভিল্যান্স কার্যক্রম প্রতিষ্ঠা, মোবাইল ল্যাবরেটরি চালুর মাধ্যমে অনস্পট খাদ্য পরীক্ষা সুবিধা নিশ্চিত করা, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের জন্য ডাটাবেজ প্রস্তুতকরণ, জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ খাদ্য সম্পর্কে জনসাধারণের অভিযোগ, আপত্তি, মতামত, পরামর্শ ও করণীয় সম্পর্কে অবহিত করার জন্য অনলাইন কল সেন্টার চালু, নিরাপদ খাদ্য সম্পর্কিত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং অংশীজনদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম এবং নিরাপদ খাদ্য বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কর্মশালা আয়োজন, র্যালিসহ অন্যান্য সচেতনতামূলক কার্যক্রম হাতে নেওয়া।

সূত্র জানায়, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন সূচকে লাল-সবুজের বাংলাদেশ উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় অদম্য। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিল একটি সুখী, সমৃদ্ধ, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়া। ১৯৫৯ সালে পিওর ফুড অর্ডিনেন্স ১৯৫৯ প্রবর্তনের পর দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে বাংলাদেশের জনগণের জীবন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভেজাল ও দূষণমুক্ত নিরাপদ খাদ্য প্রাপ্তির সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিতকরণে প্রধানমন্ত্রীর যুগোপযোগী, বিচক্ষণ ও দূরদর্শী সিদ্ধান্তে যুগান্তকারী নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ জাতীয় সংসদে পাস হয় এবং একটি কার্যকর প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে এ আইন প্রবর্তন করা হয়। ২০১৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর এ আইনের অধীনে সরকার ওই বছরের ২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করে।

বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ গঠিত হওয়ার পর প্রেষণে নিয়োজিত স্বল্প সংখ্যক জনবল নিয়ে এর যাত্রা শুরু করে এবং বিধি প্রবিধানমালা প্রণয়ন, প্রশিক্ষণ ও জনসচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডের মধ্যে মূলত এর কার্যক্রম সীমিত থাকে। বর্তমানে তিন শতাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়ে কর্তৃপক্ষের কার্যাবলি ৬৪ জেলার মাঠ পর্যায়ে সমপ্রসারণ করা হয়েছে। খাদ্যের ভেজাল ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ, খাদ্য স্থাপনা, উৎপাদন প্রক্রিয়াকরণ পর্যায়ে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিপণন তদারকির জন্য নতুনভাবে নিয়োগ দেওয়া কর্মচারীদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ জরুরি। এছাড়াও প্রতিষ্ঠার দীর্ঘদিন পর্যন্ত কোনো উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া সম্ভব না হওয়ায় কর্তৃপক্ষের ইন্সপেকশন মনিটরিং কার্যক্রম, খাদ্যদ্রব্যের ভেজাল শনাক্তকরণের জন্য টেস্টিং ফ্যাসিলিটি তথা ল্যাবরেটরি, ভ্রাম্যমাণ ল্যাবরেটরি স্থাপন এবং খাদ্য ব্যবসায়ী ও খাদ্য স্থাপনায় বিভিন্ন কার্যক্রম তদারকির জন্য ডাটাবেজ না থাকায় খাদ্যের নিরাপদ মান উন্নয়নে কার্যক্রম ও অগ্রগতি কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। খাদ্য প্রস্তুতকারক ও ব্যবসায়ীদের থেকে নিরাপদ খাদ্য বিষয়ে প্রশিক্ষণের চাহিদা থাকলেও প্রয়োজনীয় সম্পদ ও জনবলের অভাবে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।

প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে দক্ষ জনবল, প্রয়োজনীয় তথ্য সম্বলিত ডাটাবেজ, খাদ্য বিষয়ে হটলাইন নম্বর ও অ্যাপনির্ভর অভিযোগ ও মতামত নেওয়ার ব্যবস্থা, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও কিটস সমৃদ্ধ মোবাইল ল্যাবরেটরি ইত্যাদি সুবিধা সৃষ্টির মাধ্যমে উন্নত ও কার্যকর মনিটরিং তথা নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads