• মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

‘টাকা না দিলে জেল’

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১

বহুল আলোচিত পিপলস লিজিংয়ের ঋণখেলাপিদের উদ্দেশে হাইকোর্ট বলেছেন, আপনারা টাকা তুলে নিয়ে চলে গেছেন। আমানতকারীরা খেয়ে না খেয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন। পাওনাদারদের টাকা পরিশোধ করুন, না হলে ভেতরে (জেলে) ঢোকানো হবে। পিপলস লিজিংয়ে জমানো টাকা জনগণের টাকা, চোর-বাটপাড়দের টাকা না।

গতকাল বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের কোম্পানি বেঞ্চের বিচারক মোহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের একক বেঞ্চ ঋণখেলাপি ও তাদের আইনজীবীদের উদ্দেশে ক্ষোভ প্রকাশ করে এসব কথা বলেন। এদিন আদালতে মামলার শুনানিতে অংশগ্রহণ করেন ড. সাঈদা নাসরিন। তিনি আদালতকে জানান, তার মক্কেলের কাছে ৩৮৪ কোটি টাকা পাওনা পিপলস লিজিংয়ের। এ সময় আদালত বলেন, আগে টাকা দেবেন, তারপর ইনস্টলমেন্টের আবেদন করবেন। না হলে কারাগারে ঢোকাব। এটা জনগণের জমানো টাকা। আদালত আরো বলেন, আমরা দেখছি হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে এ কোম্পানিকে বাঁচিয়ে রেখে টাকা উদ্ধার করা যায় কি না। আমরা চেষ্টা করছি ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে টাকা উদ্ধারের।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস থেকে ৫ লাখ টাকা এবং তার বেশি ঋণ নিয়ে খেলাপি হওয়া ১৩৭ জনের সশরীরে আদালতে হাজিরা ছিল গতকাল। এ মামলায় হাজিরার এটি ছিল দ্বিতীয় দিন। অবসায়ন প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকা পিপলস লিজিংয়ের সাময়িক অবসায়ক (প্রবেশনাল লিকুইডেটর) মো. আসাদুজ্জামান খানের দেওয়া এ সংক্রান্ত তালিকা দেখে আদালত গত ২১ জানুয়ারি মোট ২৮০ জনকে তলব করেছিলেন। তাদের মধ্যে আদালত দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে হাইকোর্টে উপস্থিত হতে বলেন।

তারই আলোকে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি নির্ধারিত দিনে আদালতে ১৪৩ জনের হাজিরা ছিল। গতকাল হাজিরা ছিল বাকিদের।

২০১৯ সালের ১৪ জুলাই পিপলস লিজিং অবসায়নের জন্য আদালতে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই দিনই মামলার শুনানি শেষে প্রতিষ্ঠানটি অবসায়নে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন আদালত। এ ছাড়া অবসায়ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক পদমর্যাদার একজনকে অবসায়ক নিয়োগ দিতে বলা হয়।

পরে সাময়িক অবসায়ক (প্রবেশনাল লিকুইডেটর) হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক আসাদুজ্জামান খানকে নিয়োগ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপর আদালত পিপলস লিজিংয়ের ঋণগ্রহীতাদের একটা তালিকা চায় সাময়িক অবাসায়ক (প্রবেশনাল লিকুইডেটর) মো. আসাদুজ্জামান খানের কাছে।

আদালতে আইনজীবী মেজবাহুর রহমান বলেন, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী গত বছর ২০২০ সালের ২৩ নভেম্বর প্রায় পাঁচশ জন ঋণ গ্রহীতার একটি তালিকা দাখিল করা হয়। সে তালিকা দেখার পর আদালত সিদ্ধান্ত নেন। যারা পাঁচ লাখ বা তার বেশি ঋণ নিয়ে খেলাপি হয়েছেন তাদের তিনি কারণ দর্শাতে নোটিশ করেন এবং তাদের সবাইকে ব্যক্তিগতভাবে হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছেন।

অবাসায়ক মো. আসাদুজ্জামান খানের দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ২৮০ জন ঋণখেলাপি লিজ ফাইন্যান্স (পাঁচ বছর মেয়াদি ঋণ), লিজ ফাইন্যান্স (পাঁচ বছরের বেশি মেয়াদের ঋণ), টার্ম লোন (পাঁচ বছর মেয়াদি ঋণ), টার্ম লোন (পাঁচ বছরের বেশি মেয়াদের ঋণ), হোম লোন (পাঁচ বছরের বেশি মেয়াদের ঋণ) ও মার্জিন লোনসহ মোট ৬ ধরনের ঋণ নিয়েছেন।

তার মধ্যে লিজ ফাইন্যান্স (পাঁচ বছর মেয়াদি ঋণ)-এ খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২৪ কোটি ১৫ লাখ ৮ হাজার ৪৭১টাকা), লিজ ফাইন্যান্স (পাঁচ বছরের বেশি মেয়াদের ঋণ)-এ খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬৭ কোটি ৮১ লাখ ৯৬ হাজার ২৮৮ টাকা।

টার্ম লোনের (পাঁচ বছর মেয়াদি ঋণ) খেলাপি ৮৭৭ কোটি ৩৭ লাখ ৬৬ হাজার ৩৭১ টাকা, টার্ম লোনের (পাঁচ বছরের বেশি মেয়াদের ঋণ) খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১৩ কোটি ৩০ লাখ ৫ হাজার ৭৭৬ টাকা।

হোম লোনের (পাঁচ বছরের বেশি মেয়াদের ঋণ) খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২৭ কোটি ৯৬ লাখ ২৮ হাজার ১৪৩ টাকা। আর মার্জিন লোনে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬৪৪ কোটি ৮৭ লাখ ৫৮ হাজার ১৩ টাকা। মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৬৫৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads