• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯
ইশতেহার পাঠ হয় এই দিনে

প্রতীকী ছবি

জাতীয়

ইশতেহার পাঠ হয় এই দিনে

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৩ মার্চ ২০২১

ঐতিহাসিক ৩ মার্চ স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে তৎকালীন পল্টন ময়দানে স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র-সংগ্রাম পরিষদের ডাকা ছাত্র জনসভায় আকস্মিকভাবে উপস্থিত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এ সভায় বঙ্গবন্ধু অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। সেদিনই সভা থেকে স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র-সংগ্রাম পরিষদের চার নেতা নূরে আলম সিদ্দিকী, শাজাহান সিরাজ, আ স ম আবদুর রব ও আবদুল কুদ্দুস মাখন স্বাধীনতা ও মুক্তিসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার শপথ গ্রহণ করেন।

ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শাজাহান সিরাজ স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেন।

ইশতেহারে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের সর্বাধিনায়ক হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম ঘোষণা করা হয়। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটিকে জাতীয় সঙ্গীত নির্বাচিত করা হয়।

এদিনের জনসভায় বঙ্গবন্ধু অহিংস-অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়ে তার বক্তব্যে অবিলম্বে সামরিক আইন প্রত্যাহার, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর এবং সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি জানান। এ দিনই বাংলার মাটি শহীদের রক্তে রঞ্জিত হয়। চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর গুলিতে ৭১ জন নিহত হয়। সারা দেশ অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে।

ইশতেহারের মূল বিষয় : বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হলো, সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্যদিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান; বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হবেন স্বাধীন বাংলাদেশের মহান নেতা; গাঢ় সবুজের জমিনের ওপর লাল সূর্য এবং লাল সূর্যের ওপর বাংলাদেশের সোনালি মানচিত্র সংবলিত জাতীয় পতাকা; জাতীয় সঙ্গীত হবে ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’; গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ও সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি; বাংলাদেশেদের মানচিত্র অনুযায়ী ৫৬,০০০ বর্গমাইলে এ দেশকে শত্রুমুক্ত করতে হবে; সশস্ত্রবাহিনীর সব বাঙালি সেনাদের, ইপিআর পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনীকে জনগণের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে হবে; শ্রমিক-কৃষক, ছাত্র-শিক্ষক, কবি-সাহিত্যিক, গায়ক-গায়িকা, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী ও সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সমন্বয়ে সংগ্রাম কমিটি করাসহ একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি; এই ইশতেহারের মধ্যদিয়ে কেবল স্বাধীনতা সংগ্রামের কর্মসূচি ঘোষণা হয়নি বরং প্রতিটি বিষয়ে পল্টন ময়দানে উপস্থিত লাখ লাখ জনতা হাত তুলে সমর্থন অনুমোদন দেন।

এই দিন ভোররাতে কারফিউ জারির সাইরেনে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছিল পুরো ঢাকা শহর। কারফিউ অমান্য করে মুক্তিকামী মানুষেরা রাস্তায় নেমে এসেছিলেন। নবাবপুর, টয়েনবী সার্কুলার রোড, ভজহরি সাহা স্ট্রিট, গ্রীন রোড, স্টেডিয়াম, কাঁঠালবাগান, কলাবাগান, নিউ মার্কেট, ও ফার্মগেটসহ-ঢাকার প্রায় সবগুলো এলাকাতেই কারফিউ ভঙ্গকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ করা হয়েছিল। মৃত্যু হয়েছিল অনেকের। আহতদের ভর্তি করা হয় মেডিকেলে।

দীর্ঘদিন শোষণে পিষ্ট বাঙালির সামনে তখন স্বজনের লাশ। মৃত্যু হাতের মুঠোয় নিয়ে মিছিল-মিটিংয়ে যুক্ত হতে থাকে অগণিত মানুষ। ২ মার্চ দিবাগত রাতে গুলিতে নিহত আটজনের লাশ নিয়ে বিক্ষুব্ধ জনতা মিছিল বের করে। মিছিল চলে ঢাকার বিভিন্ন রাস্তায়। মিছিল শেষে শহীদ মিনারে লাশ রাখা হয়। লাশ সামনে রেখে পূর্ব-বাংলার স্বাধিকার আদায়ের শপথ গ্রহণ করেন বিক্ষুব্ধ জনতা।

বিকেলে পল্টন ময়দানের জনসভাতেও লাশগুলো নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পল্টন রূপ নেয় জনসমুদ্রে। সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় শেখ মুজিবুর রহমান সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads